ক্ষেতলালের মনঝার এলাকার কৃষক সুজাউল ইসলাম কয়েকদিন আগে ১১০ শতাংশ জমির আলু তুলেছেন। ২ হাজার টাকা দরে ১৬৫ মণ আলু বিক্রি করেছেন ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। খরচ বাদে অন্তত ২ লাখ ১০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আরও ১০ বিঘায় আলু রয়েছে। তবে যেভাবে দাম কমছে, তাতে তোলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলছিলেন, ‘দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়। আলু তো তুলতেই হবে। বয়স বেশি হলে ফেটে নষ্ট হয়ে যাবে।’
জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলায় এবার ৩৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করেছেন কৃষক। এরমধ্যে আগাম জাতের আলু আছে সাড়ে সাত হাজার হেক্টর। দাম বেশি থাকায় কৃষকরা আলু তুলতে শুরুও করেছেন। ফলন আগের মৌসুমের চেয়ে বেশি। তবে দাম হঠাৎ কমে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। দু’দিন আগে পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা কেজি। অথচ গতকাল বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ২৫-২৬ টাকায়।
আলুর দাম কমায় অবশ্য খুশি সাধারণ ক্রেতারা। পুনট হাটে ছিলিমপুর গ্রামের মীর শহীদ বলেন, এমনিতে সব সবজির দাম বেশি। তার ওপর আলুর দাম ছিল আগুন। গত সোমবারও ৫২ টাকা কেজি কিনেছেন। তবে বৃহস্পতিবার এসে দেখেন ২৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই পাঁচ কেজি কিনেছেন। এরকম দাম থাকলে কারও সমস্যা হওয়ার কথা না।
হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় আগাম জাতের আলু চাষিরা পড়েছেন বিপদে। চাষে খরচ বৃদ্ধি পেলেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তারা। হতাশ চাষিদের ভাষ্য, গত বছরের তুলনায় এবার খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। ফলনও বেড়েছে। দু’দিন আগে যারা আলু তুলেছেন তারা লাভবান হয়েছেন। তবে এখন যারা বিক্রি করেছেন, তারা লাভবান হতে পারেননি। চাষাবাদ, সার, বীজ, সেচ, শ্রমিকসহ সব খরচের সমান টাকা উঠে আসছে।
কিছু চাষির বিঘাপ্রতি ৭-৮ হাজার টাকা লাভ থাকছে। বাজারদর আরও কমে গেলে লোকসানে পড়বেন তারা। চাষি রমজান আলী বলেন, বাজারে জাতভেদে প্রতি মণ আলু ১ হাজার থেকে ১১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দু’দিন আগেও এসব আলু ২ হাজার থেকে ২১শ টাকা মণ ছিল। যত দিন যাচ্ছে, দাম কমছে। বাজার দর এভাবে চলতে থাকলে ফলন যতই হোক, লোকসান হবে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বাজারে জাতভেদে কেজিপ্রতি আলুর পাইকারি দর ছিল ৫০-৫২ টাকা। তবে বৃহস্পতিবার ২৫-২৬ টাকায় নেমেছে। প্রতি মণ আলুর দাম কমে হয়েছে অর্ধেক। আলু উৎপাদনে দেশের তৃতীয় বৃহৎ জেলা হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট। গত বছরের তুলনায় এবার ২২৫ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। এবার ক্যারেজ, রোমানা, স্ট্রিক, গেনোলা, মিউজিকা, ফ্রেশ, ফাটা পাকরি, বটপারকরি, রোমানা, ১২-১৩, সাদা সেভেনসহ বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করেছেন কৃষক।
বৃহস্পতিবার কালাই পৌর শহরের বালাইট মোড়ে জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের পাশে জমি থেকে আলু বিক্রি করছিলেন হযরত আলী। তিনি বলেন, ১০ শতাংশ জমিতে সাদা সেভেন জাতের আগাম আলু চাষ করেছিলেন। খরচ হয়েছে ১১ হাজার টাকা। উৎপাদন হয়েছে ১৫ মণ। ১১শ টাকা মণ দরে সাড়ে ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। লাভ হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। দু’দিন আগে বিক্রি করলে লাভ হতো অন্তত ১৯ হাজার টাকা। কাঁচামালের এ অবস্থা নিয়ে বলার কিছু নেই।
পাইকারি বাজারে দাম কমে যাওয়ায় খুচরা পর্যায়েও কমেছে বলে জানান পুনট বাজারের ব্যবসায়ী খায়রুল। তিনি বলেন, বিভিন্ন জাতের নতুন আলু উঠেছে। জাতভেদে ২৭ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি হলে লাভ বেশি হয়। কমলে লাভ কমে যায়।
মোকামে চাহিদার তুলনায় আগাম জাতের আলুর জোগান বেশি বলে জানান ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান। এ কারণে দাম কম জানিয়ে তিনি বলেন, জোগান কমলে দাম বাড়বে। কাঁচাবাজারের পণ্যের সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে এমন দর থাকবে না। দিন দিন আগাম জাতের আলু দাম কমছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, দিন যত যাবে, আলুর দামও নিম্নমুখী হবে। তবে প্রতিমণ ৭-৮শ টাকার নিচে আসবে না। চাষিদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। আলু চাষ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার বেশি জমিতে।
আরো পড়ুন : অর্ধেক সংখ্যকের পানীয় জলেই বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক