সিলেট অফিস: ভারি বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর বেশিরভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়ক, বাসাবাড়ি, দোকান পাট সব পানিতে একাকার। পানি ঢুকে পড়েছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও।
তিন দিন ধরে সিলেটে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার থেকে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। শুক্রবার রাত থেকেই পানি ঢুকতে শুরু করে নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে। শনিবার সকালের মধ্যে তলিয়ে যায় নগরীর বেশিরভাগ এলাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর শাহজালাল উপশহর, শিবগঞ্জ, সোনার পাড়া, এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কাজলশাহ, দরগামহল্লা, কালীঘাট, বাগবাড়ি, কানিশাইল, লামাপাড়া, লালা দিঘিরপাড়, মাছুদিঘিরপাড়, বাদামবাগিছা, শাহপরান, কুয়ারপাড়, সোবহানীঘাট, যতরপুর, মাছিমপুর, কামালগড় ও দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনসহ সিলেট নগরীর বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে বাসাবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে।
পানিতে নিচতলা তলিয়ে গেছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। এতে ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম। এই হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান এসোসিয়েট প্রফেসর নুরুল হুদা নাঈম বলেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢুকে মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও দামি আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। হাসপাতালের সামনের সড়কও পানির নিচে। হাঁটু পানি ভেঙ্গেই ডাক্তাররা ডিউটিতে এসেছেন। একই অবস্থা মেডিকেল কলেজের সকল ছাত্রাবাসের। সকাল থেকেই পানি নিষ্কাশন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও বলেন, টানা বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায় ওসমানী হাসপাতাল সহ নগরীর অধিকাংশ এলাকা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী, ব্যাহত হয় চিকিৎসাসেবা। এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে পানি নিষ্কাশনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, সিটি করপোরেশন ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।
এদিকে, শনিবার ভোরে নিজ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। তার নিজের বাসাও জলমগ্ন। ভিডিওতে দেখা যায়- ফরহাদ চৌধুরীর বাসার নিচ তলায় পানি থৈ থৈ করছে। আসবাবপত্র অর্ধেক ডুবে আছে পানিতে।
কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মহানগরের ছড়া, নালা ও খালগুলো যথাসময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হলেও আমাদেরকে ফের জলাবদ্ধতার শিকার হতে হয়েছে। সুরমা নদী খনন না করলে এ ভোগান্তি থেকে আর রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়।
উপশহর এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, রাতেই বাসায় পানি ঢুকেছে। এ নিয়ে চলতি বছরে দু’বার ঘরে পানি ঢুকলো। দুর্ভোগের তো শেষ নেই, নষ্ট হয়েছে মূল্যবান জিনিসপত্র।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সোনারপাড়ার বাসিন্দা জাবেদ আহমদ বলেন, জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসনে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ফলে বার বার নগরবাসীকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো সজিব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ৩৫৭.৮ মিলিমিটার। এছাড়া শনিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১০২ মিলিমিটার এবং ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত ৪.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, একটানা ভারি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি কমলে পানি নেমে যাবে। ড্রেন নালা পরিষ্কার রাখতে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে।
কাওছার আহমদ