স্টাফ রিপোর্টার: এ যেন এক অন্য রকম দৃশ্য। চারিদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। কোথাও এতটুকু জায়গা ফাঁকা নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে ছাত্র-জনতার ঢল নেমেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। শহীদ মিনার পেরিয়ে পাশের সড়কগুলোতেও অবস্থান নিয়েছেন তারা। শনিবারের এই কর্মসূচিতে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শহীদ মিনার।
‘আওয়ামী লীগের কবর দে, সারা বাংলায় খবর দে’, ‘আবু শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘আওয়ামী লীগের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘২৪ এর রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘কে কে রাজাকার হাসিনা হাসিনা’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
এদিন দুপুর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।
খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। এ সময় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে শহীদ মিনার। এদিন বেলা দেড়টার দিকে এই চিত্র দেখা যায়। পরে বিকাল ৩ টার দিকে ছাত্র-জনতার ঢল নামে সেখানে।
এর আগে শহীদ মিনারের আশপাশে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করছিলেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে তারা জড়ো হন।
এরপর বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাথায় ও হাতে দেশের লাল-সবুজের পতাকা বাঁধা দেখা গেছে।
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহত, গণগ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদে কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন দেশের ব্যান্ড সংগীতশিল্পীরা। আজ বিকেল ৩টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে ‘গেটআপ, স্ট্যান্ডআপ’ ব্যানারে এ কর্মসূচি শেষে সংহতি জানাতে শহীদ মিনারে যাবেন তারা।
এর আগে সকাল থেকে রাজধানীর আফতাবনগর, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মিরপুর-১০ ও সায়েন্সল্যাবে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে অভিভাবকসহ সাধারণ জনতাও যোগ দেন।
আফতাবনগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে জড়ো হন কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বনশ্রী বি ব্লকের সামনে আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগন দিতে থাকেন।
এছাড়া সায়েন্সল্যাবে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ নানা স্লোগান দিচ্ছেন তারা। সায়েন্স ল্যাব মোড়ে সকাল থেকে অনেক পুলিশ সদস্যকে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্রে করে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণ করে ‘আমার ভাই মরল কেন’সহ বিভিন্ন শ্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
গতকাল শুক্রবারও কেন্দ্রী শহীদ মিনারে জড়ো হন ছাত্র ও জনতা। শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ডাকা ‘দ্রোহযাত্রায়’ যোগ তারা। যাত্রার শুরুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বক্তব্য দেন। তিনি সরকারের পদত্যাগ চেয়ে বলেন, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে আনতে হবে। সরকারের কাছে কোনো কিছু চাওয়ার নেই।
উল্লেখ্য, সারা দেশে আজ শনিবার বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে ফেসবুক লাইভে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান।
একইসঙ্গে আগামীকাল রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন তারা। ‘সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা’ দাবিতে এই কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
আরো পড়ুন : দুই পুলিশ সদস্য বরখাস্ত হলো আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায়