ফিলিস্তিনের গাজায় উপত্যকায় গত ৭ অক্টোবর থেকে নির্বিচারে বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এর সঙ্গে গত ২৮ অক্টোবর থেকে উপত্যকায় স্থল হামলাও শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। লক্ষ্য, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল ও জিম্মিদের উদ্ধার করা। টানা ৪৮ দিন যুদ্ধ করেও সেই লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয় ইসরায়েল। অবশেষে ৪৯তম দিন থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ। টানা ৭ দিন যুদ্ধবিরতিতে ৮০ ইসরায়েলিসহ প্রায় ১১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ২৪০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল।
সাত দিন পর হামাস জিম্মি ছাড়তে নতুন চুক্তির শর্ত দেয়। এতে বেঁকে বসে ইসরায়েল। তারা চায়, আগের শর্তেই বাকি জিম্মিদেরও মুক্তি দিক হামাস। অর্থাৎ প্রতি ইসরায়েলির বিনিময়ে তিনজন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবে। কিন্তু হামাস তাতে রাজি নয়। সেই হামাস ঘোষণা দিয়েছে, ইসরায়েল পুরোপুরি হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত আর কোনও জিম্মি মুক্তি দেওয়া হবে না।
এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ইসরায়েল। শুক্রবার থেকে আবারও গাজায় হামলা শুরু করে ইহুদিবাদী সেনারা। এবার উত্তর গাজার পাশাপাশি দক্ষিণ গাজাতেও নির্বিচারে বোমা হামলা চালাতে থাকে ইসরায়েল। এতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গাজার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, এরই মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৯৯ জন ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী, শিশু ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক তথা কিশোর।
এদিকে, হামাস নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় ৮০০ টানেল খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে প্রায় ৫০০টি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি ইসরায়েলি বাহিনী। তবুও হামাস নির্মূলের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি ইহুদিবাদী ইসরায়েল।
ফলে এবার নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেটি হচ্ছে, ভূমধ্যসাগর থেকে পাম্প দিয়ে পানি টেনে সব টানেল ভর্তি করা, যাতে ভেতরে থাকা হামাস যোদ্ধারা বের হয়ে আসে এবং তাদের সকল যুদ্ধ সরঞ্জাম সহজেই অকেজো ও ধ্বংস করা যায়।
সে লক্ষ্যে গত মাসে গাজার আল শাতি শরণার্থী ক্যাম্পের কাছে পাঁচটি পাম্প বসিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব পাম্প দিয়ে হাজার হাজার কিউবিক মিটার পানি টেনে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হামাসের সব টানেল ভাসিয়ে দেওয়া হবে।
বিষয়টি মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ইসরায়েল। তবে এ বিষয়ে আমেরিকার পক্ষ থেকে এখনও কোনও ধরনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে একটি প্রতিবেদনে এমনটিই দাবি করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলও প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীর হাতে আটক জিম্মিদের মুক্ত করার আগে ইসরায়েলি বাহিনী টানেলগুলো প্লাবিত করবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। কেননা, জিম্মিদের হয়তো মাটির নিচের ওইসব টানেলেই আটকে রাখা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা নিয়ে আমেরিকার বাইডেন প্রশাসনে মিশ্র মতামত দেখা দিয়েছে। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা ইসরায়েলি পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আবার অন্যরা বলেছেন- তারা টানেল ধ্বংস করার জন্য ইসরায়েলের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে এবং এতে কোনও মার্কিনির বিরোধিতার প্রয়োজন নেই।
এছাড়াও সংবাদপত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এতে গাজার বিভিন্ন ক্ষেত্রের পানি এবং মাটির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, সমুদ্রের পানি টানেলের মধ্যে থাকা বিপজ্জনক পদার্থগুলোর সঙ্গে মিশে যাবে। এতে ওই উপত্যকার পানি ও মাটির ব্যাপক ক্ষতি হবে। সেই সেখানকার ভবনগুগুলোর ভিত্তিরও ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
ইসরায়েলি পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে জানিয়েছেন, “আমরা নিশ্চিত নই যে পাম্পিং কতটা সফল হবে। কারণ কেউ টানেল ও সেগুলোর চারপাশের মাটির বিবরণ জানে না। এই পরিকল্পনা কার্যকর হবে কিনা তা জানাও অসম্ভব। কারণ আমরা জানি না যে সুড়ঙ্গে সমুদ্রের পানি কীভাবে নিষ্কাশন হবে। কেননা, আগে সেখানে কেউ যায়নি।
সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, টাইমস অব ইসরায়েল
আরো পড়ুন : ইউক্রেনকে সাহায্য করার মতো আর কোনও অর্থ রইল না বাইডেন প্রশাসনের