নামাজ হলো ইমানের পর শ্রেষ্ঠ ইবাদত

ওকে নিউজ স্পেশাল তথ্য-প্রযুক্তি ধর্ম নারী পুরুষ প্রচ্ছদ মুক্তমত লাইফ স্টাইল শিক্ষা সফলতার গল্প হ্যালোআড্ডা

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান : আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম জাওজি (রহ.) বলেন, ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার ১০টি আমল রয়েছে। যথা- (১) কোরআনে পাকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকা সম্পর্কিত যত আয়াত রয়েছে তা বেশি বেশি তেলাওয়াত করা। যেমন- প্রত্যেক জিনিসের একটা প্রতিক্রিয়া আছে, যে ব্যক্তি যে কথা বেশি বেশি বলে, তার মাঝে সে কথার প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সুতরাং এসব আয়াত বেশি বেশি তেলাওয়াত করার দ্বারা তার মাঝে একটা প্রতিক্রিয়া আসবে, যার দ্বারা ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচা যাবে।

(২) সুরা ফালাক ও নাস বেশি বেশি পড়া। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা পড়তেন। এমনকি মুমূর্ষাবস্থায়ও এ আমল ছাড়েননি। যখন শয্যাশায়ী হয়ে গেলেন, তখন হজরত আয়েশা (রা.) ওই সুরাদ্বয় পড়ে প্রিয় নবীর চোখে ফুঁক দিতেন। সুরাদ্বয় পড়ার অনেক ফজিলত রয়েছে, যা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

(৩) আয়াতুল কুরসি বেশি বেশি পড়া। আয়াতুল কুরসির অনেক ফজিলত রয়েছে, যা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এটা অন্তরের ওয়াসওয়াসা দূর করার জন্য অধিক সহায়ক।

(৪) সুরা বাকারা তেলাওয়াত করা। এটা অবশ্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে এর উপকার সীমাহীন। উপকারের দিকে লক্ষ্য করলে কঠিন বস্তুও সহজ হয়ে যায়। যেমন- দৈনিক শেষ রাতে ওঠে তাহাজ্জুদ পড়া, এটা অত্যন্ত কঠিন মনে হবে। কিন্তু যদি বলা হয় যে, দৈনিক রাতে ৩টার সময় এলে ১ হাজার করে টাকা দেব, তাহলে দেখা যাবে এক দিনও ভুল হবে না। সবাই দৈনিক রাত ৩টায় নিয়মিত উপস্থিত হবে, এতে কষ্ট হবে না। প্রয়োজনে রাতে না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমোবে। দুনিয়ার সাময়িক উপকার অর্জন করতে মানুষ কত তৎপর। কারণ এর উপকার সঙ্গে সঙ্গে ভোগ করতে পারে। আখেরাতের উপকার যেহেতু সঙ্গে সঙ্গে ভোগ করতে পারে না তাই তার জন্য তেমন তৎপর হয় না। যদি আখেরাতের লাভের ওপর দৃঢ় ইমান থাকে তাহলে তার জন্য আমল করা কঠিন হয় না।

(৫) সুরা বাকারার শেষ তিন আয়াত বেশি বেশি তেলাওয়াত করা। এটা খুবই সহজ আমল, তাই বেশি বেশি পড়া চাই।

(৬) সুরা হা-মিম সম্পূর্ণ পড়া।

(৭) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লাশরিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’- দোয়াটা বেশি বেশি পড়া।

এ দোয়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। বিশেষত এটি ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার জন্য অধিক সহায়ক ও কার্যকর। এ দোয়া একবার পড়লে ১০০ গোলাম আজাদ করার সওয়াব অর্জন হয়।

(৮) বেশি বেশি আল্লাহপাকের জিকির করা। জিকির আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জন করার একটা মাধ্যম। হাতুড়ির পিটুনিতে যেমন লোহার মরিচা দূর হয়, তেমন জিকিরের দ্বারা অন্তরের গুনাহ দূর হয়। সর্বদা জিকির অবস্থায় থাকা উচিত। যে কোনো জিকির করা যায়। তবে উত্তম হলো ওপরে উঠার সময় আল্লাহু আকবার, নিচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ আর সমতল ভূমিতে বিচরণের সময় লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ জিকির করা। এ ছাড়া অন্যান্য জিকির করা যায়। উঠা, বসা, শয়ন ও চলাফেরা সর্বদাই কোনো না কোনো জিকির করা চাই। এর দ্বারা অন্তর সজীব থাকে।

(৯) সর্বদা অজু অবস্থায় থাকা চাই। অজু অবস্থায় মারা গেলে শহীদী মর্যাদা অর্জন হয়। এর আরও উপকার রয়েছে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজের রাতে দেখেন- বেলাল (রা.) নবীর আগে আগে বেহেশতে যাচ্ছেন। সকালে তিনি বেলাল (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী আমল কর, যার দরুন আমার আগে বেহেশতে যাচ্ছিলে? উত্তরে বললেন, আমি তো তেমন কোনো আমল করিনি। নামাজ রোজা এগুলোই তো। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো তো সবাই করে, এ ছাড়া কোন আমল তুমি করে থাক, যা অন্যরা করে না। তিনি বললেন, আমি সর্বদা অজু অবস্থায় থাকি। ইস্তেঞ্জা করে অজুর স্থানে আসার আগে তায়াম্মুম করি। এরপর এসে অজু করি। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর জন্যই তোমাকে এমন মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে দেখতে পেয়েছি।

অজু করে কেউ যদি আমল না-ও করে, তবু অজু অবস্থায় থাকার দরুন ধরা হবে যে, ওই সময়টা সে আমলে আছে। এ ছাড়া সময় ও সুযোগ পেলে নফল নামাজ পড়া চাই। এর দ্বারাও ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা যায়। (১০) অতিরিক্ত ভক্ষণ ও অধিক কথাবার্তা বর্জন করা এবং অপ্রয়োজনীয় জনসংশ্রব থেকে বেঁচে থাকা। এ তিনটা কাজ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। কেননা এর অপকার সীমাহীন। অধিক কথা বলার মাঝে অসংখ্য গুনাহ রয়েছে। তেমনই প্রয়োজনাতিরিক্ত ভক্ষণে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতি। আর জনসংশ্রব থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা ভালো। এর দ্বারা অনেক অসুবিধা হয়ে থাকে।

যাই হোক নামাজে ওয়াসওয়াসা দুই কারণে হয়ে থাকে। ভিতরগত ও বহিরাগত কারণে। ভিতরগত যেসব কারণে ওয়াসওয়াসা আসে তা দূর করার জন্য আগে উল্লিখিত ১০টা আমল করা চাই। ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার জন্য এ ছাড়াও বেশি বেশি দোয়া করতে হবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আর বহিরাগত যে উপকরণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, তা নিজে নিজে হিম্মত করে বাদ দিতে হবে।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

আরো পড়ুন : চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেহাল অবস্থা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *