ইয়েমেনের হুতি বাহিনী লোহিত সাগর থেকে ৫২ জন ক্রুসহ একটি ইসরাইলি জাহাজ আটকের দাবি করেছে। গত কয়েক দিন ধরেই তারা হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়ে আসছিল যে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি পাশবিক হামলা বন্ধ না হলে লোহিত সাগর দিয়ে চলাচলকারী যেকোনো ইসরাইলি জাহাজকে টার্গেট করা হবে। যদিও ইসরাইল তাদের কোনো জাহাজ আটক হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। দেশটি জানিয়েছে, হুতিদের আটক করা জাহাজটি বৃটেনের এবং এর ক্রু সদস্যরা জাপানিজ।
আল-জাজিরার খবরে জানানো হয়েছে, ওই জাহাজে কোনো ইসরাইলি নাগরিক নেই বলে দাবি করেছে ইসরাইল। জাহাজটি তুরস্ক থেকে ভারত যাচ্ছিল। এ সময় এতে হামাসের পতাকা উড়ছিল। গ্যালাক্সি লিডার নামের ওই জাহাজটির মালিকানার কিছু অংশ এক ইসরাইলি ব্যবসায়ীর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাবলিক শিপিং ডাটাবেসে মালিকানার বিবরণ থেকে জানা যায় যে, জাহাজটির মালিক ‘রে কার ক্যারিয়ারস’ নামের একটি কোম্পানি। যেটির প্রতিষ্ঠা করেছেন আব্রাহাম রামি নামের একজন। এই আব্রাহাম আবার ইসরাইলের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত। ফলে হুতিরা যে দাবি করেছে তা সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ইরানপন্থী গণমাধ্যমগুলো দাবি করছে যে, ইয়েমেনের হুতি বাহিনী রোববার লোহিত সাগরের গভীর থেকে ইসরাইলি ওই জাহাজটি আটক করতে সক্ষম হয়।
জাহাজটির ক্রুদেরকে বর্তমানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং ইয়েমেনের যথাযথ কর্তৃপক্ষ এসব ক্রুর জাতীয়তা পরীক্ষা করে দেখছে। জাহাজ আটক করার পর হুতির জেনারেল সারিয়ি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জাতির ওপর ভয়াবহ ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের বিপরীতে ধর্মীয়, নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে তারা ইসরাইলি জাহাজ আটক করেছেন। তিনি বলেন, আটক ক্রুদের সঙ্গে ইসলামি শিক্ষা অনুযায়ী সদয় আচরণ করা হচ্ছে। ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র বলেন, ইসরাইলি শত্রুর যেকোনো জাহাজকে হামলার বৈধ টার্গেট বানাবেন তারা। তিনি লোহিত সাগরে ইসরাইলি কোনো জাহাজে আরোহণ না করার জন্য বিশ্বের সকল দেশের জাহাজ ক্রুদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে হুতি বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারিয়ি বলেছিলেন, লোহিত সাগর দিয়ে চলাচলকারী ইসরাইলি মালিকানাধীন বা ইসরাইলি কোনো কোম্পানির ব্যবহৃত অথবা ইসরাইলি পতাকাবাহী যেকোনো জাহাজে হামলা চালানো হবে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের চলমান বর্বরতার প্রতিবাদে তারা এ কাজ করবেন বলে সারিয়ি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। রোববার যদিও হুতিরা কোনো ধরণের হামলা না চালিয়েই জাহাজটি আটক করেছে।
সারিয়ি গতকাল এক্সে লিখেন যে, যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে এতই উদ্বিগ্ন থাকে তাহলে তাদের উচিৎ গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া। এর আগে হুতি বাহিনী একাধিকবার ইসরাইলে রকেট ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে।
এদিকে জাপান সরকার সোমবার বলেছে যে তারা ওই জাহাজ আটক করার ‘দৃঢ় নিন্দা’ জানাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, ওয়াশিংটন ‘পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এবং বিষয়টি তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে’। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, লোহিত সাগরে গ্যালাক্সি লিডার জাহাজটিকে এভাবে আটক আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা অবিলম্বে ওই জাহাজ এবং এর ক্রুদের মুক্তি দাবি করছি। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা আমরা জাতিসংঘের অংশীদারদের সাথে পরামর্শ করে নির্ধারণ করবো।
আরো পড়ুন : ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ১৩,০০০ ছাড়িয়েছে