রাজনৈতিক প্রতিবেদক: রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে এ আল্টিমেটাম দেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে হবে চিকিৎসার জন্য। তাকে বিদেশে পাঠাতে হবে। আবেদন করেননি, বলেননি- ওই সমস্ত ছলচাতুরি করে কোনো লাভ নাই। পরিবার থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিলো। সেই চিঠিতে মুক্তি এবং চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সেটা আপনারা বেমালুম ভুলে গিয়ে মিথ্যা বলছেন। গণতন্ত্রের মাতাকে মুক্তি দিয়ে প্রমাণ করুন যে, আপনারা গণতন্ত্রে কিছুটা হলেও বিশ্বাস করেন। অন্যথায় দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় থাকতে দেবে না।
তিনি বলেন, আজকে গায়ের মধ্যে আগুন লেগেছে। অনেক আশা করে ১৬৪ জনকে নিয়ে আমেরিকায় গিয়েছিলেন (প্রধানমন্ত্রী)। ভেবেছিলেন সেখানে সপরিবার গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলে একটা সুরাহা করা যাবে। করা গেছে। কি ভয়াবহ। উনি (প্রধানমন্ত্রী) যখন আমেরিকায় বসে আছেন সেই সময় আমেরিকার ভিসা নীতি যে কার্যকর হলো। আমার মতে একটা স্বাধীন-সার্বভৌম যেকোনো জাতির জন্য খুব সম্মানজনক নয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় দেশের মানুষও এই সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। সরকার সাউন্ড গ্রেনেড আমদানি করছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এবারো আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকে তারা দমন করে দিতে চায়।
আজকে সারা দেশে কিছু সংখ্যক অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ কর্মকর্তা জনগণের বিরুদ্ধ অবস্থান নিয়েছেন। একটা বেআইনি সরকারকে আবার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপনারা দয়া করে কোনো অবস্থান নিবেন না। বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভবুদ্ধি উদয় হবে। উনি পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতায় দিবেন। আর এদেশের মানুষ নির্বাচন চায়। আমরা চাই। কিন্তু সেই নির্বাচন হতে হবে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, শনিবার রাতে হাসপাতালে ম্যাডামকে দেখতে গিয়েছিলাম। ম্যাডামের এমন চেহারা আর কখনো দেখিনি। এ কথা বলতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে নেত্রী সবসময় অত্যন্ত শক্ত মনের জোর নিয়ে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠেন, তিনি পাঁচ বছর বন্দি থাকা অবস্থায় কোনো দিনও তার চোখে আমি পানি দেখিনি। গতকাল তাকে আমি অত্যন্ত অসুস্থ দেখেছি। আমার প্রথমবারের মতো মনে হয়েছে- আমাদের নেত্রী অনেক বেশি অসুস্থ। মির্জা ফখরুল বলেন, এই নেত্রী বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য এখনো গৃহবন্দি হয়ে আছেন। গৃহবন্দি অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে তিনবার হাসপাতালে এসেছেন। এবার তাকে নিয়ে ডাক্তাররা চিন্তিত। পাশের রুমে আমি যখন ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছি তখন ডাক্তাররা বলেছেন, আপনাদের যদি কিছু করার থাকে তাহলে করেন।
দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সময় সমাবেশে বিএনপি’র অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েক কর্মী আহতও হন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, এরা সরকারের দালাল। এদেরকে চিহ্নিত করে রাখো। এদিকে বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কোনো ভাবেই আপস করবেন না। তাই দায়িত্ব নিয়ে দেশের বাইরে তার চিকিৎসা করান। না করলে দেশের মানুষের মুখোমুখি হতে হবে। সময় থাকতে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সেই উদ্যোগ আপনাদের নিতে হবে। সময় নষ্ট করবেন না। দেশের প্রত্যেকটা মানুষ ঘণ্টা ও দিন গুনছে কখন বেগম জিয়া চিকিৎসার জন্য বাইরে যাবেন। তাই সময় নষ্ট করবেন না। সমাবেশে সাবেক ও বর্তমান আমলাদের মিটিংয়ের কথা উল্লেখ করে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, মিটিংয়ে তারা বলছেন- আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে হবে। আর বিভিন্ন কুঞ্জে কুঞ্জে বর্তমান আমলা ও পুলিশরা মিটিং করছেন। বলছেন, খুন করে হলেও বিএনপি’র আন্দোলনকে দমন করতে হবে। বিশৃঙ্খলা ঠেকানোর জন্য বলছেন। কিন্তু আমরা বিএনপি বিশৃঙ্খলা করি না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এখন থেকে আমাদের আন্দোলন ডু অর ডাই। এর মাঝামাঝি আর ঠাঁই নাই। গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে হবে। এখন থেকে পিছু হটার সময় নেই। পেছনে জায়গা নাই। সামনে যেতে হবে। গুলি খেতে হবে। মরতে হয় মরতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারকে দেশ থেকে হটাতে হবে। না হলে দেশ বাঁচবে না। এখন থেকে প্রধানমন্ত্রীর বাসা ঘেরাও করতে পারি বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন গয়েশ্বর রায়। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, বেগম জিয়াকে এই সরকার ভয় পায়। তার কি অপরাধ? তার অপরাধ দেশের মানুষ তাকে ভালোবাসে এবং তিনি গণতন্ত্রকে ভালোবাসেন এবং গণতন্ত্রের কথা বলেন। কি অপরাধ, তিনি যতবার নির্বাচন করেছেন ততবারই নির্বাচিত হয়েছে।
এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে বিএনপিকে ধ্বংস করতে চায়। সেই কারণে তারা মনে করছে, বেগম জিয়াকে আটক করে রাখলে বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। এর আগে বেলা দেড়টা থেকেই ব্যানার এবং ফেস্টুন সহকারে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হন বিএনপি ও দলটির অঙ্গ-সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী। বিকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সমাবেশস্থলে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে লোকারণ্য হয়ে পড়ে নয়াপল্টন সড়কসহ আশপাশের এলাকা। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামরুজ্জামান রতন, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আফরোজা আব্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন : নিয়ে আওয়ামী লীগের আলোচনা-সমালোচনায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা