স্পোর্টস ডেস্ক : শুধু ধারাবাহিক নয়, এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে ভয়ংকর দল ছিল ভারত। কোনো প্রতিপক্ষকেই পাত্তা দেয়নি তারা। ফাইনালের আগে মনে হচ্ছিল রোহিত শর্মার এই দলকে হারাবে, এমন কোনো প্রতিপক্ষ নেই। সমর্থকরা স্বপ্ন দেখছিলেন, অপ্রতিরোধ্য ভারত অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হবে। সেই ভারতকেই ফাইনালে ভূপাতিত করে ছয় ইউকেটের দাপুটে জয়ে অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ট্রফি। টুর্নামেন্টজুড়ে যাদের মনে হচ্ছিল অপ্রতিরোধী, ফাইনালে তাদের মুখ থুবড়ে পড়ার কারণ কী?
বিষাদে ডুবে যাওয়া গোটা ভারত খুঁজছে এই প্রশ্নের উত্তর। দেশটির সংবাদমাধ্যম ও সমর্থকদের একটি অংশ মনে করছে, ভারত এখন বিশ্বকাপের নতুন চোকার! শিরোপা জেতার চাপ তারা নিতে পারে না। ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতর পর গত এক দশকে আইসিসির প্রায় টুর্নামেন্টেই ভারতের স্বপ্ন ভেঙেছে নকআউট ম্যাচে। গত জুনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও তারা যাচ্ছেতাইভাবে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে।
রোববার আহমেদাবাদে একই গল্পের পুনরাবৃত্তি দেখে হতাশ আবির সাইনি নামের এক ভারতীয় সমর্থক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘বিশ্বকাপের নতুন চোকার ভারত। তারা সত্যিকারের চোকার। খেলে ভালো, কিন্তু সমাপ্তি রেখার কাছে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে।’ ভারতের ক্রীড়া সাংবাদিক আর কৌশিকের মূল্যায়ন, ‘১০ বছরের বেশি সময় ভারত কোনো বৈশ্বিক শিরোপা জিততে পারেনি। এই বাস্তবতা আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে ভারতের সব হারের ধরন প্রায় একই রকম। হয়তো পরিকল্পনায় বড় কোনো গলদ আছে। এটা বলা কঠিন যে, বড় মঞ্চে তারা মানসিক দৃঢ়তা দেখাতে পারে না।’
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং অবশ্য ফাইনাল ট্রাজেডির জন্য পিচ নিয়ে ভারতের ভুল কৌশলের কথা বলেছেন। পন্টিংয়ের ভাষ্য, ‘ফাইনালে মন্থর উইকেট তৈরির কৌশল সম্ভবত ভারতের জন্য বুমেরাং হয়ে গেছে।’ ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনের কণ্ঠেও অভিন্ন সুর, ‘কৌশলগত দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া খুবই চতুর দল। আমি মনে করি না। যে, তারা ৩২০ রান করার দল। তারা আসলে ২৮০ রানের দল। ফলে ভারত মন্থর উইকেট বানানোয় অস্ট্রেলিয়ার সুবিধা হয়েছে। প্যাট কামিন্স যা বলেছিল, তারা সেটাই করেছে। দুর্দান্তভঅবে দর্শকদের চুপ করিয়ে দিয়েছে।’
খেলোয়াড় হিসাবে ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারা রাহুল দ্রাবিড় এবার ভারতের কোচ হিসাবেও হারলেন। ফাইনালে পা হড়কানোর কোনো ব্যাখ্যা নেই দ্রাবিড়ের কাছেও, ‘উত্তরটা জানা থাকলে আমি বলে দিতাম। আমি শুধু জানি, নির্দিষ্ট দিনে আমরা যথেষ্ট ভালো খেলতে পারিনি। এটাই খেলা। এভাবেই ঘটে। তবু কাল সকালে আবার সূর্য উঠবে। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। থামা যাবে না।’ অধিনায়ক রোহিত শর্মার ভাষ্য, ‘আমি কোনো অজুহাত দিতে চাই না। আমরা আগে ব্যাটিং করে যথেষ্ট রান করে অস্ট্রেলিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারিনি। আসলে আমাদের ভাগ্যে ছিল না জয়।’
সাবেকরা অবশ্য রোহিতদের পাশেই আছেন। ভারতকে চোকার মানতে নারাজ শচীন টেন্ডুলকার বলেছেন, ‘আমার কাছে এটা শুধু দুর্ভাগ্য। নিখুঁত একটি টুর্নামেন্টে শুদু একটি খারা দিন স্বপ্নভঙ্গের কারণ হতে পারে। ভারতের সবাই কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা আমি অনুভব করতে পারি। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে টুর্নামেন্টজুড়ে এই দল আমাদের জন্য নিজেদের সবটা দিয়েছে। হার খেলারই অংশ।’
আরো পড়ুন : সারা দেশে ১৩ গাড়িতে আগুন-ভাঙচুর, আরও ৪৮০ নেতাকর্মী গ্রেফতার