দুইদিন ধরে ছেলেকে খুঁজছি। খিলগাঁও থানা ও ডিবি অফিসে ঘুরেছি- কোথাও সন্ধান পাইনি। থানায় গেলে পুলিশ বলে ডিবিতে যান। ডিবি অফিসে গেলে তারা বলে জানি না। কেউ জানে না, তাইলে আমার পোলাডারে ধরে নিলো কে? পুলিশের গাড়িতে তুলে নিলো কে? রিকশার গ্যারেজের এক লোক বললো পুলিশ আমার ছেলেকে রিকশা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে গেছে। কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়নি। ছেলে অনেক কেঁদেছে, পুলিশের পায়ে ধরছে। তারপরেও ছাড়েনি। পুলিশ বলে, সে নাকি বিএনপি’র মিছিলে গেছিলো। পুলিশের কাছে নাকি ছবি আছে। আমার ছেলে রিকশা চালায়। কোনো রাজনীতি করে না। মিছিলে গেল কখন? কথাগুলো বলছিলেন খিলগাঁও পশ্চিম নন্দিপাড়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়া রিকশাচালক শাহাদাত হোসেনের মা আনিছা খাতুন। শাহাদাত অটোরিকশা চালান। গত ১৯শে নভেম্বর খিলগাঁও পশ্চিম নন্দিপাড়া এলাকা থেকে তাকে ডিবি’র গাড়িতে তুলে নেয়া হয় বলে রিকশা গ্যারেজের এক কর্মচারী শাহাদাতের পরিবারকে জানান। এরপর থেকে নানা জায়গায় খুঁজেও শাহাদাতের সন্ধান পায়নি পরিবার। গতকাল আদালতে এসে ঘুরাঘুরি করছেন তার মা আনিছা। তবে ছেলের সন্ধান পাননি।
তিনি বলেন, অহন আমরা বাঁচবো কীভাবে। ছেলের রোজগারে সংসার চলে। একদিন কাজে না গেলে পরদিন ঘরে খাবার থাকে না। আমার সংসার চলবে কীভাবে?
তিনি বলেন, ছেলেটা ৭ দিন ধরে জ্বরে ভুগেছে। ঘরে টাকা নাই দেখে বাধ্য হয়ে অসুস্থ শরীরে রিকশা নিয়ে বের হয়। এরমধ্যেই পুলিশ ধরে নিছে। এখন ৩ দিন ধরে খোঁজ নাই। কোথাও না পেয়ে সকাল থেকে হাজতখানার সামনে এসে বসে আছি। খিলগাঁও থেকে আসামি আনা হয়েছে। কিন্তু আমার ছেলেকে পাচ্ছি না। বলেছে, এক হাজার টাকা দিলে গারদে খুঁজে দেবে। আমার কাছে সেই টাকা নাই।
শাহাদাতের মতো আরও অনেকের স্বজনকে আদালতের গারদখানার আশেপাশে ঘুরতে দেখা গেছে। তাদের অনেকে জানিয়েছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ বা ডিবি তাদের আটক করার তথ্য পেয়েছেন। কিন্তু কোথায় রাখা হয়েছে তা জানতে পারেননি।
মিরপুরের একজন চা দোকানিকে তুলে নেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে। তার নাম নাসির হোসেন। তিনি মিরপুর ২ নম্বর এলাকার চা দোকানি ছিলেন। গত ১৬ই নভেম্বর নিজ চায়ের দোকান থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর ৩ দিন তার সন্ধান পাননি পরিবার। মিরপুর মডেল থানা থেকে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। পরে কেরানীগঞ্জ কারাগারে গিয়ে জানতে পারেন নাসিরকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। আদালত নাসিরের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। নাসিরের স্ত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, আদালত থেকে মামলার কাগজ তুলে দেখি তাকে নাশকতার মামলা দিয়েছে। সে নাকি বিএনপি’র মিছিলে গেছিলো। পুলিশের কাছে সেই ছবি আছে। পুলিশ সেই ছবি দেখে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করে না। কখনো কোনো মিছিলেও যায়নি। মামলার কাগজে লেখা সে নাকি বোমা মারছে। নাশকতা করছে। এই অবিচারের বিচার দিবো কোথায়?
আরো পড়ুন : রূপগঞ্জে জমি দখল, হত্যাচেষ্টা, বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগে রফিকের বিরুদ্ধে দুই মামলা