শাহ্ আলম শাহী,দিনাজপুর থেকেঃ বিস্ফোরক (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) সংকটে পড়ে চতুর্থ বারের মতো বন্ধ হয়ে গেছে, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে পাথর উৎপাদন বন্ধ। এতে প্রতিদিন সরকারের লোকসান হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে।
খনির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মাানীয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) শনিবার থেকে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। তবে, খনি কর্তৃপক্ষ (এমজিএমসিএল) জানিয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারনে পরিবহন সংকট সৃষ্টি হওয়ায় বিষ্ফোরক আমদানীতে বিলম্ব হচ্ছে।
চুক্তি অনুযায়ী খনির উন্নয়ন, উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চাহিদামত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও বিষ্ফোরক সরবরাহ করার কথা গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড কর্তৃপক্ষের। কিন্তু খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (জিটিসি) কে চুক্তির আওতায় নির্দিষ্ট সময়ে প্রয়োজনীয় বিষ্ফোরক সরবরাহ করতে না পারায় খনির উন্নয়ন ও পাথর উৎপাদন কাজে বতর্মান সংটের সৃষ্টি হয়েছে।
খনি সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানায়, পাথর উত্তোলন কাজের জন্য অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। চুক্তি অনুযায়ী খনি কর্তৃপক্ষ সময়মত জিটিসিকে চাহিদা মাফিক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরবরাহ করবে। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে খনি কর্তৃপক্ষ (এমজিএমসিএল) জিটিসিকে চুক্তি মোতাবেক সময়মত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরবরাহ করতে পারেনি। খনির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের তাগাদা সত্বেও গত ২১ অক্টোবর থেকে যথাযত সহযোগিতার অভাবে বর্তমান এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রটি মতে,খনি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও কর্মদক্ষতার অভাবে সময়মত বিস্ফোরক সরবরাহ না করায় দৈনিক গড়ে সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রতিদিন সরকারের লোকসান হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা। এছাড়াও সরকারী উন্নয়ন কাজে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ পাথর সংকটে পড়ে চলমান নির্মাণ কাজ ব্যাহত হবে বলে শংকা সংশ্লিষ্ট সুত্রের। অন্যদিকে, পাথর আমদানী করে সংকট মোকাবেলা করতে গেলেও সরকারের বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হবে। কবে নাগাদ আমাদানীকৃত এই বিস্ফোরক দেশে এসে পৌঁছাবে এর সঠিক কোন দিনক্ষনও বলতে পারছেন না খনি কর্তৃপক্ষ।
খনি উন্নয়ন এবং উৎপাদন কাজ দির্ঘদিন বন্ধ থাকলে উৎপাদন কাজে মেশিনারিজ এবং যন্ত্রাংশ অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকার কারনে নষ্ট হওয়ার আশংকা করছেন খনি বিশেষজ্ঞরা।
এর আগে খনির বর্তমান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি মধ্যপাড়া পাথর খনির দায়িত্বভার গ্রহনের প্রথম মেয়াদে খনি উন্নয়ন এবং পাথর উত্তোলন কাজের জন্য চাহিদা মাফিক প্রয়োজনীয় বিদেশী মেশিনারিজ এবং যন্ত্রাংশ খনি কর্তৃপক্ষ যথা সময়ে আমদানী করে তাদেরকে সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় চুক্তির ৬ বছর মেয়াদকালে খনির উৎপাদন ও উন্নয়ন কাজ প্রায় ৩ বছর বন্ধ থাকে। ফলে, পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হয়। খনির রক্ষণাবেক্ষণ সচল রাখতে জিটিসিকেও কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। চুক্তি অনুযায়ী এই সকল বিদেশী মেশিনারিজ এবং যন্ত্রাংশ খনি কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করার কথা।
এ ব্যাপারে মধ্যপাড়া পাথর খনির মহাব্যবস্থাপক (ইউজিওএন্ডএম) মোঃ আবু তালেব ফরাজী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এই প্রতিবেদক শাহ্ আলম শাহী’কে জানান,কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে এসব বিষ্ফোরক আমদানী করা হয়। তবে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারনে পরিবহন সংকট সৃষ্টি হওয়ায় বিষ্ফোরক আমদানীতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে, এ মাসের শেষ সপ্তাহ নাগাদ থাইল্যান্ড থেকে বিষ্ফোরকের একটি চালান বাংলাদেশে পৌছাবে বলে আশা করা যায়।
প্রসঙ্গতঃ ২০০৭ সালে মধ্যপাড়া পাথর খনিতে পাথর উত্থোলন শুরু হয়। বিস্ফোরকের অভাবে প্রথম ২০১৪ সালে ২২ দিন, ২০১৫ সালে দুই মাস, ২০১৮ সালের জুন মাসে ৭ দিন খনিতে বন্ধ ছিলো পাথর উওত্তালন।
শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর