ক্যামেরুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী করার মধ্যদিয়ে বৃটেনের রাজনীতিতে তিনটি নজিরবিহীন ঘটনা

আইন-আদালত আন্তর্জাতিক ইতিহাস-ঐতিহ্য জনপ্রতিনিধি পুরুষ প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

বড় ধরনের রদবদল হয়েছে বৃটেনের মন্ত্রিসভায়। বরখাস্ত করা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানকে। অপরদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে। আর এর মধ্যদিয়ে তিনটি নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম হয়েছে। প্রথমেই আছে, এর আগে কখনই বৃটেনের কোন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে ডেভিড ক্যামেরনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করার মধ্যদিয়ে সেই নজির স্থাপিত হলো। দ্বিতীয়ত, এমপি নন এমন ব্যক্তিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়ার ঘটনা এর আগে কখনো দেখা যায়নি দেশটিতে। ডেভিড ক্যামেরন কোনো এমপি নন, তারপরেও তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো।

তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, বৃটিশ রাজনীতিতে সাধারণত উচ্চতম পদ থেকে এভাবে তুলনামূলক নিচের পদে রাজনীতিবিদদের যেতে দেখা যায় না। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী বা স্পিকারদের জন্য এমন ঘটনার কোনো নজির এতদিন ছিল না। তবে বাংলাদেশে এমন ঘটনার একাধিক উদাহরণ পাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে স্পিকার হয়েও শেখ রাজ্জাক আলী লন্ডনে হাইকমিশনার হয়েছিলেন, উপ-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হয়েও মওদুদ আহমদ পরে আইনমন্ত্রী হয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি হয়েও মোহাম্মদউল্লাহ পরে ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী হয়েছিলেন এবং আবু সাঈদ চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হয়েও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

বৃটিশ গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মূলত লন্ডন পুলিশের সমালোচনা করায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানকে বৃটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। লন্ডনে ফিলিস্তিনবিরোধী মিছিল সামলাতে গিয়ে লন্ডন পুলিশ দ্বিচারিতা করছে বলে অভিযোগ এনেছিলেন ব্র্যাভারম্যান। দেশটির নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে জেমস ক্লেভারলিকে। নতুন দায়িত্ব পেয়ে ক্লেভারলি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ায় আমি সম্মানিত বোধ করছি। লক্ষ্যটা পরিষ্কার। আমার কাজ হলো দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখা।

এতদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। সেই পদে অর্থাৎ বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে। এর আগে কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতা ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘসময় বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিনি।

স্কাই নিউজ জানিয়েছে, অভিবাসন, পুলিশের আচরণ এবং গৃহহীনদের নিয়ে ব্র্যাভারমেনের অবস্থান নিয়ে তার দলের মধ্যেও অসন্তোষ ছিল। তার পিতা-মাতা কেনিয়া ও মরিশাসের ছিলেন। এমন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে এসেও তিনি ব্রেক্সিট ও অভিবাসন বিরোধী এবং ‘এন্টি-ওক’ রাজনীতিকে বেছে নেন।

কয়েকদিন আগে ফিলিস্তিনের সমর্থনে লন্ডনে একটি বিশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে প্রায় তিন লাখের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হয়েছিল ওই বিক্ষোভ থেকে। আর ঠিক সে সময়ই পাল্টা মিছিলের পরিকল্পনা করেছিল দেশটির উগ্র ডানপন্থি দলগুলোর একাধিক সদস্য। এটা আঁচ করে উগ্র ডানপন্থিদের শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়াদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছিল লন্ডন পুলিশ।

কিন্তু পুলিশের এই ভূমিকার কড়া নিন্দা জানান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান। সেই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ এনেছেন তিনি। উগ্র ডানপন্থি সমর্থকদের গ্রেপ্তারকে তিনি যে অনুমোদন করছেন না, তা স্পষ্টত বুঝিয়ে দেন। এরপরই তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। এ ছাড়া সে সময় তিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে হওয়া বিক্ষোভ থামাতেও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে ব্র্যাভারম্যানের অবস্থান নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। সেই সঙ্গে উগ্র ডানপন্থিদের বিক্ষোভকারীদের লন্ডনের রাস্তায় নামতে তিনি উৎসাহিত করেছেন বলেও দাবি ওঠে। সম্প্রতি টাইমস পত্রিকার এক নিবন্ধে ব্র্যাভারম্যান বলেন, বৃটিশ পুলিশ ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী এবং অতি-ডানপন্থিদের চেয়ে বেশি সুবিধাজনক আচরণ করছে। এর পরপরই এ নিয়ে বৃটিশ পার্লামেন্টে বিতর্ক শুরু হয়। নানা মহলের সমালোচনার মুখে বিপাকে পড়ে সুনাক সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবিতে চাপ বাড়তে থাকে।

৪৩ বছর বয়সী ব্র্যাভারম্যান ঋষি সুনাকের মন্ত্রিসভার অন্যতম সিনিয়র ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু ঋষি সুনাকের ‘কর্তৃত্বকে অস্বীকার’ করায় তাকে শাস্তি পেতে হলো। বরখাস্ত হওয়ার পর ব্র্যাভারমেন বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সুযোগ। যথাসময়ে আমার আরও কিছু বলার আছে।

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ডেভিড ক্যামেরনকে নিয়োগ দিয়ে আরও এক চমক সৃষ্টি করেছেন ঋষি সুনাক। ক্যামেরন নিজেই তার নিয়োগের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে আমাকে আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আমি তা সানন্দে গ্রহণ করেছি।

ক্যামেরন যখন বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন, তখন বিশ্ব গত কয়েক দশকের মধ্যে সব থেকে উত্তেজনাকর সময় পার করছে। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রায় সমান সমান জনমত দেখা যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সে দেশগুলোর রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতেও।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে ক্যামেরন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্য সংকটসহ নানা ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। বিশ্বজুড়ে বড় এই পরিবর্তনের সময়ে মিত্রদের পাশে দাঁড়ানো, অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করা এবং আমাদের মতামতগুলো সবার কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করা আমাদের দেশের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আরো পড়ুন: মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে ফের ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *