স্টাফ রিপোর্টার : সরকার পতনের একদফা দাবিতে একদিন হরতাল ও ৪ দফায় ৯ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিরোধী জোট। মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে ফের ‘৪৮ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধ’ ডেকেছে বিএনপি। গতকাল বিকালে ভার্চ্যুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াত ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটগুলো। এদিকে চলমান আন্দোলন দমাতে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের পর এবার শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অভিযান চালানো হচ্ছে নেতাদের বাসায়।
নেতাদের মাঠে থাকার নির্দেশনা: এদিকে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মাঠে থেকে কর্মসূচি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির হাইকমান্ড। গ্রেপ্তার এড়িয়ে রাজপথে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলার নেতাদের আরও কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি’র মধ্যম সারি ও মাঠের নেতাদের ওপর আস্থা রাখছে দলটির হাইকমান্ড।
এসব নেতাদের নানা নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এতে চতুর্থ ধাপের ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচিতে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের সংখ্যা ছিল বেশি। এ বিষয়ে বিএনপি’র সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল মানবজমিনকে বলেন, সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছে- এবার যদি এই সরকারকে সরানো না যায় তাহলে দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। তাই যেকোনো মূল্যে চলমান আন্দোলনকে একটা যৌক্তিক পরিণতিতে না নেয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে। রাজপথের আন্দোলনেই সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।
চতুর্থ দফার অবরোধেও বিচ্ছিন্ন ঢাকা: বিরোধী জোটের চতুর্থ দফায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের শেষদিনেও সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল রাজধানী ঢাকা। মহাসড়কে চলেনি কোনো দূরপাল্লার বাস। যাত্রীশূন্য ছিল বাস টার্মিনালগুলো। গতকাল রাজধানীর মহাখালী, গাবতলী বাস টার্মিনালে এই চিত্র দেখা গেছে। এ ছাড়া অবরোধের ২ দিনে ১৪টি গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এদিকে অবরোধের সমর্থনে গতকালও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক-মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এ সময় তারা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেছে জামায়াত, এলডিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। বিরোধী জোটের অবরোধের কারণে সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল রাজধানী ঢাকা। চলাচল করেনি দূরপাল্লার বাস। আতঙ্কে রাজধানীতে যান চলাচল ছিল কম। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। যাত্রীর অভাবে লঞ্চ চলাচলও সংখ্যায় কম ছিল। এদিকে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮০ জন বিএনপি’র নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আহত হয়েছে ৫০ জন এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৬টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৭০০ জনকে। অবরোধে অপ্রীতিকার ঘটনা এড়াতে সারা দেশে মোট ১৫২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও তার আশপাশের জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে ২৭ প্লাটুন। ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে অতিরিক্ত নিরাপত্তায় ১৩ পয়েন্টে আনসার বসিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ১২ই নভেম্বর সকাল থেকে ১৩ই নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ১৪টি গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। ঢাকা সিটিতে ৮টি, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, ফরিদপুরে ৩টি, বরিশাল সদরে ১টি, নাটোরে ১টি, দিনাজপুরে ১টি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১১টি বাস, ১টি ট্রাক, ১টি নছিমন পুড়ে যায়।
আরো পড়ুন : সাইপ্রাসকে নিরাপদ ভেবে ইসরায়েল ছাড়ছেন অনেক ইহুদি: দ্য গার্ডিয়ান