ধর্ম পরিচয় গোপন করে প্রেম, অতপর জোরপূর্বক ধর্ষণ করল তরুণীকে

ক্রাইম নিউজ ধর্ম নারী ধর্ষণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পুরুষ প্রচ্ছদ মনোকথা হ্যালোআড্ডা

বগুড়া প্রতিনিধি: মিথুন সরকার। পুলিশের এসআই। বগুড়ার শেরপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে নেয়া হয়েছে। ধর্ম পরিচয় গোপন করে এক মুসলিম তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। বিয়ের আশ্বাসে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন প্রেমিকাকে। পরে প্রেমিকা জানতে পারেন মিথুন হিন্দু ধর্মের। তারপর প্রতারণা করে ধর্ষণ করার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেন প্রেমিকা। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পুলিশের এমন প্রতারণার খবর। আলোচনা-সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো জেলা।

মামলা সূত্রে জানা যায়, পারিবারিক একটি সমস্যা সমাধানের জন্য অনার্স পড়ুয়া ওই তরুণী পুলিশের শরণাপন্ন হয়। তারপর কৌশলে অফিসিয়াল ডকুমেন্ট থেকে সেই তরুণীর ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন এসআই মিথুন সরকার। ইমো এবং টেলিগ্রামে সময়ে অসময়ে যোগাযোগ করেন। উপযাচক হয়ে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। এরপর নানাভাবে তরুণীটিকে পটানোর চেষ্টা করেন মিথুন। একপর্যায়ে পুলিশের প্রেমে ঘায়েল হন তরুণী। এরপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন তাকে। সম্ভ্রমহানির পর তরুণী জানতে পারেন তিনি হিন্দু ধর্মের। তারপরও বিয়েতে রাজি হন তরুণী। কিন্তু প্রতারক প্রেমিক শুরু করেন তালবাহানা। এ ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী তরুণী।

গত বৃহস্পতিবার বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ (জেলা ও দায়রা জজ) এর আদালতে নির্যাতিত ছাত্রী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির অভিযোগ তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে ১৬ই অক্টোবরের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত উপ-পরিদর্শক নাম মিথুন সরকার (২৮) ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর সদর উপজেলার বয়ড়া পালপাড়া গ্রামের সুনীল সরকারের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের ৩৮তম ব্যাচের এসআই হিসেবে বগুড়ার শেরপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ইতিমধ্যেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বগুড়ার পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তরুণীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে ওই তরুণী পরিবারের অসম্মতিতে এক তরুণকে বিয়ে করেন। কিন্তু ছেলের পরিবার ওই বিয়ে মেনে নেয়নি। মাত্র তিনমাসের মাথায় তিনি তালাকপ্রাপ্ত হন।

বগুড়ার পুলিশ সুপারের মাধ্যমে বিচ্ছেদ পরবর্তী একটি পারিবারিক সমস্যা সমাধানের সময় চলতি বছরের মে মাসে পুলিশের এসআই মিথুন সরকার ছাত্রীর মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে ইমো এবং টেলিগ্রামে যোগাযোগ করেন। এ সময় ওই ছাত্রী পূর্ণাঙ্গ পরিচয় জানতে চাইলে অভিযুক্ত এসআই মিথুন পারিবারিক তথ্য, ধর্ম ও স্থায়ী ঠিকানা গোপন করে বলেন, তার বাড়ি ময়মনসিংহ শহরে এবং পুলিশের ৩৮তম ব্যাচের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে শেরপুর থানায় কর্মরত। নিজেকে অবিবাহিত এবং কৌশলে ধর্মীয় পরিচয় গোপন করেন এসআই মিথুন। একপর্যায়ে তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। প্রেমও হয়ে যায়। গত ৩রা জুন তরুণীর জন্মদিন ছিল। বিশেষ দিনে কেক কেটে অভিবাদন জানানোর কথা বলে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন। তারপর স্থানীয় শৈলী রেস্টুরেন্টে বসে দীর্ঘক্ষণ গল্পগুজব করেন। বিকালের দিকে পূর্বপরিচিত একজনের বাসায় দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে রেস্টুরেন্ট থেকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে বিকাল আনুমানিক ৫টার দিকে শেরপুর উপজেলার শাহ্ বন্দেগী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের গ্রীনটাউন, টোলার গেট (খন্দকার টোলা) এলাকার আবু সাঈদ মাস্টারের চারতলা ফ্ল্যাট বাসায় যান। ওই বাসার নিচতলায় একটি ইউনিটে মিথুনের পরিচিত একজন ভাড়াটিয়ার বাসায় বিয়ের প্রলোভন দিয়ে আপত্তি সত্ত্বেও ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ করেন। তরুণী বাড়িতে ফিরে পরিবারের লোকজনের কাছে ঘটনা খুলে বলে। কিন্তু পরিবারের লোকজন লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি চেপে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঈদের পর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় ২৭শে জুন এসআই মিথুনের সঙ্গে দেখা করতে শেরপুর থানায় যান। এ সময় থানার ডিউটি অফিসারের মাধ্যমে জানতে পারেন এসআই মিথুন সরকার হিন্দু ধর্মের অনুসারী।

বিষয়টি জানার পর তরুণী এসআই মিথুনের কাছে ধর্মীয় পরিচয় গোপন করার কারণ জানতে চান। এ সময় পুলিশের এসআই মিথুন মেয়েটিকে জানান, ধর্মীয় পরিচয় দিলে তো প্রেম হতো না। ধর্মীয় পরিচয় ফাঁস হওয়ার পর ওই তরুণী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং একপর্যায়ে তাকেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু অভিযুক্ত এসআই মিথুন বিয়ে করতে তালবাহানা শুরু করেন। এ সময় ওই তরুণী পুুলিশের উপ-পরিদর্শক মিথুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গেলে মামলা গ্রহণ না করে শেরপুর থানার ওসি বাবু কুমার সাহা আপস মীমাংসার মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তির প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব প্রত্যাখান করে তরুণী গত বৃহস্পতিবার আদালতে মামলা করেন।

এদিকে মামলার পর মিথুন সরকার গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে নানা ধরনের হুমকি প্রদান করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী তরুণী আরও বলেন, বর্তমানে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত পুলিশের উপ-পরিদর্শক মিথুন সরকার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমি এখন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। এ বিষয়ে কথা বলতে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তাদের কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

আরো পড়ুন : ইতিহাস গড়লো স্পেনের মেয়েরা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *