তফশিল ঘোষণার পর এবার ভোটগ্রহণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ নির্বিঘ্ন করতে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার তিনটি চিঠি ও দুটি পরিপত্র এবং একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে। ছয় চিঠি, পরিপত্র ও নোটিশে দেওয়া হয়েছে নানা নির্দেশনা।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, রাজনৈতিক দল, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহলে এসব নির্দেশনা পাঠানো হয়। এবার প্রথমবারের মতো তিনশ আসনের জন্য পৃথক নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে ইসি। এসব কমিটি নির্বাচনি অপরাধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করবে। ইসির অনুমোদন ছাড়া প্রশাসন ও পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা বদলি না করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগাম প্রচারসামগ্রী সাঁটিয়েছেন সেগুলো অপসারণের উদ্যোগ নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাঠপর্যায়ে পাঠানো নির্র্বাচনিসামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসির কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। প্রচার শুরু ১৮ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি। তফশিল ঘোষণার পরই বুধবার রাতেই রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিশন। বৃহস্পতিবার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে। ওই পরিপত্রেই পুলিশ ও প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার ১৫ দিন পর্যন্ত বদলির বিধান জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং তাদের অধীন কর্মকর্তাদের বদলির বিষয়টি এর আওতায় পড়বে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনারসহ তাদের অধস্তনদের বদলির ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে। তিনি বলেন, সুতরাং প্রশাসন ও পুলিশ কমিশনের আওতায় চলে আসবে, অধীনে চলে আসবে আইনে এভাবে বলা নেই। বলা আছে তাদের বদলি করতে কমিশনের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে।
পদত্যাগ করতে হবে চেয়ারম্যান ও মেয়রদের : ইসি সূত্র জানায়, লাভজনক পদে যারা আছেন তারা প্রার্থী হতে হলে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। অর্থাৎ উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়ররা নির্বাচন করতে চাইলে তাদের পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচনে অনেক স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি সংসদ-সদস্য পদে প্রার্থী হয়ে থাকেন। তাদের পদত্যাগ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়। এবার মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাই কার্যক্রমে এসব জটিলতা যাতে না হয় সেজন্য স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা কার কাছে পদত্যাগ করবেন তা স্পষ্ট করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ইসি সচিব বলেন, স্থানীয় সরকারের মেয়র চেয়ারম্যান কার কাছে পদত্যাগ করবেন সেটা আইনে বলা আছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এটা সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেবে।
নিজ খরচে প্রচারসামগ্রী অপসারণের নির্দেশ : স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে দেওয়া চিঠিতে নির্বাচনের আগাম প্রচারসামগ্রী অপসারণে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, দেওয়াল লিখন, বিলবোর্ড, গেট, তোরণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচারসামগ্রী অপসারণের নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের কারও এসব প্রচারসামগ্রী থাকলে তাকে নিজ খরচে তা অপসারণ করতে বলা হয়েছে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
তিনশ আসনে অনুসন্ধান কমিটি : সংসদ নির্বাচনের অপরাধ তদন্ত করে আমলে নেওয়ার জন্য ৩০০টি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। কমিটি ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিবকে পাঠানো ইসির নির্দেশনায় নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ৩০০টি সংসদীয় আসনে একজন যুগ্ম জেলা জজ বা প্রয়োজনবোধে সিনিয়র সহকারী জজ বিশিষ্ট ৩০০টি নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।
জোটের প্রতীকে নির্বাচন : নির্বাচনে জোটের প্রতীকে নির্বাচন করতে চাইলে শনিবারের মধ্যে ইসির কাছে আবেদন করতে অনুরোধ জানিয়েছে ইসি। গতকাল এক নোটিশে এ অনুরোধ জানানো হয়। এতে বলা হয়, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক একাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল মিলে নির্বাচনি জোট গঠন করা হলে, এ জোটের যে কোনো একটি দলের প্রতীক জোটভুক্ত দলগুলোর প্রার্থীদের বরাদ্দ করা যাবে। এরূপ প্রতীক পেতে হলে জোটকে নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার পরবর্তী ৩ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবর দরখাস্ত দাখিলের বিধান রয়েছে।
ভোটার প্রতি ১০ টাকা ব্যয় করতে পারবেন প্রার্থীরা : এ নির্বাচনে ভোটার প্রতি প্রার্থীর ব্যয় ১০ টাকা নির্ধারণ করেছে ইসি। একটি আসনে মোট ২৫ লাখ টাকার বেশি টাকা খরচ করতে পারবেন না প্রার্থীরা। বৃহস্পতিবার ইসির ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় ভোটারপ্রতি নির্বাচনি ব্যয় ১০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এ নির্বাচনি এলাকার ব্যয় সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার বেশি হবে না বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
নির্বাচনসামগ্রীর নিরাপত্তা : ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য ব্যালট বাক্স, অফিশিয়াল সিল, ব্যাগ, গালাসহ ১২ ধরনের মালামাল জেলা পর্যায়ে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। ওইসব নির্বাচনিসামগ্রী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ট্রেজারি শাখায় সংরক্ষণ করতে আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার আবারও চিঠি দিয়ে ওইসব সামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কমিশনকে নির্দিষ্ট প্রতিবেদনে নিরাপত্তার বিষয়টি অবহিত করতে বৃহস্পতিবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন : কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর সম্পাদক ওয়াহিদ