২০১০ ও ২০১৪ এশিয়ান গেমসের ফাইনালে উঠলেও স্বর্ণ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। দু’বারই পাকিস্তানের কাছে হেরে রৌপ্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় মেয়েদের। এবার সেই পাকিস্তানের সঙ্গে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে দেখা হয়ে যায় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের। সেখানে পাকিস্তানকে হারিয়ে হাংজু এশিয়ান গেমসে প্রথম পদকের দেখা পায় বাংলাদেশ। জিজিয়াং ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি মাঠে পাকিস্তানকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে ব্রোঞ্জ মেডেলটি নিশ্চিত করে জ্যোতি-মারুফারা। ভারতের কাছে হারের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই ব্রোঞ্জ জয়ে যেমন খুশি বাংলাদেশ, তেমনি সেমিফাইনালে জ্যোতির নেয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে আফসোসও আছে।
সেমিফাইনালের ভুল কাল আর করেননি নিগার সুলতানা জ্যোতি। টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান পাকিস্তানকে। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপক্ষে সুবিধা করতে পারেনি পাকিস্তানের ব্যাটাররা। পুরো কুড়ি ওভার ব্যাটিং করে স্কোর বোর্ডে মাত্র ৬৪ রান জড়ো করে গত দুই আসরের সোনা জয়ী দলটি। পাকিস্তানের এই স্কোর দেখেই গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে আফসোস করেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা।
তিনি বলেন, ‘কাল আমরা আগে বোলিং করলে রেজাল্ট অন্যরকম হতে পারতো।’ আইসিসি’র ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করা বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলও আফসোস করেন ভারত ম্যাচে জ্যোতির সিদ্ধান্ত নিয়ে। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বুলবুল বলেন, বাংলাদেশের মেয়েদের দলটা খুবই ভালো। বিশেষ করে বোলিংটা অসাধারণ। ভারতের বিপক্ষে এই উইকেটে টসে জিতে আগে বোলিং করলে ম্যাচটা অন্যরকম হতে পারতো।’ বাংলাদেশ অধিনায়কও যে আফসোসে পুড়ছেন সেটা তার কথাতেই স্পষ্ট। ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে জ্যোতি বলেন, ‘দেখুন আমরা গত দিনেই এটা (টসে জিতে ব্যাটিং নেয়া) ভুগেছি। যে এই উইকেটটা অনেক বেশি ট্রিকি এবং পাশাপাশি স্পিনও অনেক বেশি টার্ন করে। আমাদের টিমটা কিন্তু স্পিননির্ভর। সেক্ষেত্রে বলবো যে বোলাররা খুব ভালো করেছে। আমি যেটা বিশ্বাস করি, যেটা চলে গেছে সেটা শেষ। এটা নিয়ে চিন্তা করলে মনোবল ভাঙার সম্ভাবনাই বেশি। ফাইনালে খেলতে না পারার আফসোস তো আছেই।’ আগের ম্যাচে হারের যন্ত্রণা ভুলে মাঠে নেমে যেভাবে খেলেছে দল, তাতে খুশি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। নিগার বলেন, ‘প্রতিটি টিমই একটা টুর্নামেন্টে খেলতে আসে সর্বোচ্চ যে সম্মানটা সেটা নিয়ে যাওয়ার জন্য। গত ম্যাচে আমরা যে ভুলত্রুটি করেছিলাম, ওভার নাইটে সেটা ওভারকাম করার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। অবশ্যই কোনো কিছু না পাওয়ার চেয়ে বাংলাদেশের জন্য কিছু নিয়ে যাওয়াটা অনেক বেটার। ব্রোঞ্জ জিততে পেরে গর্বিত বোধ করছি।’
বাংলাদেশের পদক জয়ের ম্যাচে বড় ভূমিকা রেখেছেন বোলাররা। বিশেষ করে স্বর্ণা আক্তার ও সানজিদা আক্তার মেঘলা পাকিস্তানের লাগাম টেনে ধরেন। এরমধ্যে স্বর্ণা তিনটি, মেঘলা নেন দুই উইকেট। একটি করে উইকেট পান মারুফা, নাহিদা ও রাবেয়া। পাকিস্তানের আলিয়া রিয়াজ ১৭ ও অধিনায়ক নিদা দারের ব্যাট থেকে আসে ১৪ রান। তবে পাকিস্তানের ছুড়ে দেয়া ৬৫ রানের লক্ষ্যও খুব সহজ ছিল না বাংলাদেশের। শামীমা সুলতানা ও সাথী রানী ভালো শুরু এনে দিলেও ৩৪ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। পাঁচ উইকেটের পতন ঘটে ৪৩ রানে। তবে পঞ্চম উইকেটে স্বর্ণা আক্তার ও রিতু মনি ১৪ রান যোগ করে দলকে এগিয়ে দেন। যদিও নিদা দারের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ১৪ বলে সাত রান করা রিতু মনি। তবে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে স্বর্ণা আক্তার ও সুলতানা খাতুন উইকেটে থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। শেষ পর্যন্ত বল হাতে তিন উইকেট নেয়া স্বর্ণা ব্যাট হাতে অপরাজিত থাকেন ১৪ রানে। এশিয়ান গেমসে এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পঞ্চম পদক জয়। যা কাবাডির পর এশিয়াড থেকে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক জয়ী ডিসিপ্লিন।
আরো পড়ুন : নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পরা শ্রীলঙ্কা যেভাবে ঘুরে দাঁড়াল