‘সীমিত’ আসনে সন্তুষ্ট নয় শরিকরা, অপেক্ষায় জাতীয় পার্টি

জনপ্রতিনিধি জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি নির্বাচন প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনো পুরোপুরি সমাধান হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটকে ১৬ আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবার আপাতত সাতটি আসন ছাড় দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই নৌকা নিয়ে ভোট করবেন। এ ‘সীমিত’ আসনে সন্তুষ্ট নয় শরিক দলের নেতারা। তারা পুনর্বিবেচনার জন্য দাবি জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, জাতীয় পার্টিও (জাপা) অপেক্ষায় রয়েছে কয়টি আসন ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিলেও লাঙল প্রতীক নিয়ে ভোট করবে। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতেও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সমঝোতার সঠিক সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। সোমবার দেওয়া হবে প্রতীক বরাদ্দ। সে কারণে আজই হতে পারে ভাগাভাগির শেষ দিন। কী হচ্ছে, তা দেখার অপেক্ষায় সবাই। কোন দল কতটা আসন পাচ্ছে, তা পরিষ্কার বার্তা পাওয়া যেতে পারে আজ। ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা আসন পুনর্বিবেচনার কথা জানালেও কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ নিয়ে শরিক দলের নেতাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ বিরাজ করছে।

তারা বলছেন, জোটের শরিকদের প্রত্যাশিত চাওয়া পূরণ করা হয়নি। বিগত সময়ের চেয়ে আসন সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া জোট নেতাদের ‘প্রয়োজনীয়তা’ শেষ করার ইঙ্গিত দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আজ ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে জোটের আসন আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবকিছু নির্ভর করছে জোটের প্রধান, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার জন্য অনেক দিন আগে থেকে তাগিদ দিয়ে আসছিলেন শরিক জোটের নেতারা। কিন্তু সময় হয়ে ওঠেনি। ৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ১৪ দলের শরিক নেতারা। ওইদিন আসন সমঝোতায় তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আসন সমঝোতার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে। এরপর আমির হোসেন আমুর বাসায় একাধিকবার বৈঠক হয়। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার শরিকদের সাতটি আসন ছাড়ের কথা জানানো হয়। সে আসন নিয়ে সন্তুষ্ট নয় জোটের শরিকরা। তারা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।

শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে জোটের শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বিনয়ের সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি করেছি। যে সাতটি আসনের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা আরেকটু বাড়ানো দরকার। পুনর্বিবেচনার কী ফলাফল হয় দেখা যাক। তারপর আমরা উত্তর দেব।’

এদিকে, একই দিন দুপুরে ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১৪ দলে কয়েকটি নৌকা দেব। সাতটা নির্বাচনি এলাকায় আমরা নৌকার ছাড় দিতে পারব। এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন শরিক দলের যত নেতা আছেন, তাদের সন্তুষ্ট-অসন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। যার যার প্রতীকেই নির্বাচন করতে পারবে সবাই। তাদের কেউ বাধা দেয়নি, দেবেও না। তাদের সবার এবার নির্বাচন করার সুযোগ আছে। তারা যার যার প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। কারও ব্যাপারে কোনো বাধা নেই।’

অন্যদিকে, গত বৃহস্পতিবার রাতে যে সাতটি আসন ভাগাভাগির কথা জানানো হয়, সেখানে নেই শরিক জোটের তরিকত ফেডারেশনের নাম। এ নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। চট্টগ্রাম-২ আসনে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওই আসনের বর্তমান এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, আমি নৌকা পেয়েছি, তা আগেই তাকে নিশ্চিত করা হয়েছে। সুপ্রিম পার্টি সম্পর্কে তিনি বলেন, তিন মাস আগে নিবন্ধন পেয়ে যদি কেউ মনোনয়ন পায়, তাহলে রাজনীতির অবস্থান কোথায় যাবে? সুপ্রিম পার্টি তো ১৪ দলীয় জোটে নেই। তারা জোটবদ্ধভাবে ভোট করবে, নৌকা প্রতীক নেবে এমন চিঠিও ইসিতে দেয়নি। নজিবুল বশর বলেন, তাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী? ক্যারিয়ার কী? হঠাৎ কেউ আসল, দু-চারটা প্রোগ্রাম করল, বলে দিলেন আছে! এটা দেশের জন্য আগামী রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত।

জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি নিয়ে আমরা মোটেও সন্তুষ্ট নই। আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এর আগেও আমাদের সাতটি, পাঁচটি আসন দেওয়া হয়েছিল। এখন তিনটি আসন দিচ্ছে। এটা যুক্তিযুক্ত হয়নি বলে মনে হচ্ছে।’ জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেভাবে আসন বণ্টন করল, সেখানে বৈষম্য করা হয়েছে। অনেক দল বৈষম্যের শিকার হয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আবারও বৈঠক চেয়েছি। একই সঙ্গে আসন বণ্টন পুনর্বিবেচনার দাবি করেছি।’

শেষ অপেক্ষায় জাতীয় পার্টি : মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আর মাত্র এক দিন বাকি থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা না হওয়ায় জাতীয় পার্টিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। গত তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট ও সমঝোতা করে ভোট করা এ দলটি ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে এরই মধ্যে আসন সমঝোতার লক্ষ্যে একাধিক বৈঠক করেছে। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সূত্রের দাবি, অন্তত ৩০টি আসনে সমঝোতার বিষয় সামনে নিয়ে এগোচ্ছে জাতীয় পার্টি। আগে ৫০টির বেশি আসনের দাবি থাকলেও এখন তা কমিয়ে এনেছে দলটি। সর্বশেষ বৈঠকে ২৬টি আসনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ঢাকায় দুটি আসনে আওয়ামী লীগের কাছে ছাড় চাইলেও একটির বেশি আসনে ছাড় না দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আরো পড়ুন : শতাধিক আসনে সহিংসতার শঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *