কূটনৈতিক প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি গতকাল সকাল ১০টা ১২ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে একাধিক মন্ত্রী, চিফ হুইপ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং কূটনৈতিক কোরের ডিন উপস্থিত ছিলেন। বিমানের ফ্লাইটটি লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীকে পৌঁছে দিয়ে ঢাকায় ফিরবে। সেখানে ৪ ঘণ্টা যাত্রা বিরতির পর কমার্শিয়াল ফ্লাইটে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। ১৭ই সেপ্টেম্বর রাতে তার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এম এ মুহিত এবং ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। ১৯শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের উচ্চপর্যায়ের বিতর্কের উদ্বোধনীতে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। ২২শে সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে তিনি জাতিসংঘ অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন।
অধিবেশনের উদ্বোধনী দিন ১৯শে সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত রিসিপশনে প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রিত। তাতে তিনি যোগ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা বাসস।
কর্মসূচির বিস্তারিত: সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও অর্থসহ বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় ও সৌজন্যমূলক বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, জাতিসংঘে দেয়া প্রধানমন্ত্রী ভাষণে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের পাশাপাশি বিশ্ব-শান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু ও ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। বিশ্ব নেতারা ৭৮তম জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউ ইয়র্কে জমায়েত হবেন। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘বিশ্বাস পুনর্গঠন ও বিশ্ব সংহতির পুনরুদ্ধার: ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নে ত্বরান্বিত পদক্ষেপ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং সবার জন্য স্থায়িত্বের দিকে। ১৮ই সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের রকফেলার সেন্টারে ইউএনআইডিও ও ডেলয়েট-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠেয় ‘খাদ্যের জন্য চিন্তা- খাদ্য সরবরাহ চেইন উদ্ভাবনের জন্য এসডিজিকে ত্বরান্বিত করার জন্য সহযোগিতা’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেবেন।
একইদিনে তিনি ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে ‘এসডিজি সামিট-লিডার্স’ ডায়ালগ ৪ (এসডিজি অর্জনের জন্য সমন্বিত নীতি ও পাবলিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা) শীর্ষক আরেকটি সম্মেলনেও ভাষণ দেবেন। ওইদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈশ্বিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত ও বিশ্ব স্বাস্থ্য অর্থায়নের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রাষ্ট্রদূত গর্ডন ব্রাউন ও নিউ ইয়র্কের লেক্সিংটন ভেন্যুতে গ্লোবাল বিজনেস কোয়ালিশন ফর এডুকেশনের এক্সিকিউটিভ চেয়ার সারাহ ব্রাউন আয়োজিত জাতিসংঘের ২০২৩ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিগত নৈশভোজে যোগ দিতে পারেন। ১৯শে সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সিআর-১৬-এ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সভাপতি কর্তৃক ‘টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে ভাষণ দেবেন। একইদিন জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সিআর-১১ এ বাংলাদেশ, অ্যান্টিগুয়া এবং বারবুডা, ভুটান, চীন, মালয়েশিয়া, চ্যাথাম হাউস এবং সূচনা ফাউন্ডেশনের সহ-আয়োজিত চিকিৎসা পরিষেবাভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্টে যোগ দেবেন। ২০শে সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য আন্তর্জাতিক পাবলিক ফাইন্যান্সিং বৃদ্ধি এবং দক্ষতা নিশ্চিতকরণ’ শিরোনামে উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন (এফএফডি) বিষয়ে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে একটি উচ্চপর্যায়ের বিতর্কে প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দেবেন।
একইদিনে তিনি মহাসচিবের ক্লাইমেট অ্যামবিশন সামিটে যোগ দেবেন, মহামারি প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক, নারী নেতাদের ইউএনজিএ প্ল্যাটফরমের বার্ষিক সভা, ক্লাইমেট অ্যামবিশন উচ্চস্তরের জলবায়ু উচ্চস্তরের বিষয়ভিত্তিক সম্মেলনের পাশাপাশি ন্যাশনাল জুরিসডিকশনের বাইরের এলাকার সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য আইনের ওপর জাতিসংঘের কনভেনশনে যোগ দেবেন। ২১শে সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রীর যোগদানের পাশাপাশি ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সৃষ্ট হুমকি মোকাবিলা’ শীর্ষক ব্রেকফাস্ট সামিটে এবং ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন। সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ মহাসচিবের জেনোসাইড উপদেষ্টা, নবনির্বাচিত ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) মহাপরিচালক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের দ্বিপক্ষীয় বুথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। অনুষ্ঠানে যোগদানের পর, তিনি ২৩শে সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় (নিউ ইয়র্ক সময়) ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশ্যে নিউ ইয়র্ক ত্যাগ করবেন। তিনি ২৩ থেকে ২৯শে সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে থাকবেন। ২৯শে সেপ্টেম্বর রাতে বৃটিশ এয়ারওয়েজের কমার্শিয়াল ফ্লাইটে ওয়াশিংটন থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা করবেন। ৩০শে সেপ্টেম্বর সকালে তিনি লন্ডনে পৌঁছাবেন। লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম প্রধানমন্ত্রীকে হিথ্রো এয়ারপোর্ট স্বাগত জানাবেন। সেখানে ৩ দিন কাটিয়ে ৪ঠা অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
আরো পড়ুন : বগুড়া থেকে নওগাঁ হয়ে বিএনপির রাজশাহী বিভাগের ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ শুরু