অবিলম্বে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বিএনপি। বর্তমান সরকার ১০০ দিনেও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করায় দলের শীর্ষনেতারা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা ভাবছেন। দলটির সব তৎপরতাই এখন নির্বাচন ঘিরে। আগামী বছরের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর চায় তারা। তবে গত রবিবার সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনি ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। দ্রুতই রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। এই ভাষণে নির্বাচনের রূপরেখা না দেওয়ায় আশাহত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গতকাল মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনায় এই আশাহত হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমি আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সব প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যাটা চিহ্নিত করে নির্বাচনের জন্য একটা রূপরেখা দেবেন।’
এদিকে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা না হলে নতুন বছরে বিভাগীয় সমাবেশ করে চাপ সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সরকার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে বিএনপি বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের নিঃশর্ত সমর্থন প্রত্যাহার করতে পারে। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি মানুষের প্রধান দাবি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন। যাতে তারা তাদের ইচ্ছামতো ভোট দিয়ে পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। সরকারের উচিত জাতীয় নির্বাচনের উদ্যোগ বা প্রক্রিয়া দৃশ্যমান করা। আমরা চাই, আর বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব একটা নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। সেটি খুব জরুরি এই মুহূর্তে।’ বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, দেশের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তারা সেভাবেই নির্বাচনসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। আগামী মার্চ মাস থেকে তারা শক্ত অবস্থানে যেতে চান। তারা বলছেন, সব বিতর্কের অবসান ঘটাতে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। তা ছাড়া বর্তমান সরকারের অবস্থান ঘিরে বিএনপির মধ্যে নানা ধরনের আশঙ্কাও কাজ করছে। চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার সব প্রস্তুতি থাকলেও আপাতত তিনি দেশের বাইরে যাচ্ছেন না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন তা-ও নিশ্চিত নয়। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা প্রায় সব মামলাই রয়ে গেছে। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ ও গতিপ্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন দলটির শীর্ষনেতারা। সেখানেই নির্বাচনের রোডম্যাপের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা বলা হয়। তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই রোডম্যাপ চান। তা না হলে তারা সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন। তারা বলেন, ১০০ দিন বিবেচনায় সরকার কাক্সিক্ষত গতিতে এগোচ্ছে না। কমিশন হয়েছে ভালো কথা। কিন্তু রোডম্যাপ তো থাকতে হবে। সরকারের মেয়াদ কোনো অনির্ধারিত সময় তো হতো পারে না। তাদের বুঝতে হবে, এটা একটি ট্রানজিশনাল সরকার। তাদের মূল কাজ হলো, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এটাই তাদের মূল কাজ। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনি প্রক্রিয়া- দুটোই একই সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া উচিত। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ উপস্থাপন করতে হবে। যত দিন এই রোডম্যাপ দেওয়া না হবে, তত দিন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন পেছানোর আশঙ্কা থেকেই যাবে।
বিভাগীয় সমাবেশের পরিকল্পনা : দেশকে অস্থিতিশীল করার যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে শক্তি প্রদর্শন এবং যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ উপস্থাপনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে বিভাগীয় সমাবেশ করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সিনিয়র নেতারা বলছেন, এই সমাবেশের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের এজেন্ডার আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা না করতে এবং বিএনপির রাজনৈতিক শক্তিকে যাতে খাটো করে না দেখা হয়, সে বিষয়ে তারা একটি বার্তা দেবেন। এ ছাড়াও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে আরও একটি বড় জনসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। পাশাপাশি সংস্কারের অজুহাতে অন্তর্বর্তী সরকারের বেশি সময় নষ্ট করা উচিত হবে না মর্মে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে ৩১ দফা প্রস্তাব নতুন করে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণের শাসন শিগগিরই জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এটা সম্ভব হবে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। নির্বাচনব্যবস্থাও দ্রুত সংস্কার করতে হবে। এই প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে জনগণের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হবে। এই সরকার তাদের কাছে আস্থা হারাবে। সব মিলিয়ে দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
আরো পড়ুন : সংগঠন জরুরি নয়, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন: তারেক রহমান