নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভোটের দুই দিন আগে থেকে পাঁচ দিনের জন্য আরও ১ হাজার ৯০৪ জন নির্বাহী হাকিম চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে ওই চিঠি পাঠান।
এদিকে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি ও নিরাপত্তা চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে আবেদন করেছেন চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ১৫ জনপ্রতিনিধি। বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে আবেদনটি পৌঁছে দেন তারা।
আবেদনে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, সুরাজপুর মানিকপুর ইউপির চেয়ারম্যান আজিমুল হক, পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরীসহ ১৫ জন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি স্বাক্ষর করেন।
আবেদন বলা হয়, বর্তমান এমপি জাফর আলম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তার পক্ষে কাজ না করায় এবং বিপক্ষের হাতঘড়ি মার্কার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কাজে অংশগ্রহণ করায় তিনি নিজে এবং তার গঠিত নিজস্ব অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী অবৈধ অস্ত্রের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গুম ও হত্যার হুমকি প্রদান করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও তার উচ্ছৃঙ্খল কর্মী বাহিনী দ্বারা হাতঘড়ি প্রতীকের নির্বাচনী পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এমনকি ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন লাগাতেও বাধা প্রদান করা হচ্ছে। যা সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ধরনের হুমকি প্রদর্শন, চাপ প্রয়োগ এবং নির্বাচনী সরঞ্জাম ছিঁড়ে ফেলা ও পোস্টার লাগাতে বাধা প্রদানের মতো অপতৎপরতা একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বড় অন্তরায় এবং আমরা জনপ্রতিনিধিগণও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ অবস্থায় চলমান ভীতিকর পরিস্থিতি ও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে জনমনের সংশয় দূর করতে কক্সবাজার-১ আসনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা বিধান ও হয়রানি রোধে উল্লিখিত অভিযোগ যাচাই সাপেক্ষে পরবর্তী কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।
এদিকে চকরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাফর আলমের কর্মকান্ডের বিষয়ে মুখ খুলেছেন স্থানীয় ১৫ জনপ্রতিনিধি। কক্সবাজার-১ আসনে হাতঘড়ি প্রতীকের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমের পক্ষে নির্বাচন কমিশনে দায়ের করা অভিযোগ মিথ্যা বলেও সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন চকরিয়া এবং পেকুয়ার জনপ্রতিনিধিরা।
চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুরাজপুর মানিকপুর ইউপির চেয়ারম্যান আজিমুল হকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী।
এ ছাড়াও কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য আবু তৈয়ব, পেকুয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উম্মে কুলসুম মিনু, মগনামার চেয়ারম্যান মো. ইউনুস, বিএমচরের এস এম জাহাঙ্গীর আলম, রাজাখালীর নজরুল ইসলাম বাবুল, বদরখালীর নুরে হোছাইন আরিফ, লক্ষ্যারচরের আওরাঙ্গজেব বুলেট, কাকারার শাহাব উদ্দিন, বমু বিলছড়ি মনজুরুল কাদের, ঢেমুশিয়ার মঈনুদ্দিন চৌধুরী, উজানটিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, চিরিংগার সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন প্রমুখ জনপ্রতিনিধি।
ভোটে আরও ১৯০৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চায় ইসি : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভোটের দুই দিন আগে থেকে পাঁচ দিনের জন্য আরও ১ হাজার ৯০৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে ওই চিঠি পাঠান।
তফসিল ঘোষণার পর ২৮ নভেম্বর থেকে ভোটের মাঠে আচরণবিধি প্রতিপালনে সাড়ে সাত শর বেশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন। ২৯ ডিসেম্বর থেকে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে আট বিভাগে আরও ১ হাজার ৯০৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের চাহিদা দেওয়া হলো। চিঠিতে বলা হয়, ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার পাশাপাশি ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিন নির্বাচনি এলাকার সার্বিক শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ প্রতিরোধের জন্য এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে, বিশেষ করে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও সশস্ত্র বাহিনীর টিমের সঙ্গে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করা প্রয়োজন। আট বিভাগে বর্তমানে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ১ হাজার ১৬২ জন। এর মধ্যে ৭৫৪ জনকে এরই মধ্যে ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়েছে। এখন ঢাকা বিভাগে ৩৮৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১২৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৭৬ জন, সিলেট বিভাগে ১৪৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ২১৯ জন, বরিশাল বিভাগে ১৮৬ জন, খুলনা বিভাগে ১৮৩ জন ও রংপুর বিভাগে ২৮২ জন অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছে ইসি।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দুটি ব্যাচে বিভক্ত করে প্রথম ব্যাচে ৩১ ডিসেম্বর ও দ্বিতীয় ব্যাচের কর্মকর্তাদের ২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচনী অপরাধ আমলে নেওয়ার জন্য ৬৫৩ জন বিচারিক হাকিম ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিন ৩০০ সংসদীয় আসনে দায়িত্ব পালন করবেন। আরও ৩০০ বিচারিক হাকিম এখন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। সব মিলিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আড়াই সহস্রাধিক নির্বাহী হাকিম এবং প্রায় ১ হাজার বিচারিক হাকিম নিয়োগ পাচ্ছেন।
ওসির প্রত্যাহার চেয়ে ইসিতে অভিযোগ সুরঞ্জিত-পত্নীর
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিনের প্রত্যাহার চেয়ে ইসিতে অভিযোগ দিয়েছেন সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. জয়া সেনগুপ্তা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কাঁচি মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গতকাল তিনি নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা অভিযোগে উল্লেখ করেন, সম্প্রতি বদলি হয়ে দিরাই থানায় দায়িত্ব নিয়েই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার নানা কৌশলে কাঁচি মার্কার ভোটার ও কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি ও হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। ভোটারদের নাশকতা ও পুলিশের ওপর আক্রমণকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলায় গ্রেফতার করার ভীতি প্রদর্শন করছেন।
কোনো কোনো ভোটার-কর্মীকে থানায় ডেকে নিয়ে তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদের পক্ষে কৌশলে ভোট চাচ্ছেন। ওই প্রার্থীর দূরের সম্পর্কীয় আত্মীয় হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন। কোনো কোনো ভোটার ভোট কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিচ্ছেন। এতে করে সুষ্ঠু ভোট না হওয়ার আশঙ্কা ছাড়াও ভোটার উপস্থিতি কম হওয়াসহ উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
আরো পড়ুন : থামছে না নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন