জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ বেড়েছে শত গুণেরও বেশি

অনুসন্ধানী অর্থনীতি জনপ্রতিনিধি জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি দুর্নীতি নির্বাচন প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক : জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ নিয়ে দেশব্যাপী এখন আলোচনা তুঙ্গে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় অধিকাংশ জনপ্রতিনিধির সম্পদ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কারও কারও সম্পদ বেড়েছে শত গুণের বেশি। আমাদের জেলা প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদকরা জনপ্রতিনিধিদের সম্পদের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে পাঠিয়েছেন।

নওগাঁ : ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের হলফনামা দাখিলের সময় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা। নগদ টাকা, কৃষি-অকৃষি জমি, বাড়ি গাড়ি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা, সঞ্চয়পত্র ও আমানত হিসেবে ব্যাংক বিনিয়োগ করা টাকাসহ বর্তমানে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৯ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ৬৯ টাকা। যা ২০০৮ সালের তুলনায় ৮৬ গুণের বেশি। ১৫ বছরের ব্যবধানে সাধন চন্দ্র মজুমদারের বার্ষিক আয় বেড়েছে ১৫৭ গুণের বেশি। ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হয়ে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। সাধন চন্দ্র মজুমদার তাঁর হলফনামায় বরাবরই পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসা ও কৃষি।

এবারের হলফনামায় তাঁর আয়ের উৎস হিসেবে তিনি এমপি ও মন্ত্রী হিসেবে সম্মানি ভাতা, কৃষি খাত, ব্যাংকে স্থায়ী আমানতের সুদ, ঠিকাদারি ব্যবসা ও অন্যান্য উৎস উল্লেখ করেছেন। এসব উৎস থেকে বর্তমানে তাঁর বার্ষিক আয় ৩ কোটি ৯৪ লাখ ২৩ হাজার ২৫৬ টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছিলেন ২ কোটি ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৬১৮ টাকা। মন্ত্রী হওয়ার পর পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় দুই গুণ। ২০০৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সে হিসাবে ১৫ বছরের ব্যবধানে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে ১৫৭ গুণের বেশি। এমপি ও মন্ত্রী হিসেবে সম্মানি ভাতা, কৃষি খাত, ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের সুদ, ঠিকাদারি ব্যবসা এবং অন্যান্য উৎসের আয় থেকে পারিবারিক ব্যয় ও আয়কর দেওয়ার পর গত পাঁচ বছরে তাঁর সম্পদ বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী ওই সময় তাঁর মোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পদমূল্য ছিল ৩ কোটি ২৩ লাখ ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। এবার দাখিল করা হলফনামায় সম্পদমূল্য উল্লেখ করেছেন ৯ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ৬৯ টাকা। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী ওই সময় তাঁর মোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা। এই হিসাবে ১৫ বছরের ব্যবধানে তাঁর সম্পদ বেড়েছে ৮৬ গুনের বেশি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ১০.৩৭ গুণ

মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পাঁচ বছরে অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ এবং ১৫ বছরে তা ১০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। নবম, একাদশ ও চলতি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জাহিদ মালেকের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ মালেকের দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট অথবা অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ব্যাংক আমানত ও অন্যান্য বাবদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বার্ষিক আয় এখন ৮ কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার ২৫ টাকা, যা ২০০৮ সালে ছিল ৭১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯১ টাকা। সেই হিসাবে গত ১৫ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে ৭ কোটি ৫২ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৩ গুণ। এবার নগদ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা, বন্ড ও ঋণপত্র, যানবাহন ও অন্যান্য বাবদ তাঁর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য ৭০ কোটি ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬১ টাকা, যা ২০০৮ সালে ছিল ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭ টাকা। সেই হিসাবে গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য বেড়েছে ৬৩ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৬০৪ টাকা। ২০১৮ সালে তাঁর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪২ কোটি ২৪ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭১ টাকা। সে হিসাবে গত পাঁচ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ২৮ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার ৯০ টাকা, অর্থাৎ ১ দশমিক ৬৬ গুণ বেশি।

প্রতিমন্ত্রী পলকের নগদ টাকা বেড়েছে ১২ গুণ

নাটোর : নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনের এমপি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের গত পাঁচ বছরে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে ১২ গুণ। তাঁর স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকার বেড়েছে প্রায় ৬ গুণ। তবে কমেছে পলকের ব্যাংকে টাকার পরিমাণ। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় পলক উল্লেখ করেছেন, তাঁর কাছে নগদ আছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ১১২ টাকা। তাঁর স্ত্রীর কাছে আছে ৪৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৯১ টাকা। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন, সে সময় তাঁর কাছে নগদ ছিল ৯ লাখ ১৭ হাজার ২৪৩ টাকা। স্ত্রীর ছিল ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫৬০ টাকা। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে বহু গুণ। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, পলকের কাছে রয়েছে ১০ হাজার ইউএস ডলার। স্থায়ী আমানতে তাঁর বিনিয়োগ করা আছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। তাঁর স্ত্রীর ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

উপমন্ত্রী শামীমের আয় ও সম্পত্তি কমেছে

শরীয়তপুর : শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের আয় ও স্থাবর সম্পত্তি কমেছে গত পাঁচ বছরে। এমপি হওয়ার আগে তিনি ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১০ টাকা মূল্যের একটি জমির (বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট) মালিক ছিলেন। বর্তমানে ওই সম্পত্তিও নেই। তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। এ ছাড়াও গাড়ি বাবদ ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯৬২ টাকা ঋণ রয়েছে তার। একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী- এনামুল হক শামীম একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বেসরকারি একটি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন। এবার তিনি এসব পদে নেই। তাই গত পাঁচ বছরে অর্ধকোটিরও বেশি টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি কমেছে এনামুল হক শামীম, তাঁর স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের। একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় এনামুল হক শামীমের বার্ষিক আয় ছিল ২৩ লাখ ২৮ হাজার ১৪৭ টাকা। বর্তমানে তাঁর বার্ষিক আয় ১৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৮ টাকা। পাঁচ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় কমেছে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ১৬৯ টাকা।

মমতাজের সম্পদ বেড়েছে

মানিকগঞ্জ : পাঁচ বছরে কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম এমপির আয় ও সম্পদ দুটোই বেড়েছে। তবে কমেছে ঋণের পরিমাণ। দুটি ফৌজদারি মামলার আসামিও তিনি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা ও তাঁর আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বছরে এমপি ভাতা ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও আনুষঙ্গিক পারিতোষিক বাবদ ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা আয় করেন। হাতে আছে নগদ ৫ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর জমা আছে ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ২১৮ টাকা। মধু উজালা কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ৩ কোটি ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার আছে তার। সঞ্চয়পত্র আছে ৪৫ লাখ টাকার। মমতাজ বেগমের নামে গাড়ি আছে ৩টি। ল্যান্ড ক্রুজার নামে একটি গাড়ির দাম ১ কোটি ৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ল্যান্ড ক্রুজার ভি-৮ মডেলের গাড়ির দাম ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ২৮ লাখ টাকা মূল্যের টয়োটা হাইয়েস আছে তার। নির্ভরশীলদের নামে মধু উজালা কোল্ড স্টোরেজের শেয়ার আছে ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকার।

বাবলুর আয় বেড়েছে ৭২৫ গুণ

বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু এবারও হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তাঁর নিজের ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৫ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর নিজের ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ছিল ৫ হাজার টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাঁর আয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৭২৫ গুণ। শুধু যে আয় বেড়েছে বাবলুর, তা নয়, বিগত সংসদ নির্বাচনে তাঁর গৃহিণী স্ত্রী বিউটি বেগমের নিজের নামে কোনো নগদ টাকা বা দালানের উল্লেখ না থাকলেও এবার তাঁর নামে রয়েছে প্রচুর সম্পদ। পাঁচ বছর আগের পেশা ছিল ব্যবসা ও সাংবাদিকতা। এখন তিনি ইট, বালু, সিমেন্টসহ অনলাইন ব্যবসায়ী বলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। পাঁচ বছর আগে বাবলু হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, তাঁর বার্ষিক আয় ৫ হাজার টাকা। সে সময় তাঁর হাতে নগদ ৩০ হাজার এবং ব্যাংকে জমা ছিল ৩০ হাজার টাকা। ওই সময় তাঁর নিজস্ব একটি পুরনো মোটরসাইকেল ছিল যার দাম ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে তাঁর দুটি গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে একটি নিশান এক্সট্রেইল জিপ এবং অন্যটি ল্যান্ড ক্রুজার। দুটির দাম ১ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

নিক্সন চৌধুরীর সম্পদ বেড়েছে ৫০ গুণের বেশি

ফরিদপুর : ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন, সদরপুর) আসন থেকে স্বতন্ত্র এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এক দশকের মধ্যে মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ গুণের বেশি। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া সম্পদের তথ্য অনুযায়ী- ২০১৩ সালে নিক্সন চৌধুরীর কৃষিজমি ছিল মাত্র ৩৮ শতাংশ। ১০ বছর পর ২০২৩ সালে কৃষিজমি দাঁড়িয়েছে ২০ একর ৩৯ শতাংশ বা ২ হাজার ৩৯ শতাংশ। তাতে ১০ বছরে কৃষিজমি বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫৪ গুণ। হলফনামায় নিক্সন চৌধুরী তাঁর পেশা হিসেবে পরিবহন ও কনস্ট্রাকশন, পেট্রল পাম্প ও ফিলিং স্টেশন, ডেইরি ফার্ম, ডাক ফার্ম ও ফিশারিজ প্রতিষ্ঠানের তথ্য উল্লেখ করেছেন। এক দশক আগে সংসদ নির্বাচন করার সময় বর্তমান ঠিকানায় কোনো জমি ছিল না নিক্সনের। দুই মেয়াদে এমপির দায়িত্ব পালনের পর তিনি ২ হাজার ৩৯ শতাংশ বা ২০ একরের বেশি জমির মালিক হয়েছেন। এ ছাড়া ২০১৪ সালে বর্তমান ঠিকানায় (ফরিদপুরের ভাঙ্গায়) তাঁর নামে কোনো বাড়ি, দালান না থাকলেও ১০ বছরের ব্যবধানে ভাঙ্গায় বাড়ি হয়েছে। এ ছাড়া গুলশান, বনানীতে ফ্ল্যাট হয়েছে।

কক্সবাজার : কক্সবাজারের চারটি আসনের এমপিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থবিত্তের মালিক কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের বর্তমান এমপি জাফর আলম। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকার মালিক তিনি। সবচেয়ে কম অর্থবিত্তের মালিক কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক। যার সম্পদ আছে প্রায় ৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার মতো। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থবিত্তের মালিক কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের এমপি শাহীন আক্তার। হলফনামা অনুসারে সাড়ে ১৫ কোটি টাকার সম্পদের মধ্যে ১৩ কোটি টাকার মতো সম্পদই তাঁর স্বামী আবদুর রহমান বদির। এরপর আছে কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল। তাঁর সম্পদ প্রায় ৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার মতো।

মুন্সীগঞ্জে বেশি সম্পদ জাপা প্রার্থীর

মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের ৩টি সংসদীয় আসনে ২৪ জন বৈধ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ মুন্সীগঞ্জ-৩ (মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়া) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ এফ এম রফিকউল্লাহ সেলিমের। হলফনামায় তাঁর পেশা হিসেবে তিনি যাত্রীবাহী নৌপরিবহন আলহাজ লাল মিয়া সপ্তমুখী খাদ্য প্রকল্প লিমিটেডের এমডি ও অভিনয়শিল্পী উল্লেখ করেছেন। এ আসন থেকে আরও নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব, জাকের পার্টির সামিম হায়দার মোল্লা, বিএনএফ মমতাজ সুলতানা আহম্মেদ।

কুড়িগ্রামে অষ্টম শ্রেণি ও স্বশিক্ষিত সাত প্রার্থী

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ৪টি সংসদীয় আসনে ১১টি রাজনৈতিক দলসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী ২৫ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী চারজন। শিক্ষাগত যোগ্যতায় পাঁচজন উচ্চশিক্ষিত, তিনজন বিএ পাস, পাঁচজন এইচএসসি, পাঁচজন এসএসসি ও তিনজন অষ্টম শ্রেণি পাস বলে জানা গেছে। আর চারজন স্বশিক্ষিত দাবি করেছেন। বার্ষিক আয় প্রায় কোটি টাকা একজনের, অর্ধকোটি টাকা একজনের, ২৭ লাখ একজনের, ৮ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় পাঁচজনের, ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় তিনজনের, ২ থেকে ৪ লাখের মধ্যে আয় ১৩ জনের আর মাত্র ১ লাখ টাকা আয় একজনের। কোটি টাকার ওপর স্থাবর সম্পদ আছে ছয়জনের। পেশা ব্যবসা বলেছেন ১৪ জন, চাকুরে তিনজন আর কৃষি পেশা হিসেবে নিয়েছেন আটজন।

আয় কমেছে কাজী কেরামতের

রাজবাড়ী : রাজবাড়ী-১ (সদর-গোয়ালন্দ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী কেরামত আলীর পাঁচ বছরে বার্ষিক আয় কমেছে। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বাড়লেও কমেছে স্থাবর সম্পদের পরিমাণ। এ ছাড়াও গত পাঁচ বছরে তাঁর স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। স্ত্রী হয়েছেন কোটিপতি। কাজী কেরামত আলী এ আসন থেকে পাঁচবারের এমপি। এবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিলকৃত হলফনামায় দেখা গেছে, কাজী কেরামত আলীর বার্ষিক আয় ৩৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪১ টাকা। যেখানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় কাজী কেরামতের বার্ষিক আয় দেখানো ছিল ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার ৪৩৬ টাকা। দুটি হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে তাঁর বার্ষিক আয় পাঁচ বছরে কমেছে।

এমপি ও সাবেক এমপির সম্পদ নিয়ে হইচই

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া-১ আসনে ভোটের লড়াইয়ের আগেই প্রার্থীদের হলফনামার সম্পদ নিয়ে হইচই পড়ে গেছে। এর মধ্যে বর্তমান এমপি আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহর পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়েছে ১০ গুণ। আর এমপি না থাকায় গত পাঁচ বছরে সহসভাপতি রেজাউল হক চৌধুরীর আয় অনেক কমে গেছে। তারপরও সম্পদ বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। এদের সম্পদ বাড়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক বলছেন সচেতন নাগরিকরা। দশম সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল হক চৌধুরী। একাদশ সংসদে প্রার্থী হতে গিয়ে ২০১৮ সালে তিনি যে সম্পদের হিসাব দিয়েছিলেন তাতে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ২৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এবার হলফনামায় স্ত্রী ও ছেলেদের আয়সহ তাঁর বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বার্ষিক আয় ১১ লাখ টাকা কমলেও সম্পদ বেড়েছে রেজাউল হক চৌধুরীর। ২০১৮ সালে তাঁর ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদ ১ কোটি ১৩ লাখ থেকে বেড়ে ১ কোটি ৬৫ লাখে উন্নীত হয়েছে।

ধনী প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক

সাতক্ষীরা : পরপর দুবারের এমপি সাতক্ষীরা-১ আসনের মহাজোটের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহর আয় বেড়েছে। এবার দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত সাতক্ষীরা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবির আয় কমেছে। আর সাতক্ষীরার ৪টি আসনের ৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে ধনী প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর অন্যতম সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা থেকে দেখা যায়, তাঁর বার্ষিক আয় দেড় কোটি টাকারও বেশি। তাঁর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মূল্যমান প্রায় ১৯ কোটি টাকা। সাতক্ষীরা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহর বার্ষিক আয় ১০ বছরে ৯ গুণেরও বেশি পৌঁছেছে। অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২৫ গুণেরও বেশি। আর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৩ গুণেরও বেশি। ২০১৪ সালে তিনি ও তাঁর স্ত্রী যথাক্রমে আইন ও শিক্ষকতা পেশা থেকে বার্ষিক আয় করতেন ৪ লাখ ২ হাজার টাকা। ১০ বছরের ব্যবধানে বর্তমানে তাঁর বার্ষিক আয় ৩৮ লাখ টাকা। সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় এমিপ মীর মোস্তাক আহমেদ রবির আয় কমেছে। বাড়ি ভাড়া, ব্যবসা ও সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্য সম্মানি মিলে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৩০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। আর এবারের হলফনামায় তিনি তাঁর বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা।

আরো পড়ুন : নির্বাচনে তৃতীয় শ্রেণির যাত্রী নিয়ে ট্রেন পথিমধ্যেই লাইনচ্যুত হবে

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *