স্টাফ রিপোর্টার : চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ফের কারাগারে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাজা স্থগিত করে আমি তাকে (খালেদা জিয়া) বাড়িতে থাকার যে অনুমতি দিয়েছি, সেটা আমাকে প্রত্যাহার করতে হবে। তাকে আবার কারাগারে যেতে হবে। তারপর আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে। আদালত যদি রায় দেন তখন তিনি যেতে পারবেন, এটা হলো বাস্তবতা। এ সময় সরকার প্রধান প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে কি সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর নজির আছে? পৃথিবীর কোনো দেশ এ সুযোগ দেবে? তাদের যদি বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ নিতে হয় তাহলে অবশ্যই আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আদালতের কাজের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনো অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে আমার যতটুকু ক্ষমতা, তাতে সাজাটা স্থগিত করে উনাকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিয়েছি। এখন তিনি নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বাংলাদেশের সব থেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত বুধবার ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকারে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়ে সরকারের অবস্থান খোলাসা করেন। বলেন, বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ সময় সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাংবাদিক বলেন, আপনি তো বলেছেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু সংবিধান সংশোধন করার জন্য সংসদে তো আপনার প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। আপনি কি সংবিধান পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ নেবেন? এ নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা করবেন? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় তারা (বিএনপি) এর (সিজি) বিরোধিতা করতো, এখন তারা দাবি করছে, কিন্তু ভবিষ্যতে তারা কী করবে তা নিশ্চিত নয়। তাছাড়া বিএনপি এই ব্যবস্থাটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা হাইকোর্টের বিচারকদের বয়স বাড়ানো, ১.২৩ কোটি ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ ইচ্ছেমতো সরকার বসানোর জন্য নানা ধরনের অপকর্ম করেছে। কোনোটাতেই কাজ হয়নি, কারণ জনগণ তা মেনে নেয়নি।’ এখন ভোটের অধিকার জনগণের হাতে এমন মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, কাজেই নির্বাচিত সরকারই নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করবে। জনগণ যাদের ভোট দেবে তারাই সরকার গঠন করবে। এখন আর তত্ত্বাবধায়কে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ আমাদের সংবিধান জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষিত করে। নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে একটি নির্বাচিত সরকার (ক্ষমতায়) আসবে, এটাই হবে। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়েও কথা বলেন সরকারপ্রধান। বলেন, হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই তারা আমাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে চাচ্ছে কী কারণে? আর মানবাধিকার বা ভোটাধিকারের কথা যদি বলে, তাহলে আমরাই আওয়ামী লীগ তো বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমাদের কতো লোক রক্ত দিয়েছে এই ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয়, তার জন্য যত রকমের সংস্কার, সেটা আমরাই তো করেছি। ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা- সবইতো আমরা করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেব’- এই স্লোগান তো আমার দেয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। আমাদের দেশে বেশির ভাগ সময় মিলিটারি ডিক্টেটর শাসন করেছে। তখন তো মানুষের ভোট দেয়া লাগেনি। তারা ভোটের বাক্স নিয়ে গিয়ে শুধু রেজাল্ট ঘোষণা দিয়েছে। এরই প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। সেটা আমরা করেছি। সেই ক্ষেত্রে হঠাৎ এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না।
র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সেটা র্যাব হোক, পুলিশ বা যেটাই হোক, কেউ যদি কোনো রকম অন্যায় করে তাদের বিচার হয়। এই বিচারে কিন্তু কেউ রেহাই পায় না। অনেক সময় কোনো কাজ তারা অতিরিক্ত করে, করতে পারে। তখন আমাদের দেশের আইনেই সেটার বিচার হয়, হচ্ছে। যেখানে এমন বিচার হচ্ছে, ব্যবস্থা আছে, সেখানে এই নিষেধাজ্ঞা কী কারণে? এ সময় শেখ হাসিনা দাবি করেন ২০০৯ সালের পর থেকে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন-প্রতিটি সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। তিনি বলেন, এসব নির্বাচনে মানুষ তার ভোট দিয়েছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এই নির্বাচনগুলো নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাস্তবতাটা কী, বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার নিয়ে সব সময় সচেতন। কেউ ভোট চুরি করলে তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেয় না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের উদাহরণ টানেন। বলেন, খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিলেন, দেড় মাসও টিকতে পারেননি। ১৯৯৬ সালের ৩০শে মার্চ জনগণের রুদ্ররোষে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন তিনি। আবার ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল। সেই ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করে তিনি যখন সরকার গঠনের ঘোষণা দিলেন…এরপর ইমার্জেন্সি (জরুরি অবস্থা) জারি করা হলো। সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে গেল। কাজেই আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু বরাবরই ভোট সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল, বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এখন আর বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নেই, এখন মানুষের সে রকম হাহাকার নেই, এমনকি আমাদের যে বেকারত্ব, সেটাও কিন্তু কমে এখন মাত্র ৩ শতাংশ। সেটাও তারা ইচ্ছা করলে কাজ করে খেতে পারে। তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, ওয়াইফাই কানেকশন সারা বাংলাদেশে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়ন আমরা করে দিয়েছি; মানুষ যেন কাজ করে খেতে পারে। আমাদের বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং আমরা এগুলোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। এভাবে দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে এভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেয়া…। তো ঠিক আছে, নিষেধাজ্ঞা দিলে আমেরিকায় আসতে পারবে না, আসবে না। না আসলে কী আসে যায়? আমাদের দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। কাজেই আমরা দেখি, কী করে তারা। কেন তাদের এই নিষেধাজ্ঞা জারি।
আরো পড়ুন : যে সব কারণে রিজার্ভের পতন থামছে না