গাজীপুরে স্বস্তিতে নেই নৌকার প্রার্থীরা, আলোচনায় আখতারউজ্জামান

অনুসন্ধানী ওকে নিউজ স্পেশাল জনপ্রতিনিধি জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি নির্বাচন প্রচ্ছদ বিনোদন মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

গাজীপুর প্রতিনিধি : গাজীপুরের পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় গোটা নির্বাচনি এলাকা এখন সরগরম। প্রার্থীদের প্রতীকে ভোট চেয়ে এলাকায় মাইকিং, পোস্টার ঝোলানো, লিফলেট বিতরণ ও পথসভা চলছে জোরেশোরে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থীরা তাদের দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা ও কুশলবিনিময় করছেন। এ সময় তারা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। প্রার্থীর সঙ্গে কর্মীরাও লিফলেট নিয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোটারদের কাছে তাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরছেন।

এদিকে গাজীপুর-৫ আসনে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ডাকসু ভিপি মো. আখতারউজ্জামানের পক্ষে। তার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যায় গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কিছু অল্প বয়সি ছেলে-পেলে নিয়ে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং উপজেলা কমিটিগুলো গঠন করেছেন মেহের আফরোজ চুমকি। যারা আসলে দল পরিচালনায় কোন দক্ষতাই রাখেনা। যার প্রেক্ষিতে উপজেলার সব জায়গায় দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলেন, আখতারুজ্জান সব দিক থেকেই যোগ্য প্রার্থী।

তারই প্রতিফলন হিসেবে গত ২৪ ডিসেম্বর বিকেল তিন ঘটিকার দিকে কালীগঞ্জের জামারপুরে এক নির্বাচনি প্রচারনার হাজারো মানুষের সভায় তুমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাত বারের চেয়ারম্যান আবু বককর বাক্কু বলেন সি. এস, এস. এ., আর. এস. এবং বি. এস, কাগজ ছাড়া ডি. এস. কাগজ নিয়ে আমরা যদি জমি পেতে চাই তাহলে কি সম্ভব? আমাদের নৌকার প্রার্থীতো ডি. এস. কাগজ নিয়ে জমি পেতে চাচ্ছেন, যে কাগজ এখনো কার্যকরই নয়। তিনিতো ডি-ক্যাটাগড়ির নেতাদের নিয়ে প্রচারনা করছেন। তাই আমাদের এখনই পরিবর্তন করতে হবে। আপনারা ভয় পাবেননা, সকলে কেন্দ্রে গিয়ে যথা সময়ে ট্রাক মার্কায় ভোট দিয়ে আসবেন।

গত ২৫ ডিসেম্বর ছিল খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের উৎসব বড়দিন। এই উপলক্ষ্যে সকল দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সমস্তদিন প্রচারনায় ব্যাস্ত থাকেন। সরজমিনে দেখা যায় সকাল সকালই নৌকার প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকি তুমুলিয়া গীর্জা হয়ে রাঙ্গামাটিয়া গীর্জা, দরিপাড়া গীর্জা, নাগরি গীর্জা, মোটবাড়ি গীর্জাসহ খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন এবং নৌকার পক্ষে ভোট চান। এসময়  নৌকার প্রার্থীর সাথে ৩০/৪০ জনের একটি বহর থাকে। এদিকে একই দিন নৌকার প্রার্থী তুমুলিয়া গীর্জা থেকে বেড় হবার পর-পরই হাজির হন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আখতারুজ্জামান। উনিও কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া গীর্জা হয়ে রাঙ্গামাটিয়া, দরিপাড়া, নাগরি, মোটবাড়ি গীর্জাসহ সকল গীর্জায় খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড়দিন উৎসবে হাজির হয়ে কুশল বিনিময় করে ট্রাক প্রতীকে ভোট চান । লক্ষনিয় বিষয় এই যে, যেখানে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা বর্তমান এমপির সাথে মাত্র ৩০/৪০ জন মানুষ ভোট প্রার্থনা করছেন সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আখতারুজ্জামানের পক্ষে উৎসবমুখর পরিবেশে শত-শত নেতাকর্মী সাধারন মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। মনে হল যেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে উপস্থিত স্থানীয় নেতাকর্মীরা সবাই আখতারউজ্জামানের পক্ষে কাজ করছেন। এর মধ্যে অনেকেই পরিচয় গোপন করার শর্তে অনেক কথাই বলে ফেলেন। এলাকাবাসী বলছেন, আখতারউজ্জামান রাজনীতিক ব্যাক্তি, উনি সাধারন জনগণের কথা বুঝেন, আর চুমকি আপাতো পৈত্রিক সম্পত্তি পেয়েছেন, যার কারণে উনি ওনারমতো করে কিছু তোসামোদকারী লোক নিয়ে দল পরিচালনা করছেন, যারা আসলে শুধুমাত্র নিজের সার্থই উদ্ধার করে গেছেন, সাধারন মানুষের জন্য কোন কাজ করেন নাই।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছ থেকে oknews24bd.com এর পাঠকদের জন্য নেয়া-

গাজীপুর-৫ আসনে আলোচনায় থাকা ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ডাকসু ভিপি মো. আখতারউজ্জামান বলেন, গাজীপুর-৫ আসনে আমার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আমি বিজয়ে শতভাগ আশাবাদী। এবার নির্বাচন শান্তিপূর্ণ এবং ভালো হবে। তবে যারা এলাকায় মাস্তানি করে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি। তিনি বলেন, বিগত সময়ে যে উন্নয়ন করেছি সাধারণ মানুষ আমাদেরই বেছে নেবে।

গাজীপুরের পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুটি আসনে দুজন মন্ত্রীও প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন। তাদের প্রার্থিতার কারণে ভোটের মাঠে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। তার ওপর গাজীপুর-১, গাজীপুর-২ এবং গাজীপুর-৫- স্বতন্ত্র তিন প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি নির্বাচনি প্রচারণায় নেমেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীর আলমের মা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে।
গাজীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম রাসেল। এ আসনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আওয়ামী লীগ প্রার্থী। গাজীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন। এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। গাজীপুর-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি মো. আখতারউজ্জামান। এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকেই আসনগুলোতে ওই তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য সরাসরি কাজ করছেন জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রহমত আলীর মেয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি রুমানা আলী টুসী। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ এবার মনোনয়ন পাননি। তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী। এদিকে গাজীপুর-৪ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনেও সিমিন হোসেন রিমির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাজউদ্দীন আহমদের ভাগ্নে কৃষক লীগ নেতা শিল্পপতি আলম আহমেদ। তিনিও নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন। নৌকার প্রার্থীরা বলছেন, বিগত দিনে গাজীপুরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। মানুষ অবশ্যই নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নতুনদের সুযোগ দেওয়ার জন্য ভোটারদের সমীহ আদায়ের চেষ্টা করছেন।

আরো পড়ুন : রূপগঞ্জে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম এপিএস এমদাদ, ভয়ংকর অপরাধজগৎ তার দখলে

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *