চলতি মাসেই সংসদে বসতে যাচ্ছেন আরও নতুন ৫০ এমপি। সংরক্ষিত নারী আসনে বসবেন তারা। এরমধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের কোটায় (স্বতন্ত্রসহ) থাকছেন ৪৮ জন এমপি। আর প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কোটায় থাকছে দু’জন এমপি। বিধি অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনে রাজনৈতিক দল বা জোটের সদস্যদের পৃথক তালিকা প্রস্তুত করার বাধ্যবাধকতা আছে। বিরোধী দলের কোটায় দু’জন এমপি কারা হচ্ছেন তা অনেকটাই নিশ্চিত। জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, জাপার দুটি আসনে এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের স্ত্রী ও কো-চেয়ারম্যান শেরীফা কাদের এবং আরেক কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম। তারা দু’জনই সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোটায় কারা থাকছেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আলোচনায় রয়েছে শতাধিক নারীর নাম।
রাজনৈতিক পরিবারের বাইরেও নানা শ্রেণি-পেশার নারীদের নাম উঠে আসছে আলোচনায়। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার বক্তব্য- সংরক্ষিত নারী আসনের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর। তিনি যাদের যোগ্য মনে করবেন তারাই দলীয়ভাবে নির্বাচিত হয়ে আসবেন। তবে দলটির কয়েক নেতা জানান, তাদের দলের হয়ে ৩৫-৪০ জন নারী নতুন করে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হতে পারেন। নির্বাচনে যারা দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন, এবং যারা জোটের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন, তাদের অনেকেই সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। এরমধ্যে দু-একজনের মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়ার বিষয়েও আলোচনা রয়েছে। দলটির নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ থেকে চলচ্চিত্র অঙ্গনের মধ্য থেকে এবার একজনকে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য করা হতে পারে। এক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছে অন্তত এক ডজন শিল্পীর নাম। এ ছাড়া শরিকদের মধ্য থেকে তিন-চারজনকে আওয়ামী লীগের কোটায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করা হতে পারে। এরমধ্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার স্ত্রীকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য করার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফরোজা হক এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য করা হতে পারে। একই সঙ্গে জেপি’র আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর স্ত্রী বা তার পরিবারের কাউকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনয়ন নেয়ার বা চাওয়ার যে হিড়িক, সেই তুলনায় আমাদের দেয়ার সুযোগ খুব কম। আমরা আমাদের পরীক্ষিত, ত্যাগীদের গুরুত্ব দেবো। যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, যারা আমাদের দুঃসময়ের পরীক্ষিত কর্মী, তাদের ব্যাপারটা আমরা অগ্রাধিকার দেবো। একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে ত্যাগী নেত্রীরা প্রাধান্য পান। প্রার্থীর যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় নেয়া হয়। এ ছাড়া অগ্নিসন্ত্রাস ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যরাও থাকেন। এবারো এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দল মনোনয়ন দেবে। দলীয় নেতাদের পাশাপাশি অনেকেই সংসদে নারী সদস্যদের বিষয়ে নিজেদের অভিমত তুলে ধরছেন। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সৈয়দ ইশতিয়াজ রেজা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেন। সেখানে তিনি লেখেন- সংসদের সংরক্ষিত আসনে জায়গা পেতে প্রভাবশালী পুরুষদের স্ত্রী কন্যা, প্রভাবশালী নারীরা নাকি ব্যাপক তদবির করছেন। দলীয় নেত্রীরা তো আছেনই লাইনে। অনেকে ফেসবুক মাতাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী একটা বড় কাজ করতে পারেন। সুবিধাভোগী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা, সম্পাদক, শিক্ষকদের পরিবার বাদ দিয়ে তিনি ভিন্নতা আনতে পারেন এই নির্বাচনে। কয়েকটি ক্যাটাগরি থেকে আলাদা করে বাছাই করতে পারেন-১. প্রতিবন্ধী ২. নৃগোষ্ঠী ৩. অদম্য নারী, যেমন ক্রীড়া ক্ষেত্রে সফল নারী। হতে পারে ক্রিকেটার বা ফুটবলার ৪. হিমালয় জয় করা কোনো একজন ৫. শ্রমজীবী নারী ৬. হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান নারী ৭. ব্যক্তি খাতে নিজ যোগ্যতায় সফল নারী, স্বামী বা পিতার বদৌলতে না এমন কেউ। এর পাশাপাশি অনেক এনজিও ব্যক্তিত্বও সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হতে চান। এমনই একজন সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) এর চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা। তিনি বলেন, এনজিওর মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনে কাজ করছি। তাই সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে পারলে কাজের পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব। নিজের যোগ্যতা ও সক্ষমতা দিয়ে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে সেবা দেয়াই আমার মূল লক্ষ্য।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছেন স্বতন্ত্র এমপিরা। এতে সংরক্ষিত নারী আসনগুলোতে ৪৮ জন প্রার্থী দেবে দলটি। ৩১শে জানুয়ারি এ তথ্য জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে আসেন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল। সেখানে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংরক্ষিত আসন বণ্টনের বিষয়ের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তানদের বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। এ ছাড়াও মহিলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেত্রীরা অধিক গুরুত্ব পাবেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিব সব স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন, তাদের অবস্থান কী? তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের ক্ষমতা অর্পণ করেছেন। ৬২ জনই তাদের ভোটাধিকার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে সমর্পণ করেছেন। আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দেবে তারা তাকে সমর্থন দেবেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে প্রাণবন্ত করার জন্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তকে আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সাধুবাদ জানাই।
সংসদ সচিবালয় জানায়, সংসদে, প্রথাগতভাবে, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীরাই নির্বাচিত হতেন, কখনো কখনো বিরোধী দলের নারী প্রার্থীদের কয়েকটা আসনে দেয়া হতো। তবে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী অনুযায়ী, ২০০৪ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনে নির্ধারণ করা হয় যে, সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে (সে সময় ৪৫টি) একটি দল থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী সংসদ সদস্যকে সুযোগ দেয়া হবে, এবং তা হবে সংসদে ওই দলের কতোজন প্রতিনিধি রয়েছে তার অনুপাতে। অর্থাৎ একটি রাজনৈতিক দলের ৬ জন যদি নির্বাচিত এমপি হন, তাহলে ওই দল থেকে একজন প্রার্থী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ ২২৩। জাতীয় পার্টি ১১টি আসন পেয়েছে। এ ছাড়া ১৪ দলীয় শরিক জাসদ একটি ও ওয়ার্কার্স পার্টি একটি, স্বতন্ত্র ৬২ আসন পেয়েছে। কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি আসন। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নারী আসনের ৫০টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮টি, জাতীয় পার্টি দুটি ও স্বতন্ত্ররা ১০টি আসন পায়।
আরো পড়ুন : দনিয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলো নিলয়