শাহবাগ থানায় ওসি’র (তদন্ত) কক্ষে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের ঘটনার পুলিশের তদন্ত শেষ পর্যায়ে। মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ২৫-৩০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশীদ, এডিসি সানজিদা আফরিন, পরিদর্শক মো. গোলাম মোস্তফা রয়েছেন।
ছাত্রলীগের ভুক্তভোগী নেতা এবং ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল ও থানার প্রত্যক্ষদর্শীদেরও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশের বর্ণনায় হারুনের বিরুদ্ধে হাসপাতাল থেকে থানায় নির্যাতন পর্যন্ত নিপীড়নমূলক ভূমিকায় থাকার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে হারুন এবং সানজিদা এ ঘটনার সূত্রপাতের জন্য রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক খান মামুনকে দায়ী করেছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এবং ভুক্তভোগীরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন যে তদন্ত চলছে এর মাধ্যমে মূলত ঘটনায় কার কী ধরনের ভূমিকা সেটি নিরূপণ করা হবে। প্রাথমিক তদন্তে সাধারণত শাস্তির সুপারিশ করা হয় না। কার বিরুদ্ধে কোন অপরাধ সেটি বলা হয়। বিভাগীয় তদন্তে গিয়ে শাস্তির সুপারিশ করা হয়। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি মূলত কে কী কাজ করেছে এর পাশাপাশি কোন বিষয়টি শাস্তিযোগ্য, কোনটি শাস্তিযোগ্য নয়, সেগুলো বলবে। এরপর বিভাগীয় তদন্ত হবে।’
তদন্ত কমিটি ঘটনার মূল ভুক্তভোগী ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং ছাত্রলীগের বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিমেরও বক্তব্য নিয়েছে। তারা তদন্ত কমিটির কাছে ঘটনার আদ্যোপান্ত ও নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেছেন।
সেদিনের ঘটনায় এডিসি হারুনের পর সবচেয়ে আগ্রাসী ভূমিকায় পাওয়া গেছে পরিদর্শক মোস্তফাকে। এদিকে আহত ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষ থেকে হামলায় ১০-১৫ জনের অংশগ্রহণের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তদন্তে ৮-১০ জনের নাম উঠে এসেছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর দিন রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে রমনা জোনের তৎকালীন এডিসি হারুন-অর-রশীদসহ ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।
নির্যাতিতদের অভিযোগ, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে এপিএস মামুনের স্ত্রী সানজিদার সঙ্গে হারুনকে দেখে ফেলায় তাদের ওপর এ নির্যাতন নেমে আসে। থানা হেফাজতে নিয়ে পিটিয়ে তাদের রক্তাক্ত করা হয়।
তবে হারুন ও সানজিদার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সানজিদার স্বামী মামুন সেখানে গিয়ে ঘটনাটিকে বড় করেন। তিনিই প্রথম হারুনের শরীরে আঘাত করেন। ঘটনার শুরু সেখানেই।
রংপুর রেঞ্জে যোগ দেননি হারুন: এ ঘটনার পরদিন এডিসি হারুনকে রমনা জোন থেকে প্রত্যাহার করে ডিএমপি’র পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়। সেদিন রাতেই আবার তাকে এপিবিএন-এ বদলি করা হয়।
এ নিয়ে আপত্তি উঠলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। ছাত্রলীগ নেতারা এ নিয়েও আপত্তি তুললে সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর তাকে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। যদিও তিনি এখনো রংপুর রেঞ্জে যোগদান করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশীদ এখনো রংপুরে যোগদান করেননি।’
যোগদানের নিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের আদেশে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদান করতে হয়।’
আরো পড়ুন : এক জোড়া কানের স্বর্নের রিংয়ের জন্যই হত্যা করা হয় শিশুটিকে!