আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বা মহাজোট গঠন না করলেও ২৬ আসনে গোপন সমঝোতায় জাতীয় পার্টি (জাপা) নির্বাচনে অংশ নেয়।
সমঝোতার ২৬ আসনে নৌকার প্রার্থী নেই। তবে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখানোর জন্য সমঝোতার বাইরের আসনগুলোয় জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হয়নি। ফলে ২৮৩ মনোনয়ন দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত ২৪২ আসনে লাঙল প্রতীকে ভোট করছে জাতীয় পার্টি। এদিকে নৌকা প্রতীকের ছাড় না পেলেও অন্তত অর্ধশত আসনে লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে বর্তমান সংসদ সদস্য যারা নৌকার ছাড় পাননি তারা গড়ে তুলেছেন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
জানা যায়, বর্তমান সংসদের এমপি হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের ছাড় না পাওয়া নেতারা হলেন ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশীদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, রংপুর-১ মসিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর-৩ সাদ এরশাদ, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রত্না, পিরোজপুর-৩ রুস্তম আলী ফরাজী ও ময়মনসিংহ-৪ আসনে রওশন এরশাদ। এর মধ্যে রওশন এরশাদ ও সাদ এরশাদ দলের মনোনয়ন নেননি। মসিউর রহমান রাঙ্গা ও রুস্তম আলী ফরাজী মনোনয়ন পাননি।
সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা টানা দুবারের সংসদ সদস্য। তিনি জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে নিজ নির্বাচনি এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। এজন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে তিনি শক্তভাবে মাঠে নেমেছেন। কাজী ফিরোজ রশীদ নৌকার বিরুদ্ধে লড়াই করবেন না বলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে লিয়াকত হোসেন খোকা টানা দুবার সংসদ সদস্য হিসেবে তাঁর নির্বাচনি এলাকায় শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তি গড়েছেন। তার আসনেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্তভাবে লড়াই করছেন। এ ছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্য হিসেবে সুনামগঞ্জ-৪-এ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, বরিশাল-৬-এ নাসরিন জাহান রত্না সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করে নৌকার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।
জানা যায়, বর্তমান সংসদ সদস্য ছাড়াও জাতীয় পার্টির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা তাঁদের নির্বাচনি এলাকায় লাঙল প্রতীক নিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা-১ সালমা ইসলাম, ঢাকা-৭ সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, সিলেট-৩ আতিকুর রহমান আতিক, সিলেট-৫ সাব্বির আহমদ, কক্সবাজার-১ হোসনে আরা, কক্সবাজার-৩ মো. তারেক, জামালপুর-২ মোস্তফা আল মাহমুদ, সিরাজগঞ্জ-২ আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, সিরাজগঞ্জ-৬ মোক্তার হোসেন, চাঁদপুর-১ এ কে এস এম শহিদুল ইসলাম, রংপুর-২ আনিসুল ইসলাম মণ্ডল, রংপুর-৬ মো. নূর আলম মিয়া, টাঙ্গাইল-৬ আবুল কাশেম, কুমিল্লা-১ আমির হোসেন ভূইয়া, কুমিল্লা-১১ মোস্তফা কামাল, কুষ্টিয়া-১ শাহরিয়ার জামিল জুয়েল, নীলফামারী-১ লে. কর্নেল (অব.) তসলিম, ঝিনাইদহ-২ মেজর (অব.) মাহফুজুর রহমান, যশোর-২ ফিরোজ শাহ, যশোর-৪ জহুরুল হক, গাইবান্ধা-৩ ইঞ্জিনিয়ার মাইনুর রাব্বী চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ মোবারক হোসেন দুলু, বরিশাল-৫ ইকবাল হোসেন তাপস, নারায়ণগঞ্জ-১ মো. সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ-২ আলমগীর শিকদার লোটন, সিলেট-২ ইয়াহিয়াসহ অনেকেই।
জানা যায়, নৌকা প্রতীকের ছাড় না পাওয়া নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বার্থের সমঝোতায় হেভিওয়েট প্রার্থী ও দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে বলি দিয়েছে জাতীয় পার্টি। দলের শীর্ষ নেতাদের এমন সিদ্ধান্তে নাখোশ বঞ্চিতরা। তাঁদের দাবি, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বণ্টনে তাঁরা দলীয় নেতাদের ষড়যন্ত্রের শিকার। ভোটের মাঠে নিজেদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে চান তাঁরা। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন অনেকে। তাঁদের এমন অভিযোগের বিষয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। তবে বঞ্চিতরাসহ দলের প্রার্থীরা লাঙল প্রতীক বরাদ্দের পর নিজ নিজ এলাকায় শোডাউন শুরু করেছেন। তাঁরা যে বাদ পড়ছেন, সেটা সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা নেতারা আগে থেকেই জানতেন। তা সত্ত্বেও বিষয়টি মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত গোপন রেখেছেন যাতে দলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়। ২৮৩ আসনের মধ্যে মাত্র ২৬টিতে ‘গোপন সমঝোতা’ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তবে নৌকা প্রতীকের ছাড় না পেলেও নিজ সাংগঠনিক দক্ষতায় নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করে সম্মানজনক অবস্থান ধরে রাখতে চান জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।
আরো পড়ুন : যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ল মন্ত্রীর এপিএস এমদাদ