রাজনৈতিক প্রতিবেদক: সরকার পতনের একদফা দাবিতে ফের মাঠে নামছে বিএনপি। কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে ইতিমধ্যে দু’দফা বৈঠক করেছে দলটি। রোববার রাতে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে বিএনপি’র হাইকমান্ড। এরপর সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহ থেকেই একদফা দাবি আদায়ের কর্মসূচি শুরু হতে পারে। ২৫শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদযাত্রা, মানববন্ধন, সমাবেশের মতো কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। ঢাকা ও জেলাগুলোতে পালিত হবে এসব কর্মসূচি। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে কঠোর কর্মসূচিতে যাবে দলটি। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন দলটির নেতারা। মূলত তফসিল ঘোষণাকে ঘিরে ঢাকাকেন্দ্রিক টানা কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সরকারকে বাধ্য করতে ঢাকা ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন, গণভবন, সচিবালয় ঘেরাও এবং টানা অবস্থানের মতো কর্মসূচি দেয়া হতে পারে। মূলত ঢাকাকে অচল করার টার্গেট বিএনপি’র। এসব কর্মসূচি দেয়া হবে যুগপৎভাবে। কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি’র সঙ্গে রাজপথে আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করা হবে।
জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২৮শে আগস্ট বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এরপর গত রোববার রাতে সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক এবং যুবদলের সভাপতি ও ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খানও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে দলের সিনিয়র নেতাদের আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মতামত নেন বিএনপি’র হাইকমান্ড। এরপর সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে বিগত কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থতাগুলো টিহ্নিত করা হয়েছে। ২৯শে জুলাইয়ের ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি সফল না হওয়ার পেছনে দলের নেতাদের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এসব ভুল যেন না হয় সেভাবে দলের নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে আলোচনা হওয়া কর্মসূচিগুলো নিয়ে একটি শর্টলিস্ট করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপর চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা বলেন, আমাদের হাতে আর এক থেকে দেড় মাসের মতো সময় আছে। এর মধ্যেই আমাদের দাবির বিষয়টি ফয়সালা করতে হবে। রোববারের বৈঠকে নেতারা সবাই একমত হয়েছেন- ফাইনাল কর্মসূচি হবে ঢাকা ঘেরাও। মূলত ঢাকাকে অচল করে দেয়া। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে আমরা ফাইনাল রাউন্ডে যাবো। তফসিল ঘোষণার আগে ১০-১৫ দিনের জন্য সরকারকে একটা আল্টিমেটাম দেয়া হবে। আল্টিমেটামের পর চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতাদের এখন বিভীষিকার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মামলা। সরকার আদালতকে ব্যবহার করে সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে পুরনো মামলা পুনরুজ্জীবিত করছে। একের পর এক রায় দিচ্ছে। ভবিষ্যতে আদালতকে ঘিরেও কর্মসূচি দেয়া হবে।
বৈঠকের বিষয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, ওই বৈঠকে আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া ২৮শে জুলাই রাজধানীতে এত বড় সমাবেশের পর কেন পরদিন ২৯শে জুলাইয়ের ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি জোরালো হয়নি সে বিষয়টি চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগামী ২৫শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। এরপর আমরা ধীরে ধীরে কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবো।
বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা বলেন, বিদেশিরা সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হোক সেটা পছন্দ করেন না। তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে বর্তমান সমস্যার সমাধান চান। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা কর্মসূচি নির্ধারণ করছি।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমাদের আন্দোলন হলো এদেশের গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য। এর জন্য যে পথ আমরা অবলম্বন করছি সেটা অবশ্যই গণতান্ত্রিক উপায়ে। সে কারণেই আমরা ১০০ ভাগ গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। এ ছাড়া মানুষের যে সুস্থ চিন্তা-চেতনা সেটার ওপর আমরা আস্থা রেখেছি। তাতেই দেখবেন সুফল আসবে। এবং বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারবো।
আরো পড়ুন : খুলে ফেলা হয়েছে নেমপ্লেট, বরখাস্ত হচ্ছেন ডিএজি এমরান