স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দায় নিতে চায়না আওয়ামী লীগ, জয়ের গ্যারান্টি চায় শরিকরা

জনপ্রতিনিধি নির্বাচন প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

প্রধান বিরোধী দল ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নেয়া কৌশলে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের শরিক ও মিত্র দলগুলো। তারা সবাই নির্বাচনে জয়ের গ্যারান্টি চাইছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আসন ছাড়ের প্রতিশ্রুতিতেও তারা সন্তুষ্ট না। দলগুলোর দাবি আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও যাতে মাঠে না থাকে। ক্ষমতাসীন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলে নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন না এমনটা মনে করছেন শরিক ও মিত্র দলের নেতারা। এবারও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করছে ১৪ দলের শরিকরা। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের নেতারাও নৌকা প্রতীকে লড়বেন এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কোন দলকে কয়টি আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেবে- তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিষয়টির সুরাহা হতে পারে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে দলগুলোর নেতারা একের পর বৈঠক করে আসছেন।

এসব বৈঠকে আসন ছাড়ের বিষয়ে আওয়ামী লীগ ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দায় নিতে চাইছে না। দলটির নেতাদের বক্তব্য- নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় জোটের সমস্যা সুরাহা করতে গিয়ে তাদের সরিয়ে দিলে নির্বাচন একতরফা রূপ নেবে।

ওদিকে বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে দেন-দরবার করছে। তবে তাদের এই তৎপরতা অনেক গোপনে। আওয়ামী লীগও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সামনে আনতে চাইছে না। কিন্তু জাতীয় পার্টির নেতারা চাইছেন আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচন করতে। তাদের আবদার যেসব আসন আওয়ামী লীগ তাদের জন্য ছেড়ে দেবে সেখানে দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীও থাকতে পারবে না। নেতারা কেউ কেউ প্রকাশ্যে বলছেন তারা নির্বাচনে জয়ের নিশ্চয়তা চান। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ অনেকটা দোটানায় পড়েছে। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখতে জাতীয় পার্টিকে ধরে রাখা বড় একটি চ্যালেঞ্জ। আবার তাদের কথামতো সমঝোতার বিষয় প্রকাশ্যে এলে নির্বাচনে যে কোনো বিরোধী পক্ষ নেই তা প্রকাশ পাবে। এ অবস্থায় সময় নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করতে চাইছে আওয়ামী লীগ।

এতদিন আসন সমঝোতার বিষয়ে সরাসরি নাকচ করে আসছিল জাতীয় পার্টি (জাপা)। কিন্তু রোববার জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু ভিন্ন ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। একই কথা বলেন- গতকালও। তিনি বলেন, দলের প্রয়োজনে যেকোনো কৌশল নেয়া লাগতেই পারে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএম’র মতো নতুন দলের উপর ভরসা না রাখতে পারায় পুরনো মিত্র জাতীয় পার্টিকেই বিরোধী দল হিসেবে সংসদে নিতে চাইছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে দেনদরবারে দু’দলের মধ্যেই ছাড় দেয়ার মনমানসিকতা গড়ে উঠেছে। সবশেষ গত শনিবারও বৈঠক করেন দু’দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। জাতীয় পার্টি শুরুতে ঢাকার দু’টি আসনসহ ৭০টি আসন দাবি করে। এটি শেষতক আসে ৩৫টি আসনে। তবে এতে আওয়ামী লীগের গ্রীন সিগন্যাল মেলেনি। ২০ থেকে ২৮ টি আসনের হিসাব- নিকাষ চলছে দুই দলের মধ্যে। তবে এসব আসনে নৌকার প্রার্থী সরে দাঁড়ালেও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবেন বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এছাড়া কৌশলের অংশ হিসেবে কোনো কোনো আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীও থেকে যেতে পারেন।

জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করছেন এমন অবস্থায় তাদের অনেকে জয়ী হতে পারবেন না। তখন হয়তো নতুন এক সংকটে পড়তে পারে দলটি। তবে নির্বাচনে থাকার জন্য দলটির উপর নানামুখী চাপ রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ফরমালি এবং ইনফরমালি বৈঠক হচ্ছে। রাজনীতির কারণে আমরা যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখি। আমার শক্তি হচ্ছে এন্টি আওয়ামী লীগ ভোট।

১৪ দলের শরিকদের আরও অপেক্ষা করতে হবে: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শরিকদের অন্ধকারে রেখেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়ে আসলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি আসন সমঝোতা। দীর্ঘদিনের মিত্র ১৪ দলকে অনেকটা পার্শ্বচরিত্র করে রেখে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে মনোযোগী শাসক দল। এমনকি এসব দলের জনপ্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে ১৪ দলের বৈঠকে। বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না শরিকরা। অন্যদিকে শরিকদের অযাচিত দাবিতেও বিরক্ত আওয়ামী লীগ।

আরো পড়ুন : নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিন্তু প্রতিহিংসা করা যাবে না

 

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *