চিন্তা ও গবেষণার কারণে ঈমান বৃদ্ধি পায়

ওকে নিউজ স্পেশাল জাতীয় ধর্ম প্রচ্ছদ বিনোদন মুক্তমত লাইফ স্টাইল শিক্ষা হ্যালোআড্ডা

জাওয়াদ তাহের : মানুষকে আল্লাহ তাআলা শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। অন্য প্রাণীর চেয়ে মানুষের মধ্যে আল্লাহ তাআলা বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। যার ফলে সে অন্যান্য প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা লাভ করেছে। মানুষকে আল্লাহ তাআলা বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন, দিয়েছেন চিন্তা করার শক্তি। তাকে কথা বলা ও শোনার শক্তি দিয়েছেন, দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন এবং কৌশল অবলম্বন করা ও তীক্ষ বুদ্ধি দিয়েছেন। মানুষ তার বিবেক বুদ্ধি দিয়ে, মেধা খাটিয়ে নানা কিছু উদ্ভাবন করছে। এটি আল্লাহ তাআলার অপার দান।

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তার কথা বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী!) তাদের বলো, লক্ষ করে দেখ, আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে কী কী জিনিস আছে? কিন্তু যেসব লোক ঈমান আনার নয়, (আসমান ও জমিনে বিরাজমান) নিদর্শনাবলি ও সতর্ককারী (নবী) তাদের কোনো কাজে আসে না।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১০১)

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন, তাতে পাহাড় ও নদ-নদী সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে প্রত্যেক প্রকার ফল জোড়ায়-জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। তিনি দিনকে রাতের চাদরে আবৃত করেন। নিশ্চয়ই এসব বিষয়ের মধ্যে সেই সব লোকের জন্য নিদর্শন আছে, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।
’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ৩)

চিন্তা-ভাবনায় ঈমান বৃদ্ধি পায়

আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে মানুষ যখন চিন্তা-ভাবনা করে তখন তার ভেতরে পরিবর্তন আসে, জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি হয়। মানুষ যখন তার নিজের সৃষ্টি নিয়েই চিন্তা করবে, তখনই তার জন্য সঠিক পথে চলা সহজ হবে। এই চিন্তা-ভাবনা তাকে সত্য পথে চলতে সহায়তা করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব, মানুষের দেখা উচিত কী বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে। সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে।
এটা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে।’ (সুরা : আত-তারিক, আয়াত : ৫-৭)

কোরআন নাজিল হয়েছে চিন্তা-ভাবনার জন্য

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জিনিসকে বিভিন্নভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। মানুষ যেন এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে যেন মানুষ উপলব্ধি করতে পারে। মানুষ যখন কোরআন পড়বে, কোরআন বুঝবে, কোরআন অনুযায়ী আমল করবে, তখন শয়তান মানুষকে সহজেই বিভ্রান্ত করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে রাসুল!) এটি এক বরকতময় কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতের মধ্যে চিন্তা করে এবং যাতে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা : সাদ, আয়াত : ২৯)

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরআনের একটি আয়াত নিয়ে চিন্তা করতে করতে সারা রাত কাটিয়ে দিয়েছেন। আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ভোর পর্যন্ত একটি আয়াত দিয়েই নামাজ আদায় করলেন। আর সে আয়াতখানা হলো, অর্থ : ‘আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর আপনি যদি তাদের ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১১৮) (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১০১০)

আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা

মানুষ যখন আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করবে তখন তার মাঝে আল্লাহর বড়ত্ব ও আল্লাহর অসীম ক্ষমতা বুঝতে পারবে। বিশাল ও সুগভীর সমুদ্রজগৎ, মাটিতে গচ্ছিত বিভিন্ন খনিজসম্পদ, সুউচ্চ পর্বতমালা—এমন সব আল্লাহর সৃষ্টি জীব নিয়ে চিন্তা করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে কি তারা লক্ষ করে না উটের প্রতি, কিভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং আকাশের প্রতি, কিভাবে তাকে উঁচু করা হয়েছে? এবং পাহাড়ের প্রতি, কিভাবে তাকে প্রোথিত করা হয়েছে? এবং ভূমির প্রতি, কিভাবে তা বিছানো হয়েছে? সুতরাং তুমি উপদেশ দিতে থাকো, তুমি তো একজন উপদেশদাতাই।’ (সুরা : গাশিয়া, আয়াত : ১৭-২১)

পরকাল নিয়ে চিন্তা

মরণের পর কী হবে, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন কবর, হাশর, পুনরুত্থান, পুলসিরাত, আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান—এসব বিষয় নিয়ে যখন মানুষ চিন্তা-ভাবনা করবে তখন তা মানুষকে আল্লাহর পথে ফিরে আসতে সাহায্য করবে।

চিন্তা না করলে নিন্দা

যারা চিন্তা-ভাবনা করে না তাদের জন্য ভর্ত্সনা, তিরস্কার, নিন্দা ও ধমক এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি কোরআন সম্পর্কে চিন্তা করে না, নাকি অন্তরে লেগে আছে তার (সংশ্লিষ্ট) তালা? (সুরা : মুহাম্মাদ, আয়াত : ২৪)

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার প্রকাশ করে, তাদের আমি আমার নিদর্শনাবলি থেকে বিমুখ করে রাখব। তারা সব রকমের নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনবে না। তারা যদি হিদায়াতের সরল পথ দেখতে পায়, তবে তাকে নিজের পথ হিসেবে গ্রহণ করবে না, আর যদি গোমরাহির পথ দেখতে পায়, তাকে নিজের পথ বানাবে। কারণ তারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তা থেকে বিলকুল গাফিল হয়ে গেছে।’ (সুরা : আল-আরাফ, আয়াত : ১৪৬)

যেসব চিন্তা-ভাবনা নিষিদ্ধ

আল্লাহর সত্তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা নিষেধ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর নিয়ামতরাজি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা কর, তবে আল্লাহ তাআলার সত্তাকে নিয়ে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করো না।’ (তাবারানি, হাদিস : ৬৩১৯)

মানুষ যদি আল্লাহ তালাকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে মানুষ এর কূলকিনারা খুঁজে পাবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা মানুষের চিন্তা-ভাবনা থেকে বহু গুণে অনেক অনেক ঊর্ধ্বে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর (আল্লাহর) মতো কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা এবং তিনি সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ১১)

আরো পড়ুন : আজ ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *