মিলার সিন্ডিকেটের চাল নিয়ে চালবাজি

অনুসন্ধানী অর্থনীতি ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ জাতীয় প্রচ্ছদ মুক্তমত লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

চট্টগ্রামের আড়তগুলো চালের বস্তায় ঠাসা। চলছে আমনের ভরা মৌসুম। এরপরও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়াতলীতে প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা। ৬০ টাকা কেজির নিচে কোনো চালই পাওয়া যাচ্ছে না।

মিলাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাইকারদের। বর্তমানে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলেও জানান তারা। ক্রেতাদের অভিযোগ- বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত দাম হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

আড়তদাররা বলছেন, মিলাররা দাম বাড়িয়ে দিলে আড়তদারদের কিছুই করার থাকে না। মূলত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে স্থিতিশীল থাকলেও নির্বাচনের পর থেকেই চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে।

এদিকে খাদ্য অধিদপ্তর খোলাবাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ডিলারদের মাধ্যমে নিম্ন-আয়ের মানুষের কাছে কম দামে চাল বিক্রি করছে। এরপরও দাম স্থিতিশীল থাকছে না। বেশির ভাগ মিলার চাল মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে জি-টু-জির আওতায় বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা হলেও বাজারে চালের দামে প্রভাব পড়ছে না।

পাহাড়তলী ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, নির্বাচনের পরের দিন ৮ জানুয়ারি থেকে উত্তরবঙ্গের মোকামগুলো চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি চালের সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে রেকর্ড মজুতের পাশাপাশি আমনের ভরা মৌসুমে সংকট না থাকলেও কারসাজির মাধ্যমে অস্থির করে তোলা হয়েছে দেশের চালের বাজার।

নির্বাচনের পর বিগত সাত দিনে প্রকারভেদে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্ত পুরোপরি স্থিতিশীল ছিল বাজার। নির্বাচনের পর ৫০ কেজির প্রতি বস্তা নূরজাহান ২০০, সিদ্ধ মিনিকেট আড়াইশ এবং দেশি বেতির দাম বস্তায় ৩৫০ টাকা বেড়েছে।

নির্বাচনের আগের দিন পাইকারিতে সিদ্ধ চালের মধ্যে প্রতি বস্তা জিরাশাইল ছিল ৩ হাজার ১৫০, পাইজাম ২ হাজার ৫০০, নূরজাহান ২ হাজার ৩০০, মিনিকেট ২ হাজার ৩৫০, ভিয়েতনাম বেতি ২ হাজার ২৫০ এবং দেশি বেতি ২ হাজার ৪০০ টাকা। সোমবার প্রতি বস্তা জিরাশাইল ৩ হাজার ৩০০, পাইজাম ২ হাজার ৬৫০, নূরজাহান ২ হাজার ৫০০, মিনিকেট ২ হাজার ৭০০, ভিয়েতনাম বেতি ২ হাজার ৫০০ এবং দেশি বেতি ২ হাজার ৮০০ টাকায় উঠে গেছে।

সিদ্ধ চালের মতো আতপ চালের ক্ষেত্রেও ৩ হাজার ২০০ টাকার কাটারি হয়েছে ৩ হাজার ৫৫০ টাকা, ২ হাজার ৭০০ টাকার মিনিকেট ৩ হাজার এবং ৩ হাজার ৪০০ টাকার নাজিরশাইল ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে চিনিগুঁড়া চালের দাম প্রতি বস্তা ৯০০ টাকা বেড়ে উঠে গেছে ৬ হাজার ৯০০ টাকায়। নগরীর চালের পাইকারি বাজার পাহাড়তলী চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও অন্যান্য বাজার ঘুরে দেখা যায়, চালের আড়তে থরে থরে সাজানো রয়েছে বস্তা। বেচা-বিক্রিও স্বাভাবিক। কিন্তু দাম কমার পরিবর্তে আরও বাড়ছে।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা ও জোগানের ওপর ভিত্তি করে এখন চালের বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় না। সিন্ডিকেটই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। করপোরেট হাউজগুলো ও মিলাররা বাজার থেকে ধান কিনে নিজেদের গুদামে মজুত করায় চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর মাঝে খাদ্য সংকটের গুজব রটিয়ে কিছু কিছু মোকাম মালিকও চাল মজুত করছেন। তারা চাহিদা অনুযায়ী চাল সরবরাহ করছেন না। দেশের উত্তর ও দক্ষিণা লের মোকামগুলো থেকে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন প্রতি ট্রাকে ৩০০ বস্তা করে ৫০ ট্রাক চাল চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারে এবং ৭৫ ট্রাক চাক্তাই চালপট্টিতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে মোকাম মালিকরা চাল পাঠাতে গড়িমসি করছেন।

চাক্তাইয়ের চালের আড়তদার মহিউদ্দিন মাহি বলেন, ‘চালের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। উত্তরবঙ্গের চালের মোকামগুলো নির্বাচনের পর থেকে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি চালের সরবরাহও কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে অস্থির বাজার। সরকারের কাছে চালের যে মজুত রয়েছে, এর চেয়ে কয়েকগুণ মজুত রয়েছে চালকলগুলোয়। কাজেই দাম বাড়ার বা সংকট হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখি না। প্রশাসন আড়তগুলোয় অভিযান চালালেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।’

আরো পড়ুন : গাজীপুরে পূবাইলে ঝুট গোডাউনে আগুন

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *