জাবি প্রতিনিধি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ ব্যাচের আরমান খান যুব। ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ৬ বছর আগে। তবুও বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলে থাকেন রাজার হালে। চার সিটের ১২৬নং কক্ষে থাকেন একা। ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে রুমটিকে গড়ে তুলেছেন টর্চার সেল। তার টর্চার থেকে রেহাই পাচ্ছে না খোদ ছাত্রলীগের নেতারা। এবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসান ইমন হয়েছেন নির্যাতিত। ভুক্তভোগী জাহিদ জানান, মারধরের পর তার শরীরে মদ ঢেলে মাদকাসক্ত হিসেবে প্রমাণ করারও চেষ্টা করেছেন আরমান খান যুব। এ ছাড়া মারধরের ঘটনা কাউকে না জানাতে পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি প্রদান করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু নাহিয়ান খান জয়ের ছোটভাই এই যুব। বর্তমান জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জান সোহেলের আশ্রয়ে হলে থাকেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নিজের খেয়াল খুশিমতো চলেন এই যুব। নিজের মতের বিরুদ্ধে গেলেই হলের জিনিসপত্র ভাঙচুর চালান তিনি। রুমে প্রায়ই বহিরাগতকে এনে পেটায়। হল গেটের সিসিটিভি, কমনরুমের টিভি ও টেবিল টেনিস বোর্ড ভাঙচুরের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনায় গত ১৩ই আগস্ট সাভারের রেডিও কলোনির বউবাজার এলাকার ভাড়া বাসার মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হয় ইমনের। ওই ঘটনার জেরে ইমনকে ফোন দিয়ে আরমান খান যুবর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন বাড়ির মালিকের পূর্ব পরিচিত আরাফাত। তার পরিপ্রেক্ষিতে যুবর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, ইমনকে মওলানা ভাসানী হলের সামনে যেতে বলেন তিনি। রাত ১২টার দিকে ইমন সেখানে গেলে, যুব তাকে মোটরসাইকেল হলের ভেতরে রেখে ১২৬ নম্বর কক্ষে যেতে বলেন। এরপর কক্ষে ঢুকতেই ঘুষি মেরে ইমনের নাক ফাটিয়ে দেন যুব। যেন চিৎকার করতে না পারে, তাই ইমনের মুখ বেঁধে দেন আরাফাত। পরে যুব ও আরাফাত সহ সেখানে উপস্থিত অন্য অভিযুক্তরা ইমনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন। এ সময় ইমন তাদের কাছে কাকুতি-মিনতি করেও কোনো প্রতিকার পাননি।
তাকে একদফা মারধরের পর ইয়াবা সেবন করেন যুব। পরে আবারো ইমনের উপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করেন তারা। এ ছাড়া ইমনের শরীরে মদ ঢেলে উল্লাস করতে থাকেন যুব ও তার সহযোগীরা। এরপর রাত তিনটার দিকে ইমনকে হলের দ্বিতীয় তলার ২২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে আসতে বলেন তুষণ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে গালাগালি করেছেন বলে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেন। এমনকি সেটা মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেও রাখেন তুষণ। এরপর তাকে ফের ১২৬ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় মারধরের ঘটনা কাউকে না জানাতে ইমনের পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেন অভিযুক্তরা। কিছুক্ষণ পর আকতারুজ্জামান সোহেল ওই কক্ষে গিয়ে ইমনকে বাইরে বের করে নিয়ে আসেন। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলেও ইমনকে আশ্বাস দেন। এদিকে ঘটনার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে অবহিত করেন ইমন। তার পরিপ্রেক্ষিতে মারধরের ঘটনার বিষয়ে জানাতে ১৪ই আগস্ট সকালে প্রক্টরের বাসায় যান তিনি। তবে ইমন সেখানে গিয়ে দেখেন আকতারুজ্জামান সোহেল আগে থেকেই প্রক্টরের বাসায় অবস্থান করছেন। এ সময় ইমনকে মওলানা ভাসানী হলের অতিথি কক্ষে (গেস্টরুম) গিয়ে বসতে বলেন তিনি।
তখন ইমন প্রক্টরের ওপর ভরসা না পেয়ে তার বাসা থেকে চলে যান। এরপর তিনি মারধরের বিষয়টি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের জানান। অন্যদিকে আরমান খান যুবর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের সিন্ডিকেট ও মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে ‘টর্চার সেল’ পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সেখানে বহিরাগতদের নিয়ে নিয়মিত মাদক সেবন করেন যুব। এ ছাড়া মাদক ব্যবসায়ী ও বহিরাগত সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে টর্চার করেন তিনি। এর আগে, গত ১০ই সেপ্টেম্বর বহিরাগত এক যুবককে ১২৬ নম্বর কক্ষে এনে মারধর করেন যুব। তার মারধরের শিকার হয়ে ওই যুবক ‘অস্বাভাবিক’ আচরণ করতে থাকেন। এ বিষয়ে জাহিদ হাসান ইমন বলেন, ‘আমাকে মারধর পরবর্তী নানা ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের ওপর আমার ভরসা উঠে যায়।
পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেইনি। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের জানিয়েছি। তবুও বিচার না পেয়ে কয়েকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছি। কারণ ওই রাতের ঘটনায় আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে আরমান খান যুব ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হুসাইন মো. সায়েম বলেন, ‘হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে সাবেক শিক্ষার্থীরা থাকে, সে বিষয়টি আমি জানি। আমি এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে মারধরের ঘটনা সহ আমি কর্তৃপক্ষকে সার্বিক বিষয়ে জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে ফোন করলে, তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার তাকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আরো পড়ুন : যেভাবেই হোক কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চায় ইসি