বিভাগীয় অফিস, সিলেট: সিলেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্তুষ্ট নয় সরকারের দুই মন্ত্রী। যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল সরকারের শেষ সময়ে সেগুলোর কাজ শেষ তো দূরের কথা তেমন দৃশ্যমান করা যায়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে মন্ত্রীদের। তবে- মন্ত্রীদের এই ক্ষোভের হিসাব মিলিয়ে দিলেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সিলেট পিছিয়ে থাকার কারণও ব্যাখ্যা দিলেন তিনি। বললেন- দীর্ঘদিন ধরে সিলেট থেকে কেউ না কেউ অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকতেন। ফলে সিলেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে টাকা ছাড়ের ব্যাপারে তেমন বেগ পেতে হতো না। কিন্তু গত ৫ বছর পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। অর্থমন্ত্রী সিলেটের না থাকার কারণে পাইপ লাইনে থাকা অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে টাকা ছাড় হচ্ছে না। মেয়াদ টু মেয়াদ উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলনা করেন সাধারণ মানুষ। এবারো তাই করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে অতীতের চেয়ে গত ৫ বছরে উন্নয়ন কমই হয়েছে।
তবে- পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নানের বদৌলতে সুনামগঞ্জে এবার দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সেভাবে সিলেটের অপর তিন জেলায় হয়নি। গত মাসে ঢাকায় সিলেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে বৈঠক করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। ওই সভায় সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সিলেটজুড়ে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ধীরগতির কারণে অসন্তোষ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মন্ত্রী। সভায় মন্ত্রী তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন- সিলেটের জন্য বড় বড় প্রকল্প দ্রুত পাস হয়, অর্থও যথাসময়ে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ হয় না। এটা খুবই দুঃখ ও হতাশাজনক। প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা তা চেপে রেখে সময়ক্ষেপণ করেন। অথচ তাদের বদলি বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে তারা ঠিকই যোগাযোগ করেন।
ওই মতবিনিময় সভায় সিলেট-ঢাকা ৬ লেন ও সিলেট-তামাবিল ৬ লেন সড়কের কাজের অগ্রগতি, কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ককে ৪ লেনে উন্নীতকরণ, ওসমানী বিমানবন্দর থেকে চৌকিদীঘি রাস্তা ৪ লেনে উন্নীতকরণ, সিলেট শহরকে যানজট মুক্ত করতে রিং রোড স্থাপন পরিকল্পনা, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প, সুরমা নদীর ভাঙন রক্ষা প্রকল্প, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পসহ সিলেট সিটি করপোরেশন এবং সিলেট জেলা পরিষদের আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ৩১শে ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ২ হাজার ৩০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকার এই প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত মাত্র ২২ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটির পরিচালক জানান, নকশায় ভুল থাকায় তা সংশোধন করে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। পুরো কাজ শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়াতে হবে। এ ছাড়া ৪০৫ কোটি টাকা প্রকল্পের ওসমানী বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ের টেক্সিওয়ে শক্তি বৃদ্ধিকরণ কাজ এখনো শুরুই হয়নি। এদিকে গত সপ্তাহে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু আইসিটি পার্কে এক অনুষ্ঠানে একই ভাবে হতাশা ব্যক্ত করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন- আইসিটি পার্ক চালু করতে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ পার্কের নির্মাণ কাজ শেষ করতে অনেক সময় ব্যয় করা হচ্ছে। এতে করে বিনিয়োগকারীরা সরে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। বিশেষ করে কাজে ধীরগতি হওয়ার কারণে প্রবাসী বিনিয়োগকারীরাও সরে গেছেন। ওই দিন মন্ত্রী শতকোটি টাকা ব্যয়ে আইসিটি নলেজ পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন- সামনে সরকার কে আসবে, না আসবে সেদিকে আপনাদের (প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের) নজর দেয়ার প্রয়োজন নেই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ দেন মন্ত্রী। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- আইসিটি পার্কে নির্ধারিত ১৭টি কোম্পানি ইতিমধ্যে বিনিয়োগে নেমেছেন। এর মধ্যে ৬টি কোম্পানির কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। সিলেটের জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের এ প্রকল্পটি ঝিমিয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের গাফিলতিকে দায়ী করেন তারা। এদিকে- বর্তমান সরকারের সময় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপি ঘরানার রাজনীতিক হলেও নগর বদলে দেয়ার মতো উন্নয়ন কাজ করেছেন। সেজন্য বিদায়ী মেয়র আরিফ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন। শনিবার রাতে সিলেটে এক অনুষ্ঠানে মেয়র জানিয়েছেন, সিলেটের অনেক প্রকল্পের কাজ এখনো পাইপলাইনে রয়েছে। আমাদের সিলেটের মন্ত্রীরা এসব জানার পর বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেন। তাদের আন্তরিকতার কমতি নেই। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর টেবিল পর্যন্ত জোরালো ভাবে উপস্থাপন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মেয়র আরিফ। তবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ধীরগতির কারণ তুলে ধরে মেয়র জানান, ’৯৬ সাল থেকে সরকারে যারা অর্থমন্ত্রী হয়েছেন সবাই ছিলেন সিলেটের। ফলে অনেক উন্নয়ন কাজের টাকা অর্থমন্ত্রীরাই ছাড় দিয়ে দিতেন। কিন্তু বিগত ৫ বছরে সেটি সম্ভব হয়নি। এজন্য সিলেটবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান মেয়র।
আরো পড়ুন : পুতিন-এরদোয়ান বৈঠকে সিদ্ধান্ত; শস্যচুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রাশিয়া