‘আমি রেকর্ডের পেছনে ছুটি না, রেকর্ডই আমার পেছনে ছোটে’- গত জুনে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ২০০ ম্যাচ খেলে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তোলার আগে কথাগুলো বলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। অজস্র রেকর্ডের মালিক পর্তুগিজ সুপারস্টার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে এমন আরও ৭টি গিনেস রেকর্ড গড়েছেন।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে ২০০ ম্যাচ
গত ২০শে জুন ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইয়ে আইসল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারানোর ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ২০০তম ম্যাচটি খেলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ফুটবল ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ম্যাচ খেলার ডাবল সেঞ্চুরি করেন পর্তুগিজ সুপারস্টার। জাতীয় দলে অভিষেকের ১৯ বছর ৩০৪ দিন পর দুর্দান্ত এই অর্জনে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচ শেষে রোনালদোকে বিশ্বরেকর্ড গড়ার সনদ প্রদান করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষ। গত ১৪ই অক্টোবর সেøাভাকিয়ার বিপক্ষে ইউরো বাছাইয়ের ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ২০১তম ম্যাচটি খেলেন রোনালদো। পর্তুগিজ সুপারস্টারের এই কীর্তি ছুঁতে এখনো ২৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে হবে লিওনেল মেসিকে। ২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত ১৭৬টি ম্যাচ খেলেছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।
লা লিগার সফলতম ‘পেনাল্টি ট্যাকার’
২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদে খেলেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। লস ব্লাঙ্কোদের হয়ে স্প্যানিশ লা লিগাতেই উত্থান পর্তুগিজ সুপারস্টারের। রিয়ালের হয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সব সময়ই পেনাল্টি নিতেন ক্রিস্টিয়ানো। স্পটকিকে দারুণ দক্ষতার কারণে পেনাল্টির সঙ্গে মিলিয়ে রোনালদোকে ‘পেনালদো’ও সম্বোধন শুরু করে ভক্ত-সমর্থকরা।
যদিও একটা সময় পর শব্দটি ট্রোল করার জন্যই ব্যবহৃত হয়েছে। সে যাই হোক, লা লিগার দীর্ঘ ৯ বছরের ক্যারিয়ারে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে মোট ৭২টি পেনাল্টি নেন রোনালদো। এতে সফল হন ৬১ বার। লা লিগায় স্পটকিক থেকে এমন সফলতা নেই আর কারও। এই তালিকায় রোনালদোর পরই আছেন আরেক রিয়াল মাদ্রিদ লিজেন্ড হুগো সানচেজ। মেক্সিকোর সাবেক এই ফুটবলার লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পেনাল্টি থেকে ৫৬টি গোল করেছিলেন।
বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করা ‘বয়োজ্যেষ্ঠ’ ফুটবলার
২০১৮ আসর, রাশিয়া বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনেই মুখোমুখি হয় স্পেন ও পর্তুগাল। গ্রুপপর্বের টানটান উত্তেজনাপূর্ণ সেই ম্যাচে ৩-২ গোলে হারতে বসেছিল পর্তুগিজরা। কিন্তু ৮৮তম মিনিটে অবিশ্বাস্য ফ্রি-কিকে দলের হার এড়ান পর্তুগাল অধিনায়ক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ৩-৩ গোলে সেই ড্রয়ের ম্যাচে পর্তুগালের পক্ষে তিনটি গোলই করেন পাঁচটি ব্যালন ডি’অরের মালিক। হ্যাটট্রিক করে দুর্দান্ত একটি রেকর্ডও গড়েছিলেন রোনালদো। ৩৩ বছর ১৩০ দিন বয়সে বিশ্বকাপের মঞ্চে এক ম্যাচে তিনবার লক্ষ্যভেদ করা এই তারকা বনে যান ওয়ার্ল্ডকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সী হ্যাটট্রিক করা ফুটবলার।
চ্যাম্পিয়নস লীগে ‘একটানা’ গোলের রেকর্ড
২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮- টানা তিন বছর চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা জেতে রিয়াল মাদ্রিদ। রয়্যাল হোয়াইটদের একটানা ইউরোপ সেরা করে একটি রেকর্ড গড়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তিন মৌসুমে টানা ১১ ম্যাচে গোল করেছিলেন পর্তুগিজ সুপারস্টার। চ্যাম্পিয়নস লীগের ইতিহাসে প্রথম ফুটবলার হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিলেন রন। সেই তিন আসরে মোট ১২ গোল করেছিলেন তিনি।
উইকিপিডিয়াতে সর্বোচ্চ বার সার্চ দেয়া অ্যাথলেট
বিশ্বের অন্যতম সুপরিচিত অ্যাথলেট ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ফুটবলের বাইরেও সোশ্যাল মিডিয়ায়ও শুরু থেকেই সরব তিনি। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টুইটারে কোটি কোটি ফলোয়ার রোনালদোর। এ ছাড়া ‘বিশ্বকোষ’ খ্যাত অনলাইন প্ল্যাটফরম উইকিপিডিয়া সংশ্লিষ্ট সমৃদ্ধতাও রয়েছে তার। অলাভজনক এই প্ল্যাটফরমটিতে সর্বোচ্চ সার্চ করা পুরুষ অ্যাথলেট রোনালদো।
ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় এক সিজনে সর্বোচ্চ গোল
চলতি বছরের শুরুতে আল নাসর এফসিতে যোগ দেয়ার আগে দীর্ঘ ২০ বছর ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে খেলেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। স্পোর্তিং লিসবনের হয়ে শুরু করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ইউরোপ অধ্যায় শেষ করেন এই তারকা। এর মাঝে ২০১৩-১৪ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগে এক সিজনে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার কীর্তি দেখান তিনি। সেবার ১১ ম্যাচে ১৭ গোল করেছিলেন রোনালদো।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোল
২০০৩ সালের ২০শে আগস্ট কাজাখস্তানের বিপক্ষে পর্তুগালের জার্সিতে প্রথম ম্যাচটি খেলেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গত ২০শে জুন আইসল্যান্ডের বিপক্ষে পর্তুগালের হয়ে নিজের ২০০তম ম্যাচে ১২৩তম গোল করেছিলেন তিনি। যা আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। রোনালদো অবশ্য অনেক আগেই এই রেকর্ডের মালিক হয়েছেন। সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় পর্তুগিজ সুপারস্টারের পেছনে রয়েছেন ইরানি লেজেন্ড আলি দাঈ। ১৯৯৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ১৪৮ ম্যাচে ১০৯ গোল করেছিলেন তিনি। তালিকার তিন নম্বরে লিওনেল মেসি। ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ১০৪টি গোল করেছেন তিনি। অর্থাৎ, আলি দাঈকে পেছনে ফেলে তালিকার দুইয়ে উঠতে আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের প্রয়োজন মাত্র ৬টি গোল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বোচ্চ ফলোয়ার
২০১৬ সাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সর্বোচ্চ ফলোয়ারের মালিক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রধান তিন প্ল্যাটফরম- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটার মিলিয়ে পর্তুগিজ সুপারস্টারের অনুসারীদের সংখ্যা ৮৭৯ মিলিয়ন। রোনালদোর ফলোয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইনস্টাগ্রামে, ৬০৪ মিলিয়ন। ফেসবুকে ১৬৬ মিলিয়ন মানুষ রোনালদোকে ফলো করেন। আর এক্সে (টুইটারের নতুন নাম) ক্রিস্টিয়ানোর অনুসারী সংখ্যা ১০৯ মিলিয়ন। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিওনেল মেসির মোট অনুসারী সংখ্যা ৬০১ মিলিয়ন। তার মধ্যে ১১৫ মিলিয়ন ফেসবুকে এবং ৪৮৬ মিলিয়ন ইনস্টাগ্রামে। মেসির কোনো এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্ট নেই।
আরো পড়ুন : ভাইয়ের ক্ষমতায় ছাত্রত্ব না থাকলেও জাবির টর্চার সেলে ছাত্রলীগ নেতাকে চরম নির্যাতন