ভারতের পালানোর সময় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত এলাকা থেকে সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আটক করেছে বিজিবি।
এ সময় বিচারপতি মানিককে টকশোতে উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরীকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন বলে জানান।
বিচারপতি মানিককে আটকের পর একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিজিবি সদস্যরা তার পরিচয় জানতে চান। নিজের পরিচয় স্বীকার করে মানিক বলেন, ‘আমি বিচারপতি মানিক’।
দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিলেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মানিক বলেন, ‘প্রশাসনের ভয়ে আমি দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছি’।
টকশোতে উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরীকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ কেন বলেছিলেন- জানতে চাইলে মানিক বলেন, ‘এটার জন্য ক্ষমাও চেয়েছি’।
সঙ্গে কী আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল আমার কাছে অনেক টাকা ছিল। আমাকে মেরে ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে দুজন ছোকরা। এখন আমার সঙ্গে ব্রিটিশ পাসপোর্ট, বাংলা পাসপোর্ট আর কিছু টাকা আছে।ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড আছে।’
আজ কত টাকা কাছে আছে জানতে চাইলে মানিক বলেন, ৪০ হাজার টাকা। গতকাল ওরা আমার টাকাসহ মোবাইল নিয়ে গেছে।
আরো পড়ুন : নাইঘাট সীমান্তে আটকের সময় যা পাওয়া গেল বিচারপতি মানিকের সঙ্গে
কত টাকা কন্টাক্টে আসছেন- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘১৫ হাজার টাকায় আসছিলাম। ওইটা আমি দিছি। পরে এই দুই ছেলে আমাকে মাইরা ধইরা সব টাকা নিয়া গেছে’।
কোথায় আপনাকে মারধর করা হয়েছে, বর্ডারে নাকি ভেতরে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি মানিক বলেন, ইন্ডিয়ার ভেতরে।
প্রসঙ্গত, এর আগে টকশোতে উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরীকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন ও অশালীন আচরণের ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছিলেন সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। একই সঙ্গে তিনি জনগণের কাছেও ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
বিচারপতি মানিককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর পর সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজের কাছে ১২ আগস্ট লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ভারতের জঙ্গলে কলাপাতায় শুয়ে ছিলেন বিচারপতি মানিক!
বিচারপতি মানিক বিজিবির হাতে আটক হওয়ার আগে তার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা গেছে, মানিক জঙ্গলের ভেতরে কলাগাছের পাতায় শুয়ে আছেন।
ভিডিওতে বিচারপতি মানিককে একজনের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। তার কথায় মনে হচ্ছে, তখন তিনি ভারতের মধ্যে অবস্থান করছিলেন।
এ সময় তার সামনে অবস্থান করা একজনকে মানিক বলছেন, ‘আমি তোমাদের পয়সা দিয়ে দেব। পয়সা আমি দেব, আমার ভাই-বোন দেবে।
জবাবে ওই ব্যক্তিকে (যাকে ভিডিওতে দেখা যায়নি) বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের পয়সার প্রয়োজন নাই। আপনার সেফটি….।
এরপরই মানিক বলেন, ‘ওই ফালতু লোক দুটাকে আনিও না। আমি এ দেশে এসেছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য’।
অপরদিকে বিচারপতি মানিককে আটকের পর আরেকটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিজিবি সদস্যরা তার পরিচয় জানতে চান। নিজের পরিচয় স্বীকার করে মানিক বলেন, ‘আমি বিচারপতি মানিক’।
দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিলেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মানিক বলেন, ‘প্রশাসনের ভয়ে আমি দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছি’।
সঙ্গে কী আছে জানতে চাইলে মানিক বলেন, গতকাল আমার কাছে অনেক টাকা ছিল। আমাকে মেরে ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে দুজন। এখন আমার সঙ্গে ব্রিটিশ পাসপোর্ট, বাংলা পাসপোর্ট আর কিছু টাকা আছে।
বিজিবি সদস্যদের এক প্রশ্নের জবাবে মানিক বলেন, আমি কোনো জুলুম করিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে জিয়া পরিবার নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালতে জিয়াউর হক নামে এক আইনজীবী মামলার আবেদন করেন।
মামলায় অভিযোগ থেকে জানা গেছে, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর চ্যানেল আই’র টকশো ‘মেট্রোসেম টু দ্য পয়েন্টে’ জিয়াউর রহমানকে রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিহিত করেন। গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি এক সেমিনারে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি ছিলের মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী।
২০১৩ সালের ১৯ জুলাই ভিন্ন অনুষ্ঠানে হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এছাড়া আসামিরা বিভিন্ন সময় জিয়া পরিবার নিয়েও বিরূপ মন্তব্য করেছে বলে মামালর এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
‘আমি ভারতে এসেছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য’
সুপ্রিমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করা হয়েছে। ভারতে যাওয়ার প্রাক্কালে সীমান্তে তাকে আটক করা হয়েছে বলে শুক্রবার বিজিবি সদর দপ্তরের এক খুদে বার্তায় জানানো হয়েছে।
তবে বিচারপতি মানিককে আটকের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একটি ভিডিও ভারতের ভেতকার। আরেক ভিডিও বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরের।
ভারতের সীমান্তের ভেতরের ভিডিওতে বিচারপতি মানিককে সেখানকার একটি জঙ্গলের মধ্যে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি এ দেশে (ভারত) এসেছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য’।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, তার সামনে অবস্থান করা লোকদেরকে বিচারপতি মানিক বলছেন, ‘আমি তোমাদের পয়সা দিয়ে দেব। পয়সা আমি দেব, আমার ভাই-বোন দেবে।
জবাবে ওই ব্যক্তিকে (যাকে ভিডিওতে দেখা যায়নি) বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের পয়সার প্রয়োজন নাই। আপনার সেফটি… ‘।
এরপর মানিককে বলতে শোনা যায়, ‘ওই ফালতু লোক দুটাকে আনিও না। আমি এ দেশে এসেছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য’।
এই ভিডিওটি যে আসলেই ভারতের ভেতরকার তার প্রমাণ পাওয়া যায় বিজিবির হাতে বিচারপতি মানিক আটক হওয়ার পরের আরেকটি ভিডিওতে। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে বিজিবি সদস্যদের কাছে মানিক স্বীকার করেছেন, তিনি ১৫ হাজার টাকার কন্টাক্টে ভারতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুজন লোক ভারতের ভেতরে নিয়ে তাকে মারধর করে ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে যায়।
এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি অবসরে যান। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও টেলিভিশন টক শোতে কথা বলতেন তিনি।
আরো পড়ুন : প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে-ইকোনমিক টাইমস