স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লায় বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বেলা দু’টার দিকে লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের গৈয়ারভাঙা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় দুইজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সন্ধ্যায় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা জানান, শনিবার বেলা তিনটায় লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন বিএনপি’র উদ্যোগে ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলামের বাড়িতে কর্মিসভার আয়োজন করা হয়। এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। বেলা দুইটার দিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়াত উল্লাহর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা গৈয়ারভাঙা বাজারে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।
বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, গৈয়ারভাঙা বাজারে মিছিল করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উন্দানিয়া গ্রামে গিয়ে বিএনপি’র সভাস্থলের মঞ্চ, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন এবং বিএনপি নেতা মফিজুল ইসলামের বাড়িতে লুটপাট চালায়। এ সময় আতঙ্কে মানুষ ছোটাছুটি করে পালাতে থাকেন। একপর্যায়ে অস্ত্রধারীরা গুলি চালায়। এতে মনির হোসেন নামের বিএনপি’র এক কর্মীর মাথায় গুলি লাগে।
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ খানের পায়ে ও পেটে গুলি লাগে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। হামলার সময় বিএনপি’র সভাস্থলের মঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়। বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম জানান, হামলার সময় তার উন্দানিয়া গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, অর্থমন্ত্রীর ভাতিজা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম শাহীন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়াত উল্লাহর নেতৃত্বে এ হামলা হয়। আমরা কি কর্মিসভাও করতে পারবো না। আগেও বাকই উত্তর ইউনিয়নে আমার কর্মিসভা ভণ্ডুল করা হয়েছে। চেয়ার-টেবিল ভাঙচুুর করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত নেতাকর্মীদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখে এসেছি।
কুমেক হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ শরীফ বলেন, আহত হয়ে হাসপাতালে আসা একজনের পায়ে ও হাতে এবং আরেকজনের মাথায় গুলি লেগেছে। তবে তারা এখন কিছুটা আশঙ্কামুক্ত।
এদিকে সন্ধ্যায় লালমাই উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব ইউসুফ আলী মীর পিন্টুসহ নেতাকর্মীরা স্থানীয় একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন। এ সময় তিনি বলেন, আমরা পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়ে দু’টি ইউনিয়নে কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করি। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মীর বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় এবং আমাদের নেতাকর্মীদের গুলি করে। এতে অন্তত ১৫/২০ জন আহত হয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, বিএনপি’র লোকজন আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করেছে। আমাদের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল না, কারা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তিনি জানেন না।
লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হানিফ সরকার বলেন, বেলঘর উত্তর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র লোকজনের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে বিএনপি’র মঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতার বাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে, তবে লুটপাট হয়নি। এ ঘটনায় এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি।
আরো পড়ুন : পরিস্থিতি বিবেচনায় তাৎক্ষণিক কর্মসূচি দিতে চায় বিএনপি