স্টাফ রিপোর্টার: শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতির কথা গণমাধ্যমে জানানোর ঘটনায় বরখাস্ত হচ্ছেন সরকারের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং এবং একাধিক আইন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও গতকাল এমরান আহম্মদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে গতকাল দুপুরে ডিএজি এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার নাম সংবলিত নেমপ্লেট খুলে ফেলা হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম ফজলুল হক ডিএজি এমরান আহম্মদের নেমপ্লেট খুলে ফেলেন। নেমপ্লেট খুলে ফেলার কারণ প্রসঙ্গে ফজলুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া রাষ্ট্রের একজন আইন কর্মকর্তা হয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাই, একজন মুক্তিযোদ্ধা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তার নেমপ্লেট আমি খুলে ফেলেছি। আমি মনে করি তার নেমপ্লেট অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে থাকতে পারে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পঞ্চম তলায় গিয়ে দেখা যায়, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার নাম সংবলিত নেমপ্লেটটি আর আগের জায়গায় নেই। অন্যদের নেমপ্লেট ঠিকঠাক রয়েছে। এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের ৫১১ নম্বর কক্ষে থাকা এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র সরিয়ে নিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে ডিএজি এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, আজ তিনি অফিসে যাননি, বাসাতেই আছেন। অ্যাটর্নির অফিস থেকে আমাকে এখনো কেউ কিছু জানায়নি। গণমাধ্যম থেকে নেমপ্লেট খুলে ফেলার বিষয়ে জানতে পেরেছি। স্বাক্ষর করার কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি অ্যাটর্নি জেনারেলের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, তাহলে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এলো কীভাবে? হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আমাদের সব ধরনের নোটিশ দেয়া হয়। এটাও সেদিন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছিল। যে কারণে আমি ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর না করার ঘোষণা দিয়েছি। এবং আমি এখনো মনে করি ড. ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশ্বনেতাদের দেয়া বিবৃতির সঙ্গে আমি একমত।
এদিকে, আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবারই আইন মন্ত্রণালয় থেকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু করতে সলিসিটর উইংকে নির্দেশ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সলিসিটর কার্যালয়। সূত্র জানায়, তার বিরুদ্ধে অসদাচারণ, রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী অবস্থান নেয়ার অভিযোগ আনা হতে পারে।
গত সোমবার ড. ইউনূসের বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে বিশ্বনেতাদের চিঠির পাল্টা বিবৃতিতে স্বাক্ষর না করার কথা জানান এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। তিনি মনে করেন ড. ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধে বিশ্ব নেতারা যে বিবৃতি দিয়েছেন তার প্রতিও সমর্থন জানান তিনি।
এমরান শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে: আইনমন্ত্রী
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে বিবৃতি সংক্রান্ত বক্তব্য দিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) আয়োজিত এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন। আইনমন্ত্রী বলেন, তার (এমরান আহম্মদ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া গত সোমবার হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি (এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া) অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ডিএজি (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল)। তিনি যদি সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন, তাহলে তাকে হয় পদত্যাগ করে কথা বলা উচিত, অথবা অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমতি নিয়ে কথা বলা উচিত। তিনি সেটি করেননি। তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তখন সাংবাদিকেরা জানতে চান, তাহলে এখন কী হবে? জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি দেখবো।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলাচিঠি (বিবৃতি) পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ী রয়েছেন। শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার তাদের ওয়েবসাইটে গত ২৮শে আগস্ট এই চিঠি প্রকাশ করে। গত সোমবার হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া।
এমরান বলেন, আমি মনে করি, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার সম্মানহানি করা হচ্ছে এবং এটি বিচারিক হয়রানি। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ড. ইউনূসের পক্ষে ১০৭ জনের বেশি নোবেলজয়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সহ অনেকেই বিবৃতি দিয়েছেন- যে ওনাকে (ড. ইউনূস) বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে।
ডিএজি এমরানের অন্য উদ্দেশ্য আছে: অ্যাটর্নি জেনারেল
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিশ্বনেতাদের বিবৃতির প্রতিবাদে কোনো পাল্টা বিবৃতি তৈরি করা হয়নি এবং আইন কর্মকর্তাদের সই করতেও বলা হয়নি দাবি করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেছেন, এরপরেও মিডিয়ার সামনে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। আসলে তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। গতকাল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে দিয়েছেন, কাউকে খুশি করার জন্য বলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, উনাকে (এমরান) সই করতে আমি কখনো বলিনি। আমি কোনো দিন কোনো আইন কর্মকর্তা বা কাউকে সই করতে বলি না। আমাদের অফিস থেকে আমার জানামতে, নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, কোনো বিবৃতি তৈরি করা হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, গতকাল এমরানের ছুটি ছিল। ডিউটি (দায়িত্ব) ছিল না। তিনি এখানে (কার্যালয়) আসেননি। যেখানে নিয়মিত ব্রিফিং করা হয়, তিনি সেখানে যান। গিয়ে কতোগুলো কথা বললেন। এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘তিনি (এমরান) কী কারণে করলেন, কোন উদ্দেশ্যে করলেন, আপনারা (সাংবাদিক) খোঁজ নিয়ে দেখেন। কাকে খুশি করার জন্য এ কথাগুলো বললেন, আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন। এমরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রসঙ্গে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আমি তো ব্যবস্থা নেয়ার কেউ নই। আমি তো নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষও নই।
গত সোমবার ড. ইউনূসের বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে বিশ্বনেতাদের চিঠির পাল্টা বিবৃতিতে স্বাক্ষর না করার কথা জানান এমরান আহম্মদ। তিনি মনে করেন ড. ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধে বিশ্ব নেতারা যে বিবৃতি দিয়েছেন তার প্রতিও সমর্থন জানান এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া।
আরো পড়ুন : পুলিশ ৩ শিক্ষার্থীক আটকের পর মহাসড়ক অবরোধ করল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা