ক্যান্টনমেন্টে ঢুকার কারণে যেদিন মামলা হয়েছিল সেদিনের প্রতিজ্ঞায়ই ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করেদিয়েছিল খালেদা জিয়াকে
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিল বলেই তো এই ক্যান্টনমেন্ট। আমি এই ক্যান্টনমেন্টে ঢুকলে আমার বিরুদ্ধে মামলা! সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ওই ক্যান্টনমেন্টে আর বসবাস করা লাগবে না। যেদিন সময় পাবো এই ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে দেবো। যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় গত সোমবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
এ সময় খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর কোন দেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় বলতে পারেন? কোনো দেশ পাঠায়? তারা এটা দাবি করে। আমাদের কেউ কেউ আতেল আছে। তারা বলে, একটু কি সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সে এভারকেয়ার, বাংলাদেশের সব থেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়স তো ৮০’র উপরে। সময় হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ।
এখানে এত কান্নাকাটি করে লাভ নাই। স্যাংশনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আপনাদেরও বলবো, স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। বেশি স্যাংশন দিলে আমরাও দিতে পারি, আমরাও দিয়ে দেবো।
ক্যান্টনমেন্টের ঘটনার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্যান্টনমেন্টে আমি ঢুকবো, সে সময় কয়েকজনকে আহত করা হয়েছে। আমাকে ঢুকতে দেবে না। গেট আটকালো। তখন আমি বিরোধীদলীয় নেতা। আমার পতাকাবাহী গাড়ি আটকালো। আমি গাড়ি থেকে নামলাম, নেমেই হাঁটা শুরু করলাম। আমি যখন হাঁটতে শুরু করেছি তখন অনেক লোক জমা হয়ে গেছে। চার কিলোমিটার হেঁটে আমি সিএমএইচ’এ গেলাম। সিএমএইচ’র গেট বন্ধ আমাকে ঢুকতে দেবে না। আমাকে ঢুকতে দেয়নি। ক্যান্টনমেন্টের রাস্তায় হাঁটলাম কেন- আমার সঙ্গে যারা ছিল ওবায়দুল কাদের, বেবি মওদুদসহ সবার বিরুদ্ধে মামলা দিলো। আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিল বলেই না এই ক্যান্টনমেন্ট, আর মেজর জিয়া। আরে এই মেজর পদোন্নতিটাও তো আমার বাপেরই দেয়া। আর আমি ক্যান্টনমেন্টে ঢুকলে আমার বিরুদ্ধে মামলা। সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ওই ক্যান্টনমেন্টে আর বসবাস করা লাগবে না। যেদিন সময় পাবো বের করে দেবো। বের করে দিছি। তিনি বলেন, আমি শুধু বললাম- আজকে আমাকে ঢুকতে দাও না, যখন জিয়াউর রহমান ঘরে তুলতে চায়নি তখন প্রতিদিন তো আমাদের বাসায় যেয়ে কান্নাকাটি করতা। আমার বাবার বদৌলতে তুমি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে পেরেছো। না হলে বহু আগেই জিয়া ছেড়ে দিয়েছিল। জিয়ার আবার নতুন গার্লফ্রেন্ডও ছিল। তাকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তার সংসারটা রক্ষা করে দিয়েছিল আমার বাবা। আমাদের বাসায় গিয়ে তো মোড়া পেতে বসে থাকতো।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তার ছেলে কোকো মারা গেছে। সে যখন আমার বাবা-মা, ভাই-বোনের মৃত্যু দিবসে উৎসব করে, কিন্তু আমি তো মানুষ, আমি তো একজন মা। আমি ভাবলাম আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সব মানুষের ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার। সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি যাবো খালেদা জিয়াকে সহানুভূতি দেখাবো। আমার তরফ থেকে মিলিটারি সেক্রেটারি যোগাযোগ করলো। সময় ঠিক হলো। যেই গুলশানে গেছি। আমার মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে তালা মেরে দিলো, আমাকে ঢুকতে দিলো না। কতো বড় অপমান আপনারা চিন্তা করেন। আজকে অন্য কোনো প্রধানমন্ত্রী হলে কী করতো? কী করতো আপনারা চিন্তা করেন। তিনি বলেন, আমি কিচ্ছু বলি নাই। আমার বলার কিছু নাই। আমি দেখতে পাচ্ছি ভেতরে তাদের সব নেতা। আমি দেখতে পাচ্ছি গেটে তালা, কিছু করার নেই তাদের। আমি তারপরও আজকে তাকে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার কন্যা হিসেবে নিরাপত্তার একটা আইন করা হয়েছিল। সেই আইনের বলে রেহানাকে ধানমণ্ডির ৬ নম্বর রোডে ছোট্ট একটা বাড়ি দেয়া হয়েছিল। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেই সেই বাড়িটা দখল করলো। আমাদের যারা ছিল ওদের বের করে দিলো। বের করে দিয়ে ওটাকে পুলিশের ফাঁড়ি করা হলো। একজন প্রধানমন্ত্রী গেল পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করতে, লাল টুকটুকে শাড়ি পরে। যখন সে এই পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করলো তখনও সেই বাড়ি রেহানার নামে রেজিস্ট্রি করা। আপনারা জানেন রেহানা ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলে। পুলিশ ফাঁড়ি যখন করেছে সে বলে ঠিক আছে ওটা পুলিশকেই দিয়ে দিলাম। সে আর ওই বাড়ি নেয় নাই।
এ সময় সরকারপ্রধান আন্দোলনের নামে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে অগ্নিসংযোগ এবং অমানবিক নৃশংসতার মতো ২০১৩-১৪ সালের ঘটনা ঘটলে আর কোনো সহনশীলতা দেখানো হবে না বলেও জানান। বলেন, আন্দোলনের নামে নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসবাদ বা একইভাবে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা বা হামলার ঘটনা ঘটলে রেহাই দেয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সন্ত্রাসবাদে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা এবং দেশের সম্পত্তি নষ্ট করা তাদের আন্দোলন। এর আগে ২৯ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জীবন নিয়ে এমন কোনো চেষ্টা করা হলে কোনো ক্ষমা করা হবে না। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপি’র পক্ষে শোভা পায় না। কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোঁকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছে। দেশের জনগণ কখনই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, বিএনপি-জামায়াত জোট ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছে এবং সেই তালিকা দিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছে। উল্টো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করেছে।
একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য সমস্ত সংস্কার করেছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বক্স চালু করেছি এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করেছি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান। বলেন, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পটভূমিতে, অনুমোদন এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে খাদ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে এক ইঞ্চি জমি ছেড়ে দেবেন না। প্রতি ইঞ্চি জমি ব্যবহার করে আপনি যা পারেন তা উৎপাদন করেন। বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল ও ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত করেছি এবং এখন ২০৪১ সালের মধ্যে এটিকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক প্রমুখ।
আরো পড়ুন : তফসিল ঘিরেই টার্গেট বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর