নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে এসবের প্রতিবাদে দল থেকে গতকাল গণপদত্যাগ করলেন ৯৬৮ জন নেতা-কর্মী। পদত্যাগকালে তারা বলেন, এইচ এম এরশাদ স্বৈরাচার নন, স্বৈরাচার জি এম কাদের। তাঁর অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে জাতীয় পার্টি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তিনি পল্লীবন্ধু এরশাদের নামনিশানা মুছে দেওয়ার হীনচক্রান্ত করে যাচ্ছেন।
গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের হলরুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ গণপদত্যাগের ঘোষণা দেন নেতা-কর্মীরা। রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর, আদাবর, পল্লবী, হাতিরঝিল, মিরপুর, দারুসসালাম, শেরেবাংলানগর, বাড্ডা, রূপনগর থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের ৯৬৮ নেতা-কর্মী জি এম কাদেরের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ গণপদত্যাগ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে মিছিলসহকারে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এক বছর ধরে বলে আসছেন জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। সরকারের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা বলেছেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে তিনি গোপনে সরকারে সঙ্গে আঁতাত করেছেন। শেষ পর্যন্ত পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব ৩০০ আসন থেকে প্রার্থী মনোনীত করার পর মাত্র ২৬টিতে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাওয়ার বিনিময়ে গোটা পার্টিকেই বিক্রি করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় জাতীয় পার্টির নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী-সমর্থকরা চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। পার্টির তৃণমূল পর্যায় থেকে পার্টিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের পদত্যাগের দাবি ওঠে। পার্টির এ দুরবস্থার মধ্যেও চেয়ারম্যান স্বেচ্ছাচারিতার নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করে পার্টির নিবেদিতপ্রাণ নেতৃবৃন্দকে একের পর এক অব্যাহতি দিয়ে চলেছেন। জি এম কাদের প্রতিহিংসাবশত পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীকে পার্টি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এ ছাড়া কয়েকজন নেতাকে মৌখিকভাবে অব্যাহতির কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা এরশাদপ্রেমী নেতা-কর্মীরা জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন বিপর্যস্ত সংগঠনে অবস্থান করে এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ধ্বংস দেখতে চাই না। তাই আমরা জি এম কাদেরের সংগঠন থেকে আজ গণপদত্যাগের ঘোষণা করছি এবং এ গণপদত্যাগ অব্যাহত থাকবে।
এ সময় সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী, আমানত হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা খুরশিদ আলম খুশুসহ বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগরী উত্তর জাপার প্রচার সম্পাদক এস এম হাসেমের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জাপা থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাহিন আরা সুলতানা রিমা, হাতিরঝিল থানা জাপা সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুম, মোহাম্মদপুর থানা সভাপতি নজরুল ইসলাম মুকুল, রূপনগর থানা সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ খান, শেরেবাংলানগর থানা সভাপতি আশরাফুল হক শিবলী, আদাবর থানা সভাপতি মকবুল হোসেন মুকুল, পল্লবী থানা সভাপতি আসাদ খান সামী, ছাত্রসমাজের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদপুর থানা যুবসংহতির সভাপতি আমজাদ হোসেনসহ বিভিন্ন থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, জি এম কাদের জাতীয় পার্টিকে মুদির দোকান মনে করেন। সারা দিন বনানীর দোকানে বসেন। আর তাঁর সিন্ডিকেট দিনভর দোকানদারি করে সন্ধ্যার সময় জি এম কাদেরকে লেনদেনের হিসাব দেয়। সারা দেশের সঙ্গে জি এম কাদেরের কোনো যোগাযোগ নেই।
পদত্যাগী নেতারা বলেন, জি এম কাদের পার্টিকে প্রাইভেট কোম্পানিতে রূপান্তরিত করেছেন। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন তাঁর কাছে নেই, মূল্যায়ন করা হয় চাটুকারদের। পল্লীবন্ধু এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টিকে জি এম কাদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির বিকশিত হওয়া সম্ভব নয়। এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টির সবচেয়ে অযোগ্য নেতৃত্ব হচ্ছেন জি এম কাদের। আজকে কর্মীরা গণপদত্যাগ করছেন, অথচ তাঁর কোনো লজ্জা নেই। থাকবে কী করে, দল তো তিনি বানাননি।
আরো পড়ুন : উদ্বোধনের তালিকায় ছয়টি মেগা প্রকল্প