গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেন জাতিসংঘ মহাসচিব

অর্থনীতি আইন-আদালত আন্তর্জাতিক ওকে নিউজ স্পেশাল ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ জনপ্রতিনিধি তথ্য-প্রযুক্তি ধর্ম প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেন জাতিসংঘ মহাসচিবের, ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জার্মানির, তবে ক্ষুব্ধ ইসরাইল

গাজা পরিস্থিতি অবর্ণনীয়। সেখানকার মানবিক ব্যবস্থা যা, তাতে গাজা ভেঙে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। জাতিসংঘের অভিভাবক হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদেরকে এ বিষয়ে এবার সরাসরি সতর্ক করেছেন তিনি। এ অবস্থায় গাজায় জরুরি ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তার এ আহ্বানে সমর্থন দিয়েছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। মানবিক বিপর্যয় এড়াতে কয়েক দশক ধরে ব্যবহার করা হয়নি এমন একটি অনুচ্ছেদ সক্রিয় করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এটি জাতিসংঘ সনদের ৯৯ নম্বর অনুচ্ছেদ। অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ বলেছেন, ইসরাইলের অব্যাহত বোমা হামলা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহে সঙ্কটের কারণে গাজায় জনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। ছড়িয়ে পড়তে পারে মহামারি। প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাস্তুচ্যুত মানুষের বড় রকম চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

মহাসচিব যদি মনে করেন কোনো ইস্যুতে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে তাহলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণে ৯৯ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যবহার করতে পারেন। এক্সে অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ লিখেছেন, গাজায় মানবিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। এ অবস্থায় আমি (নিরাপত্তা) পরিষদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি মানবিক বিপর্যয় রোধে সাহায্য করতে এবং একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণার। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে ২০১৭ সালে দায়িত্বে আসেন অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। তারপর প্রথমবার তিনি এই অনুচ্ছেদ ব্যবহার করলেন। এর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ হয়েছে। তবু তিনি এই অনুচ্ছেদ ব্যবহার করেননি। কিন্তু গাজার ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করেছেন। এতেই স্পষ্ট যে গাজায় আসলে কি হচ্ছে। এ ছাড়া ভিডিও ফুটেজ, ছবিতে যেসব দৃশ্য চোখের সামনে আসছে, তাতে গাজা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ১৬ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধেও এত মানুষ মারা যায় না। তাই জাতিসংঘের অভিভাবক হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি লিখেছেন তিনি। তাতে জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন যে, পরিস্থিতি দ্রুততার সঙ্গে অবনতি হচ্ছে। এতে ফিলিস্তিনিদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা এবং পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল ইউরোপের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অ্যান্তোনিও গুতেরাঁকে সমর্থন দিতে। তিনি এক্সে লিখেছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁকে সমর্থন দিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যদের এবং সমমনা অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানাই। তবে এতে ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইলি কোহেন। তিনি এক্সে লিখেছেন, গুতেরাঁ গাজায় যুদ্ধবিরতির যে আহ্বান জানিয়েছেন তা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসকে’ দেয়া তার সমর্থন। অন্যদিকে একই কারণে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগও দাবি করেছেন। বলেছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব নতুন করে নৈতিকতার নিচে নেমে গেছেন। যুদ্ধবিরতির আহ্বানের অর্থই হলো গাজায় হামাসকে তাদের ‘সন্ত্রাসের’ রাজত্ব করতে দেয়া। মহাসচিবের এমন অবস্থানের কারণে গাজায় যুদ্ধ শুধু দীর্ঘায়িত হবে। কারণ, তার এমন আহ্বানের ফলে হামাসের মধ্যে আশার আলো দেখা দেবে যে, এই যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং তারা টিকে থাকতে পারবে।

পরিস্থিতি যখন এই পর্যায়ের তখন ইসরাইলের সহিংস কট্টরপন্থিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেবাস্তিয়ান ফিশার বলেন, দখলিকৃত পশ্চিমতীরে সহিংসতায় জড়িত যেসব ইসরাইলি উগ্রপন্থি তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করতে হবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে। ৭ই অক্টোবরের পর পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যেসব বসতিস্থাপনকারী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে এ সপ্তাহে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বার্লিন। ওদিকে ইসরাইলকে দেয়া নতুন নিরাপত্তা সহায়তার একটি প্রস্তাব মার্কিন সিনেটে আটকে দিয়েছেন রিপাবলিকান সদস্যরা।

ওদিকে কয়েকদিন আগে জাতিসংঘের আঞ্চলিক মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান লিন হ্যাস্টিংস বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। কারণ, প্রকৃতপক্ষে মানুষগুলো অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

আরো পড়ুন : অবশেষে মুক্তি পেলেন মুফতি আমির হামজা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *