স্টাফ রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যেসকল প্রার্থী স্বতন্ত্র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিন্তু প্রতিহিংসা করা যাবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে কিন্তু বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে দল সহ্য করবে না। গতকাল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের যৌথসভা থেকে এ বার্তা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচন বিরোধী শক্তির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে- এই নির্বাচন সংবিধান রক্ষা করার নির্বাচন। এদিকে যৌথ সভায় বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ই ডিসেম্বর বিজয় র্যালি রয়েছে। লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতিতে বিজয় র্যালি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বলেন, ওইদিন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত বিজয় র্যালিটি অনুষ্ঠিত হবে। এতে টার্গেট করা হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। পাশাপাশি রঙ্গিন ব্যানার, ফেস্টুনসহ নানা ধরনের আয়োজন থাকবে র্যালি ঘিরে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেন, ভোট নিয়ে কেউ গায়ের জোর খাটাবেন না। আমাদের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে হবে। মনোনয়ন বঞ্চিতদের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সময়মতো মূল্যায়ন করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন করা দলের অঙ্গীকার। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ পরাজয় মানে না। অবশ্যই নৌকার বিজয় হবে। এ সময় বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, হামলা করলে মামলা হবে, মামলা হলে গ্রেপ্তার হবে, সাজা হবে। তিনি বলেন, পুলিশ মারবেন, এটা কি বিনা বিচারে যাবে? কীভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই পুলিশের চেহারাটা সবাই দেখেছেন। এই ঘটনা যারা ঘটায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না? হামলা আমরা করি না, হামলা করে তারা। আর হামলা হলে মামলা হবে। ছাড়াছাড়ি নাই। গণমাধ্যমকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বারবার একটা কথা বলি, আমরা অতিরিক্ত কিছু চাই না। আমরা দল হিসেবে যা প্রাপ্য তাই দিন। আপনারা বিরোধী দলকেও কাভার করুন। সেখানে বাধা দেয়ার কিছু নেই। অত্যন্ত দুঃখ নিয়ে একটা কথা বলছি। দক্ষিণ গেটে মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেছিলাম, নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন আমাদের বারণ করেছে। আমরা তাদের কথা সম্মানের সঙ্গে রেখেছি।
প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি অনুমতি কীভাবে পেলো প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রেস ক্লাবের সামনে কীভাবে দিলেন, আমরা জানি না। আমরা পেলাম না, নির্বাচনের পক্ষের শক্তি, কিন্তু যারা বিরোধী তাদের কেন এই অনুমতি দেয়া হলো? এটা হয় না। নির্বাচন বিরোধীদের এই আশ্রয়, প্রশ্রয়টা কেন দিলেন? তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, এটা ন্যায়বিচার হলো? আপনি আমাকে দিলেন না, আমি নির্বাচন করছি। আর যারা নির্বাচনকে বানচাল করতে চায়, তাদের অনুমতি দিলেন। আমি কিছু বলছি না, আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখলাম। তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে তো জোর করে আর নির্বাচনে আনা যায় না। পৃথিবীর কোথায় আছে যে হঠাৎ সরকার ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দেয়? তাহলে আমাদের দেশে কেন হবে? তারা শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায়। তারা মৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। সারা বিশ্বে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, এখানেও সেই একই পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে। ২০০৯ সালের পরে শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করেছেন। এখন যদি তারা নির্বাচনে না আসে, তাহলে আমরা কী করতে পারি?
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন উপলক্ষ্যে দলে দলে বৈঠক করবো… এখন কি জনসভার ডাক দিয়ে আমরা এগুলো করবো? আলোচনার জন্য একটি পরিবেশ দরকার হয়। এসব আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা তো জনসভা ডেকে কিংবা গণমাধ্যম ডেকে হবে না। আলোচনা এভাবেই হয়, অতীতেও হয়েছে। আলোচনা হয়েছে… ১৪ দল হয়েছে, মহাজোট হয়েছে এবং আসন সমঝোতাও হয়েছে। প্রক্রিয়াটা এমনই। আগামী ১৭ তারিখের মধ্যে সব সমাধান হয়ে যাবে। এটা তো আর ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হবে না। বিএনপি বলছে লোক দেখানো এবং সংবিধান রক্ষার্থে নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে, এ বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন? এ প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, যারা এ দেশের সংবিধান ও আইনের শাসন মানে না, তারা এ ধরনের কথা বলবেই। এ নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি’র নেতৃত্বে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছিল, তাদের উদ্দেশ্য হলো নির্বাচন করতে না দেয়া। তাদের একদফা দাবি না মানলে নাকি নির্বাচন করতে দেবে না এ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। সেই অনুযায়ী আমাদের নেতাকর্মীরা যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদেরকে যে স্পিরিটে দেখেছি সেটি আমাদের খুব ভালো লেগেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা অনেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং ব্যস্ত হয়ে যাবেন। তারপরও যারা এই শহরে আছেন… শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি মেনে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী শক্তি বিএনপি’র নেতৃত্বে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, জনগণকে নিয়ে তা প্রতিহত করতে হবে। আমরা সতর্ক থাকব কারণ এই নির্বাচন আমাদের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে নব নব বিজয় অর্জন করতে এই নির্বাচন আমাদের অবশ্যই প্রয়োজন। যথাসময়ে পাঁচ বছর পরে নির্বাচন হচ্ছে এটাই গণতন্ত্রের বিউটি। নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অবশ্যই চোখে পড়ার মতো হবে। দৃশ্যমানভাবে ভোটার উপস্থিতি দুনিয়ার অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের তুলনায় ভালো হবে বলে বিশ্বাস করি। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আছে এবং অন্যান্য ২৮টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
এ সময় দলের কর্মসূচি ঘোষণা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ১৮ই ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ রাজধানীতে বিজয় র্যালি করবে। তিনি জানান, ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হবে। সেদিন বিকালে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তাতে সভাপতিত্ব করবেন। এরপর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদ্যাপন করা হবে। সেদিন দলের পক্ষ থেকে সাভারের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানো হবে। ১৭ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা হবে। আর ১৮ই ডিসেম্বর বিজয় র্যালি করা হবে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত র?্যালি করা হবে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দীসহ অন্যরা।
আরো পড়ুন : মধ্যপন্থি রাজনৈতিক নেতা ডোনাল্ড টাস্ক পোল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী