নতুন সরকার গঠনের পথে ধাবিত হচ্ছে সিরিয়া। অন্তর্বর্তী একজন সরকার প্রধান দ্রুতই ঘোষণা হওয়ার কথা। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকারের পতন হওয়ার পর দামেস্কে কুখ্যাত সেদনিয়া জেলখানায় উদ্ধারকর্মী ও আত্মীয়রা নিখোঁজ ব্যক্তিদের হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন। ওদিকে রাশিয়া থেকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলা হয়েছে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন বাশার আল আসাদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। এই সুযোগে সিরিয়া নিয়ন্ত্রিত গোলান মালভূমির বেশ কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে ইসরাইল। আসাদ পালিয়ে যাওয়ার পর দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয়া আহমাদ আল শারা ওরফে আল জুলানি তার প্রথম ভাষণে বলেছেন, আসাদের পতনে ওই অঞ্চলে এক নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আল কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হায়াত তাহরির আল-শাম (এইটটিএস)-এর নেতা জুলানি। সিরিয়ার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংগঠন হোয়াইট হেলমেট নামে পরিচিত। এর প্রধান রায়েদ আল সালেহ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সারাদেশে জেলখানাগুলোতে তারা বন্দিদের মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করছিলেন। তিনি বলেন, আসাদ সরকার এসব জেলখানাকে কসাইখানা বানিয়ে ফেলেছিল। এসব কারাগারে বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো। তাদেরকে গলা কাটা হতো। বাস্তবতা বোঝানোর মতো ভাষা নেই। এসব জেলখানা ছিল মানুষের জন্য নরক। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
আল সালেহ আরও বলেন, গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে বন্দিদের ওপর শারীরিক নির্যাতন ছিল ভয়াবহ। অতিমাত্রায় নির্যাতনের কারণে বহু বন্দির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। অনেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। অনেকের হাড় দুর্বল হয়ে গেছে। অসংখ্য মানুষ এত দুর্বল হয়েছে যে, একটা টর্চ দিয়ে তাদেরকে আঘাত করলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবেন। তিনি নিশ্চিত করে বলেন, দামেস্কের সেদনিয়া জেলখানায় কোনো গোপন চেম্বারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে দেশের কোনো কারাগারে যদি এমন কোনো চেম্বার থাকার বিষয়ে কেউ বিশ্বাসযোগ্য তথ্য দিতে পারেন, তাহলে তার জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করেছে হোয়াইট হেলমেট।
ওদিকে দামেস্কে কারফিউ চললেও মানুষ রয়েছে উৎসবের আমেজে। সোমবার দামেস্ক থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক রেসুল সরদার বলেন, উৎসব উল্লাস করার শেষ দিন ছিল সোমবার। এরপর আর এ সুযোগ দেয়া হবে না। বাস্তবতার সঙ্গে কিভাবে খাপ খাওয়া যায় তা নিয়ে সচেষ্ট এখন এই শহর। পুরনো দিনের নির্দেশগুলো ধসে পড়েছে। নতুন নতুন নির্দেশ আসছে। তবে এসব নির্দেশ মসৃণভাবে সবাই মানবেন নাকি তা নিয়ে বিশৃংখল অবস্থা হবে তা কেউ বলতে পারছে না। ওদিকে প্রত্যাশিত স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার অর্জন করার কারণে সিরিয়ানদের অভিনন্দন জানিয়েছে হামাস। একই সঙ্গে সমাজের সব অংশকে একত্রিত থাকার জন্য এবং অতীতকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। হামাস বলেছে, সিরিয়ার জনগণের সঙ্গে আমরা কঠোরভাবে অবস্থান করছি। সিরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করছি।
আরো পড়ুন : তাহলে কি ট্রাম্পের হুমকির কাছে নতি স্বীকার করলেন ভারত?