প্রচার-প্রচারণায় ইসলাম কি বলে

আইন-আদালত জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি ধর্ম নির্বাচন প্রচ্ছদ মুক্তমত হ্যালোআড্ডা

মো. আবু তালহা তারীফ : নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। তারা দোকানপাটে, বাজার, মহল্লায় মহল্লায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও সভা-সমাবেশের মাধ্যমে প্রচারণা করে ভোট চাচ্ছেন। প্রচার-প্রচারণায় এমন কোনো কাজ করা যাবে না যার কারণে নিজেকে অপরাধী হতে হয়। মিথ্যা অঙ্গীকার, গীবত, চোখোলখুরি, সহিংসতামূলক আচরণসহ জয়ী হতে মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা যে কোনো ধরনের মিথ্যা কখনো শুভ হতে পারে না। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে এসেছে, প্রিয় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সত্যবাদিতা হচ্ছে শুভ কাজ। আর শুভ কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর বান্দা যখন সত্য বলতে থাকে, এক সময় আল্লাহর কাছে সে সত্যবাদী হিসেবে পরিচিত হয়। আর মিথ্যা হচ্ছে পাপাচার, পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়, বান্দা যখন মিথ্যা বলতে থাকে, আল্লাহর কাছে এক সময় সে মিথ্যুক হিসেবে গণ্য হয় (মুসলিম)।

নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা করতে গিয়ে অনেক সময় দলীয় কর্মীরা জোর করে অন্যদের প্রচারণায় বা সভা-সমাবেশে উপস্থিত করার চেষ্টা করে। যাওয়ার জন্য দাওয়াত দেওয়া যেতে পারে কিন্তু ভয়ভীতি কিংবা কষ্ট দিয়ে জোর করে কাউকে কোথাও নেওয়া উচিত নয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মানুষ চলাচলের রাস্তায় গাড়ির বহর, মোটরসাইকেলের মহড়া অন্য কোনো পন্থায় বা রাস্তা বন্ধ করে দলীয় নেতা-কর্মীরা নির্বাচনি প্রচারণা করছেন। রাস্তার পাশে বা বাজারের দোকানপাটে প্রচারণা করতে গিয়ে দেখতে হবে মানুষ চলাচলের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না? পথচারীকে কখনো কষ্ট দেওয়া যাবে না। প্রচারণার জন্য সভা-সমাবেশ করতে হলে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। কেননা কোনো অসুস্থ ব্যক্তি বা জরুরি কাজে বের হওয়া যাতায়াতকারীকে কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা রাস্তায় বসিও না। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসুল! আমাদের তো এর প্রয়োজন হয়, পরস্পরে প্রয়োজনীয় কথা বলতে হয়। তখন তিনি বললেন, বসতে হলে রাস্তার হক আদায় করে বসিও। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রসুল! রাস্তার হক কী? তিনি বললেন, রাস্তার হক হলো-১. দৃষ্টিকে অবনত রাখা, ২. কাউকে কষ্ট না দেওয়া, ৩. সালামের জবাব দেওয়া, ৪. সৎকাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা (বুখারি)। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা করতে গিয়ে পরিবেশ নোংরা, দূষিত ও অন্যের ব্যক্তিগত সম্পদ নষ্ট করা যাবে না। বাড়ির দামি দরজায়, গাড়ির গ্লাসে স্টিকার, যেখানে সেখানে পোস্টার, বিনা অনুমতিতে অন্যের বাড়ির রং করা দেয়ালে প্রচারণার জন্য পোস্টার বা দেয়াল লিখন, অতিরিক্ত মাইকের আওয়াজে শব্দদূষণ করে এলাকায় শিশু ও অসুস্থ বৃদ্ধসহ অন্যদের কষ্ট দেওয়া যাবে না। এক কথায় অন্যের সামান্যতম কোনো ধরনের ক্ষতি হয় এমন ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার নামে শরিয়তবিরোধী, সামাজিক ও রাষ্ট্রবিরোধী অনৈতিক কোনো কাজ করা যাবে না। যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ করে নির্বাচনি প্রচারণা করতে হবে। প্রচারণার নামে কোনো কিছুই অতিরিক্ত করা বা অপচয় করা ঠিক নয়। বৈধ কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করাই অপচয়। অবশ্যই অপচয়কারীকে মহান আল্লাহতায়ালা অপছন্দ করেন। আল্লাহ বলেন, তোমরা খাও ও পান কর, কিন্তু অপচয় কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না (সুরা আল আ’রাফ-৩১)।

আরো পড়ুন : আজ বরিশাল সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *