পদ্মা সেতু হয়ে যাত্রীবাহী রেল চলাচল শুরু হচ্ছে আজ। এই রেলে পৌনে চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে যশোরের বেনাপোল পৌঁছা যাবে। বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বেনাপোল রেলস্টেশন থেকে যাত্রীবাহী রেল উদ্বোধন করবেন।
বেনাপোল রেলস্টেশনের মাস্টার মো. সাইদুজ্জামান জানান, বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটে ‘রূপসী বাংলা’ এক্সপ্রেস সপ্তাহে এক দিন বিরতি দিয়ে চলাচল করবে। মাত্র পৌনে চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে বেনাপোল পৌঁছা যাবে। সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। ট্রেনযোগে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল-ঈশ্বরদী হয়ে বেনাপোল যেতে সময় লাগে সাত ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-বেনাপোল নতুন রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলে বেনাপোল থেকে ঢাকা যেতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় বাঁচবে।
বেনাপোল থেকে ৮২৭/৮২৮ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা থেকে বেলা পৌনে ১১টায় ছেড়ে দুপুর আড়াইটায় বেনাপোল পৌঁছবে। বিকাল সাড়ে ৩টায় ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ঢাকা পৌঁছবে এবং এই ট্রেনটির বিরতি স্টেশন যশোর জংশন, নড়াইল, কাশিয়ানী ও ভাঙ্গা জংশন। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি বুধবার বাদে প্রতিদিন দুপুর ১টায় ঢাকার উদ্দেশে বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাবে। এই ট্রেনটি যশোর জংশন, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, পোড়াদহ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যাবে। ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, এই লাইনে রেল চলাচল শুরু হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সদরপুর, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, মধুখালী, সালথা উপজেলা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, যশোর, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার মানুষের যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা জংশন হয়ে নড়াইল হয়ে খুলনা ও বেনাপোল পর্যন্ত রেললাইন ও নড়াইলের কালনায় মধুমতী নদীর ওপর রেল সেতু নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে বেশ আগেই। একাধিকবার পরীক্ষামূলক রেল চলেছে। সবশেষ ঢাকা থেকে ভাঙ্গা জংশন হয়ে খুলনা পর্যন্ত নবনির্মিত রেললাইনে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি চলেছে গত ২৪ নভেম্বর। তার এক মাস পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে এ নতুন পথে রেল চলাচল।
গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালকের কার্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মো. নাহিদ হাসান খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ভাঙ্গা জংশন স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার সাকিবুর রহমান বলেন, ২৪ ডিসেম্বর (আজ) ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বেনাপোল রুটে ২ জোড়া নতুন ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
নড়াইল প্রতিনিধি জানান, নড়াইলের ওপর দিয়ে রেল চলাচলের মাধ্যমে যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচনের অপেক্ষায় জেলাবাসী। রেলপথ চালু হওয়ায় শিল্প বিকাশে সম্ভাবনার আলো দেখাচ্ছে। মাত্র দুই ঘণ্টায় ঢাকা যাতায়াতের পাশাপাশি সহজে বাজারজাত করা যাবে কৃষিপণ্য। এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তারের পাশাপাশি সুযোগ সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন উন্নতিতে নড়াইলের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের।
নড়াইল রেলস্টেশনের মাস্টার উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, উদ্বোধনী দিনে সকাল ৬টায় খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস। সকাল ৭টায় নড়াইল জংশনে যাত্রাবিরতি করবে। একটি বগিতে পণ্য পরিবহনেরও সুযোগ থাকছে। পরবর্তী সময়ে এখানকার কৃষকের উৎপাদিত সবজি কিংবা কৃষিজাত পণ্য ঢাকার বাজারে কম খরচে সরবরাহের জন্য কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন চালু করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। নড়াইল থেকে দুই আর খুলনা থেকে মাত্র তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। ভবিষ্যতে যাত্রীচাহিদা ও ইঞ্জিন-কোচের প্রাপ্যতাসাপেক্ষে ট্রেন আরও বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, ২৪ ডিসেম্বর (আজ) আনুষ্ঠানিকভাবে নড়াইলের রেলপথ এবং রেল স্টেশন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল করার কথা রয়েছে।
আরো পড়ুন : আওয়ামী লীগ সরকারের ৪৩ বিলিয়ন ডলারের চাপে এখন বাংলাদেশ