ডেঙ্গুর রুগীর জন্য প্রয়োজনীয় প্লাটিলেট কিটের সংকট দেখা দিয়েছে

জনদুর্ভোগ জাতীয় প্রচ্ছদ স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

স্টাফ রিপোর্টার : ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমছে না। রাজধানীতে স্থির থাকলেও ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর দাপট বেশি। ডেঙ্গু আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্লাটিলেট কিটের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে তাদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে যাদের শরীরে প্লাটিলেট কমে যায়, তাদের যত দ্রুত সম্ভব প্লাটিলেট দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অ্যাফেরেসিস মেশিন নামের একটি ডিভাইস ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর্মীরা রক্তদাতার রক্ত থেকে প্লাটিলেট সংগ্রহ করেন- যা শিরার মাধ্যমে আক্রান্তদের শরীরে দেয়া হয়। বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, রক্তদাতার কাছ থেকে প্লাটিলেট সংগ্রহ করে তা রোগীর শরীরে দেয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টাকা মূল্যের একক ব্যবহারযোগ্য আমদানিকৃত কিট প্রয়োজন। এই কাজটি করতে বেসরকারি হাসপাতালে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং সরকারি হাসপাতালে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। পাশাপাশি এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। মে মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করায় জুলাইয়ের শেষের দিকে অ্যাফেরেসিস মেশিন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কিটের সংকট দেখা দেয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্লাটিলেট সংগ্রহের এই পরিষেবা এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও এই ঘাটতি আরও তীব্র হয়েছে। গ্রিন লাইফ হাসপাতালও গত সপ্তাহে প্লাটিলেট সংগ্রহের পরিষেবা স্থগিত করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগস্টের শুরু থেকেই সেখানে কিট সংকট দেখা দেয়। হাসপাতালটির একজন টেকনোলজিস্ট গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা বহিরাগত রোগীদের সেবা দেয়া স্থগিত করেছি। এখন আমাদের কাছে কোনো কিট মজুত নেই। বাংলাদেশ হেলথ রাইটস মুভমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট যে হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই সংকট প্রতিরোধে উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমাদের সুসংগঠিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা না থাকায় এমনটা হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শ্যামলী ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ৬টি ব্লাড ব্যাংকের কর্মচারীরা জানান, গুরুতর রোগীর জন্য হন্যে হয়ে প্লাটিলেট খুঁজছেন, সংকটের কারণে এমন লোকদেরকেও ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।

রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জ জাহিদুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমাদের জন্যও বেদনাদায়ক। প্লাটিলেট সংগ্রহ পরিষেবা বন্ধের কথা জানালে মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিট সরবরাহকারীদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন আর ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করতে পারছি না। তারা সবসময় বলে যে অভাব আছে। অথচ অতিরিক্ত অর্থ দিলে ঠিকই তারা কিটের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা তাদের অতিরিক্ত অর্থ দিতে পারি না, যেহেতু আমরাও রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নিতে পারি না। বিএমএ ভবনের চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা জানান, কিটের সংকট নেই। হাসপাতালগুলো যা বলছে তা ঠিক না। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর মুখপাত্র নুরুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের জানামতে প্লাটিলেট সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত কিটের কোনো সংকট নেই। আমদানিকারকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানির অনুমতি দিয়েছি।

৭ জনের প্রাণহানি, ২৩৬৭ রোগী ভর্তি: একদিনে আরও ৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। চলতি আগস্টে মৃত্যু ৩২৫ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬৯ হাজার ৬৬৮ জন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭৬ জনে। দেশে ইতিমধ্যে ডেঙ্গু রোগী মৃত্যু ও শনাক্তে পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৩৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৫৭ হাজার ১৪৬ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬৪ হাজার ৩৫৪ জন। মৃত ৫৭৬ জনের মধ্যে নারী ৩৩৩ জন এবং পুরুষ ২৪৩ জন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ১৫৪ জন এবং রাজধানীতে ৪২২ জন। ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ৩৬৭ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৯৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৪৬৮ জন।

আরো পড়ুন : মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে প্রাণ গেল নারী উদ্যোক্তার

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *