২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে ফেরা সাভারের মাহবুবা পারভীন। ১৭ শ’ স্প্লিন্টার শরীরে নিয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করছেন তিনি। বলেন, আমার নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে প্রতি মাসে চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার করে টাকা দেন। আমি কোনোমতে সেই টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে খাই। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আমার শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য না থাকায় আমি বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারছি না। আজ ১৯ বছর ধরে আমি শরীরে স্পিøন্টারের যন্ত্রণা সহ্য করে চলেছি। আমি কিছুই করতে পারিনি। এখন আমার আর কিছু করার নেই। আমার চিকিৎসার স্বার্থে হলেও একটি গাড়ির প্রয়োজন।
আমাকে কলকাতা পিয়ারলেস হাসপাতাল থেকে ব্যাংকক গিয়ে ব্রেনের চিকিৎসা করাতে বলেছেন। সেখানে ছাড়া এই চিকিৎসা নাকি ভালো হয় না। অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসার বিষয়টি আমি কখনো প্রধানমন্ত্রীকে জানাইনি। সাভারে এত নেতাকর্মী কোটিপতি হলেও আমার চিকিৎসা ও যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা কেউ করেনি। আমাকে চিকিৎসা নিতে হয় ঢাকায় গিয়ে, আমার কর্মস্থলও ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে। একটি গাড়ি হলে আমি চিকিৎসাও করাতে পারবো এবং ঢাকায় গিয়ে অফিস করতে পারবো। তাই আমার একটা গাড়ির প্রয়োজন। এ ছাড়া বিভিন্ন দিবস সহ দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য আমার মন হাহাকার করে। কিন্তু যাতায়াতের মাধ্যম না থাকায় আমি ঘরেই পড়ে থাকি।
প্রসঙ্গত, ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে দলের নেতাকর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন। শেখ হাসিনাসহ দলের কয়েকশ’ নেতাকর্মী আহত হন। হামলার পর আইভি রহমানের পাশে যে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন সেই হলো সাভারের মাহবুবা পারভীন। সেদিনের ভয়াবহতার কথা স্মৃতিচারণ করেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মাহবুবা পারভীন। একপর্যায়ে তিনি বলতে থাকেন সেদিন গ্রেনেড হামলার পর আইভি রহমানের পাশেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলাম। বেঁচে আছি, নাকি মরে গেছি কেউ বুঝতে পারেনি। আমাকে মৃত মনে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের লাশ ঘরে নিয়ে ফেলে রাখা হয়। টানা ছয় ঘণ্টা লাশ ঘরে পড়ে থাকার পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আশিষ কুমার মজুমদার লাশ শনাক্ত করতে গিয়ে আমাকে জীবিত দেখতে পান। চিকিৎসার জন্য তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ভারত পাঠান। সেখানে চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলেও এখনো শরীরে ১৭শ’ স্পিøন্টার বহন করে চলেছি। মাহবুবা বলেন, ২১শে আগস্ট এলেই সেদিনের ভয়াবহতার স্মৃতি মনে পড়ে।
আরো পড়ুন: ডেঙ্গুতে রেকর্ড, ৯ জনসহ চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৪৮৫, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০২১৯১জন