স্টাফ রিপোর্টার: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় কারাগারে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এখন তার মুক্তিতে বাধা নেই। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ গতকাল এ আদেশ দেন। আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে দুই মামলায় খাদিজাকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রইলো বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী বিএম ইলিয়াস কচি। তিনি বলেন, প্রায় এক বছর তিন মাস ধরে কারাগারে থাকা খাদিজার কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। আইনজীবী কচি বলেন, খাদিজা ১ বছর দুই মাস ১৭ দিন ধরে কারাগারে আছেন। আপিল বিভাগ তাকে জামিন দিয়েছেন। এখন তার মুক্তিতে বাধা নেই।
এদিকে খাদিজার জামিনের খবরে পরিবারজুড়ে যেন ঈদের আনন্দ বইছে। মেয়ের পছন্দের সকল খাবার রান্না করছেন তার মা। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বাসায় ফিরলে খাদিজার নামে আকিকা দেবেন।
খাদিজার জামিনের বিষয়ে সঙ্গে কথা বলেন খাদিজার মা এবং বড় বোন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজার বোন সিরাজুম মুনিরা বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় জামিনের খবর পাই। কখন মুক্তি পাবে সেটা এখনো জানতে পারিনি। জামিনের খবরে মনে হয়েছে, হাতে আকাশের চাঁদ পেয়েছি। আমরা সবাই অনেক খুশি। ঈদের খুশির মতো লাগছে। আব্বু-আম্মু খাদিজার জামিনের খবর শুনে অনেক খুশি হয়েছেন।
খাদিজাতুল কুবরার মা ফাতেমা খাতুন বলেন, আমি অনেক সন্তুষ্ট। অনেক খুশি হয়েছি মেয়ের জামিনের সংবাদে। ওর বাবাকে জানানোর পর তিনিও খুশি হয়েছেন। মেয়ের নামে আকিকা দেবো বলে ঠিক করে রেখেছি। এতদিন দেইনি। খাদিজা বের হলেই দেবো। তিনি বলেন, খাদিজা ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, গরুর মাংস, পোলাও পছন্দ করে। বাসায় আসার আগেই রান্না করে রাখবো। খাদিজা আমার সঙ্গেই ঘুমায়। তাই আমাদের থাকার কক্ষটি গুছিয়ে রেখেছি।
বুধবার সকালে খাদিজাকে কারাগারে দেখতে গেছি। দীর্ঘ সময় আমাদের কথা হয়। তখনো জানতাম না ওর জামিন হবে। মেয়েকে বলেছি, মা তুমি চিন্তা করো না। ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করো। দ্রুত জামিনের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া চাও। খাদিজা জানায়, মা আমি রোজা রেখেছি। খাদিজার পক্ষে আপিল বিভাগে শুনানি করেন এডভোকেট বিএম ইলিয়াস কচি ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুল আলম।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজা একটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করতেন। সেখানে ‘সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচার এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’ করার অভিযোগে ২০২০ সালে খাদিজা এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা হয় কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে করা ওই দুই মামলার এজাহারের অভিযোগ এবং বর্ণনা প্রায় একই রকম। মামলার দুই বছর পর ২০২২ সালের ২৭শে আগস্ট খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। তখন থেকে কারাগারে আছেন এই শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন : ছেলের গ্রেফতার ও রিমান্ডের খবরে মারা গেলেন পিতা, জামিন পাননি ছাত্রদল নেতা