স্টাফ রিপোর্টার : যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশিদের ওপর যে ভিসা নীতি কার্যকর করেছে তার একটি তালিকা বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছে। সরকার জানে কতোজনের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হোক চায়। এজন্য তারা সবধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টাইম টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নেন টেলিভিশনটির সিইও আবু তাহের।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, সম্পর্ক ভালো তার অর্থ এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র তার যে নীতিগত অবস্থানের কথা বলেছে তারা আসলে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সকলের অংশগ্রহণমূলক শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় এবং তার জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে। বাংলাদেশের বাস্তবতাটা হচ্ছে দুটো বৃহৎ রাজনৈতিক দল আছে। একটি বাদ গেলে সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় না।
১৯৯৬ সালে ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি’র সরকারের অধীনে খালেদা জিয়া সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন হয়েছিল, আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেনি। এটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছিল না। একইভাবে ২০১৪ সালের নির্বাচনকে আমরা অংশগ্রহণমূলক বলবো না।
সুতরাং অংশগ্রহণমূলক হওয়াটাই আসল কথা নয়। নিশ্চয়তা দিতে হবে ভোট দেয়ার অধিকারটি আছে কিনা।
তিনি বলেন, আজকের এই ঘোষণাটি আসলো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের যে নীতি কার্যকর করার একটি স্বীকৃতি মাত্র। অর্থাৎ যদিও তারা বলছেন যে, আজ থেকে কার্যকর। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে আসলে এই নীতিটা তারা গত ২৪মে ঘোষণা করার পর থেকে আসলে কার্যকর করতে শুরু করেছেন। তারা এখন এটা স্পষ্ট করে জানাচ্ছেন। এই কারণে বললাম, লক্ষ্য করলে দেখবেন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম যে কথাগুলো বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে যে তাদেরকে একটি তালিকাও দেয়া হয়েছে আসলে।
তারা জানেন যে, কতোজনকে ইতিমধ্যে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং কাদের ওপর আরোপ করা হয়েছে। কাদের ভিসা ক্যানসেল করা হয়েছে। বা দেয়া হয়েছে। তার মানে হচ্ছে এটি আগে থেকেই কার্যকর হয়েছে। আর এরমধ্যে দিয়ে যে রাজনৈতিক তাৎপর্যের বিষয়টি সেটা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এটা কথার কথা হিসেবে বলেনি। অনেকেই যেটা মনে করছিলেন মে মাসে এ ধরনের ঘোষণা দেয়ার পর এটা কী করে কার্যকর করবে? সেটা যেহেতু স্পষ্ট নয়। সম্ভবত তারা এটা কার্যকর করবে না। শুধু কথার কথা হিসেবে বলছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেটা নয়। কখনোই এটা মনে করার কোনো কারণ ছিল না। দ্বিতীয় আরেকটি যেটা ঘটেছে সাম্প্রতিককালে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের এক ধরনের সমঝোতা তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল সেটার অবসান ঘটেছে। সেটা যে হয়নি সেটাও বোঝা যাচ্ছে। শুধু এই ভিসা নীতির কার্যকর করার মধ্যদিয়ে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে আসলে যুক্তরাষ্ট্র একটি সকলের অংশগ্রহণমূলক অবাধ নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয় সেটা করতে মোটেও পিছপা হবে না।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ কথাটি যদি আক্ষরিক অর্থে নেন। আসলে কি সম্পর্ক ভালো? হ্যাঁ অবশ্যই সম্পর্ক ভালো। সম্পর্ক যদি খারাপ হতো তাহলে তো যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন রকম কার্যক্রমের সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার কথা না। কিন্তু তার সঙ্গে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থা তার কোনো বিরোধ নেই। সম্পর্ক ভালো তার অর্থ এই নয়, যুক্তরাষ্ট্র তার যে নীতিগত অবস্থানের কথা বলেছে তারা আসলে অবাধ, নিরপেক্ষ, সকলের অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় এবং এজন্য দীর্ঘদিন তারা বলে আসছে কিন্তু এবং উপর্যুপরি এই চাপটা যে আসছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। তার চেয়েও বড় যে বিষয়টি মনে করি সত্যি বলতে সেটা হচ্ছে গত বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময়ে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকটি হয়েছে আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে কিন্তু আলোচনা হয়েছে অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্নে। এইটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে মনে হচ্ছে। কারণ উজরা জেয়া এবং ডোনাল্ড লু প্রধানমন্ত্রীকে কী বলেছেন সেটা কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। উজরা জেয়ার টুইটারে তিনি যে টেক্সট ম্যাসেজ দিয়েছেন সেখানে আমরা ছবি দেখতে পাচ্ছি। সরকারের পক্ষ থেকে কিন্তু কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। এটা কিন্তু খুব উল্লেখযোগ্য। একটি সেলফি উঠলেই যেহেতু গোটা সরকারি মেশিন (দল) প্রচারে নেমে যায় সেখানে কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এটাকে বলা হয়। একই বিষয়ে উজরা জেয়া কিন্তু সোমবার দিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানেও বলেছেন। কী বলেছেন লক্ষ্য করে দেখুন। বলছেন যে, তারা নির্বাচনের প্রশ্নকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যপারে উজরা জেয়া আবারো প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন। সোমবার দিন মাসুদ বিন মোমেনকে বলেছেন। এগুলো নিয়ে আমরা আসলে কোনো ব্যাখ্যা শুনছি না কিন্তু। মি. মোমেন যেটা বলেন যে, আসলে সম্পর্ক ভালো। হ্যাঁ সম্পর্ক অবশ্যই ভালো। কিন্তু তার অর্থ মোটেও এটা নয় যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী যারা আছেন তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন এটার অর্থ কী এবং বিরোধী দলের যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এ কথাগুলোর মধ্যে কী ধরনের পার্থক্য আছে? জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর নয়, সাধারণ মানুষসহ সবার দাবি এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে; যে ব্যবস্থার মধ্যে ২০১৪ বা ২০১৮ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না এবং সেটা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে বিরোধী দল মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আপনি যে নামেই ডাকুন সেটা হচ্ছে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ প্রশাসন তৈরি করতে হবে। একটি সরকার তৈরি করতে হবে। এই দাবিটা বিরোধী দলগুলোর দাবি। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দাবি। যারা ভোট দিতে চান তাদের দাবি। এই দাবিটা হচ্ছে কিসের জন্য? সেটা হচ্ছে একটি অবাধ নির্বাচন করার জন্য। এটা অভ্যন্তরীণভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধীদের কি পথ বের করবে সেটা তো বিদেশিরা বলতে পারেন না। সেটা বলার কোনো কারণও নেই। তারা যেটা চান। তারা যেটা বলছেন। এবং সুন্দরভাবে বলছেন তারা অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চান। কেন চান? কারণ হচ্ছে এতে করে সাধারণ নাগরিকরা ভোট দিতে পারবেন। আন্তর্জাতিক সোসাইটির পক্ষ থেকে এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। এবং সেই চেষ্টার একটি অংশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত দেখা গেছে।
তারা বলছেন যে, পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না। কেন পাঠাবেন না? সেটা ডিডব্লিউকে যেটা বলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সেটা হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। সুতরাং আমাদের উদ্দেশ্যটা কি? যদি আর্থিক কারণে না পাঠানো হতো তাহলে এটা বিবেচনা করে দেখুন ১৫ দিন ধরে একটি মিশন হয়েছে। আর্থিক কারণে তো আগেই বিবেচনার কথা ছিল। এটা কিন্তু কারণ নয়। তারা বলছেন যে, আমরা এমন কিছু পাইনি যাতে এখন থেকে নির্বাচনের পরিবেশ-পরিস্থিতি নির্বাচনের সময় এমন পরিস্থিতির বদল হবে যে সকলের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। এজন্য পাঠাচ্ছেন না। তাহলে সমন্বয়ের কোনো প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশের বর্তমান যে পরিবেশ পরিস্থিতি তাতে একটি অংশগ্রহণমূলক-নিরপেক্ষ নির্বাচন কীভাবে হতে পারে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হওয়ার দরকার হয় না। বাংলাদেশের নাগরিকরা এটা বের করেছেন। সেটা হচ্ছে এক সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে যে ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল সেটা চার চারটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পেরেছে। সেগুলো কী শতভাগ সঠিক? না কোথাও শতভাগ সঠিক হয় না। সেখানে তুলনামূলকভাবে আপনি বাকি যে নির্বাচনগুলো হয়েছে ১১টি নির্বাচন থেকে বাকি চারটি নির্বাচন তো আলাদা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। তাহলে ওটাই হচ্ছে ব্যবস্থা। ওটা যদি আপনি জনমত জরিপ করে দেখেন সেখানেও কিন্তু লোকজন বলছে এখনকার ব্যবস্থায় হবে না। এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যেখানে নাগরিকরা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে। যারা নিশ্চিত হতে পারবেন যে তারা ভোট দেয়ার আগের রাতে ভোট হয়ে যায়নি। ভোটকেন্দ্র থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হবে না। সেটা করার উপায় হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন তৈরি করা। তার জন্য ওপর থেকে শুরু করতে হবে। অর্থাৎ ক্ষমতায় এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে প্রশাসনের সর্বত্র এই ধারণা চলে যায়- কে বিজয়ী হবেন আমরা জানি না। যেই বিজয়ী হোক তাতে যেন আমাদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন্ন থাকে।
১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল। আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেনি। ওটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছিল না। একইভাবে আপনি যে ২০১৪ সালের নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলবো না। শুধু অংশগ্রহণমূলক হওয়াটাই আসল নয়। নিশ্চয়তা দিতে হবে সকলের অংশগ্রহণমূলক ভোট দানের অধিকারটি আছে কিনা। এখন সেরকম ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে যদি কোনো নির্বাচন হয় সেক্ষেত্রে শুধু ভিসার প্রশ্ন নয় বাংলাদেশকে আরও বিরুপ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। আন্তর্জাতিক সময় বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ধরনের অপ্রোয়জনীয় টানাপড়েন তৈরি করা হয়েছে তার ফলাফল কিন্তু খুব ইতিবাচক হবে না। যদি শেষ পর্যন্ত জোর করে একতরফা নির্বাচন করার চেষ্টা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কেউ যদি ভিসা স্যাংশন নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন তাহলে বাংলাদেশও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবেন? উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ তো করতেই পারে। আইন অনুযায়ী অবশ্যই করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী ওই অর্থে তো ঠিকই বলেছেন। তিনিও ভিসা স্যাংশন করতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে দেশটির সঙ্গে আপনার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক তার ওপর কি আপনি ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবেন? যে দেশ থেকে সরাসরি বেশি ফরেন ইনভেস্টমেন্ট হয় সেখানে আপনি ভিসা রেস্টিকশন করে এক ধরনের বিরোধীকরণ করবেন? কিংবা ধরুন সবচেয়ে বিপদের সময় যে দেশটি বিনামূল্যে আপনাকে ওষুধ-ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে তার ওপর স্যাংশন দেবেন? বাংলাদেশ তো করতেই পারে। কিন্তু করলে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে কিনা সেটা একটি প্রশ্ন। জোর করে যদি আপনি একটি নির্বাচন করবেন এই ধরনের মনোভাবের থেকে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন করতে চান সেটা করতে পারেন। অবশ্যই করতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাদের এক সময় না এক সময় জবাবদিহি করতে হবে। যে তারা কেন বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করছেন। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এবং বাংলাদেশের বাণিজ্যিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের মানুষের যে বিভিন্ন সময়ে বিপদে আপদে প্রয়োজন যারা পাশে দাঁড়ায় তাদের। এই যে রোহিঙ্গা সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে বাংলাদেশের জন্য আবির্ভূত হয়েছে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য করে দেখুন কারা সাহায্য করেছে? চীন করেছে? রাশিয়া করেছে, ভারত করেছে? নাম ধরেই বলুন না। করেনি। সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভিসার স্যাংশন আরোপ করতে চান। করুন। তাতে কি বাংলাদেশের জন্য, রোহিঙ্গা সমস্যার জন্য, বড় রপ্তানি খাত তার জন্য ভালো হবে? আমি তো অঙ্ক বুঝি না। এটুকু বুঝি এটা ভালো হবে না। এই ধরনের বিষয় জাতীয় স্বার্থের জন্য অনুকূল নয়। কথা বলার জন্য বলা যেতে পারে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করলে এই ধরনের কথার কোনো মর্ম ঠিক বুঝতে পারি না আমি।
যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে যদি বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হয়, একটি টানাপড়েনের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় এবং সরকার তার সীদ্ধান্তে অনড় থাকে তাহলে প্রবাসে বাংলাদেশি যারা আছেন তাদের ওপর কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে? ওই অর্থে পড়বে না। কারণ তারা এখানে আছেন। তারা কি ভূমিকা প্রণয়ন করছেন সেটা একটি প্রশ্ন। দ্বিতীয় হচ্ছে, বিভিন্নরকমভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করায় আপনি অর্থ পাঠাতে পারছেন না। কারণ এখানে যারা বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী আছেন তারা একটি বিশাল সংখ্যক মানুষ। এবং তারা দেশে বড় রকমের রেমিট্যান্স পাঠান। এগুলো তাদের পরিবারের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার চেয়েও বড় কথা কি বারবার একটি কথা সুযোগ পেলেই বলি যুক্তরাষ্ট্র কি করলো না করলো সেগুলো বিবেচনা বাদ দিন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাদ দিন। বাংলাদেশের যারা এখানে উপস্থিত আছেন তাদের একটি দায়িত্ব আছে দেশের প্রতি। দেশের ভবিষ্যতের প্রতি। দেশের যে মানুষগুলো তারা ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করুন। আপনি যদি এখানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তাহলে ভোট দিতে পারছেন। আপনার ভাই-বোন বাংলাদেশে আছে। তাহলে আপনি আসুন। সেই প্রসঙ্গটা তুলুন। আপনি কেবলমাত্র আর্থিক কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত তা তো না। প্রাণের টানে যুক্ত আছেন। আত্মীয়-স্বজনের টানে যুক্ত আছেন। সেই অর্থে আপনার একটি দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্বটা মনে করুন। পালন করুন। আসুন আমরা সেই দায়িত্বের চর্চাটা করি।
এই সংকট নিরশনে প্রবাসীদের ভূমিকা কি হতে পারে? এই সংকট নিরশনে তারা তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন। সেটা হচ্ছে আমাদের দায়িত্বটা কি? দায়িত্বটা হচ্ছে এই নাগরিকের যে সামান্য অধিকার যে অধিকার আপনি এখানে ভোগ করেন সেই অধিকার যেন সকলে ভোগ করে সেই প্রশ্নটা তোলা। যেভাবে পারেন সেই প্রশ্নটা তুলুন। কারণ বাংলাদেশ একটি ক্রুশ্যাল স্থানে দাঁড়িয়ে আছে। এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। অন্য যেকোনো দশটি নির্বাচনের মতো নয় কিন্তু। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও হবে। এ রকম একটি সময়ে আমি আশা করি যে, এখানে যারা প্রবাসী বাংলাদেশিরা আছেন তারা তাদের মতো করে কথাগুলো বলবেন। যারা দেশের সঙ্গে যুক্ত দেশের নাগরিক ও রাজনীতিবিদদের কাছে এই বার্তাটি দিন। পাশাপাশি যারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তাদের উচিত হবে তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। যেন তারা আসলে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যাতে একটি সুষ্ঠু অবাধ গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় বাংলাদেশে। কে জিতলো সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে প্রক্রিয়াটি অবাধ-সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য হয়। সেটা যেই জিতুক তাকেই গ্রহণ করতে হবে। সেটাই গণতন্ত্র।
আরো পড়ুন : ডেঙ্গু কেড়ে নিল শত শিশুর প্রাণ