সংকট নিয়েই ২০২৪ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল দেশের শেয়ারবাজারের। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন এলেও শেয়ারবাজারের সংকটময় পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হয়েছে। বছরজুড়ে দুর্নীতি-অনিয়মের পাশাপাশি সূচক, শেয়ারের দাম ও বাজার মূলধনের অব্যাহত পতন দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে বাজারের প্রতি তাদের আস্থা প্রায় তলানিতে নেমেছে। ২০২৪ সালে দেশের প্রধান পুঁজিবাজারের মূল সূচক ১ হাজার ৩৮ পয়েন্ট কমেছে। ১ জানুয়ারি ডিএসইর মূল সূচক ৬ হাজার ২৪২ পয়েন্ট ছিল, বছরজুড়ে তা কমে ৫ হাজার ২০৪ পয়েন্টে নেমেছে। আর মূলধন কমেছে ১ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর ডিএসইর বাজার মূলধন ১ জানুয়ারি ছিল ৭ লাখ ৮০ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬১ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ডিএসই বাজার মূলধন হারিয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা।
জানা গেছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশার আলো দেখেছিলেন। বাজারে চাঙ্গা ভাব ছিল কিছুদিন। কিন্তু একটু ঝলক দেখিয়ে নিভতে থাকে বাতি। গত ২৮ অক্টোবর ডিএসইএক্স সূচক কমে ৪ হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে নেমে আসে, যা ছিল ৪ বছরের মধ্যে নিম্নতম। এতে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পর্যায়ে আসেন বিনিয়োগকারীরা, যা নতুন কমিশনও ঠেকাতে পারেনি।
মূলধন সংগ্রহে ভাটা : এদিকে, ২০২৪ সালে শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহে ভাটা দেখা গেছে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে এ বছর ছয়টি কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করেছে। আর বন্ড ছেড়ে মূলধন সংগ্রহ করেছে দুটি ব্যাংক। মোট তোলা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। আগের বছর (২০২৩) সংগ্রহ করা হয়েছিল ১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা।
বিশ্লেষক ও বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির আইপিও আনতেই হবে, এর বিকল্প কিছু করা যাবে না। কিন্তু পলিসিগত সমস্যার কারণে ভালো কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হচ্ছে না। এতে শেয়ারবাজার অনেকটা আইপিও ছাড়া হয়ে পড়েছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রয়োজনে প্রণোদনা দিয়ে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ারের অভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির বিকল্প নেই।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, বাজারের স্বার্থে সাড়ে চার মাসে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে নতুন কমিশন। কারসাজির অভিযোগে কারও কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি টাস্কফোর্সের কাজ চলমান। বিনিয়োগকারীরা আশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন ২০২৫ সালের দিকে। নতুন বছরে ভালো কিছু দেখার প্রত্যাশা তাদের।
যুগের পর যুগ ধরে পুঁজিবাজারের আলোচিত চরিত্র সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সুকুক বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা তোলার কারণে ২০২৪ সালেও তিনি ছিলেন আলোচনায়। নতুন করে আলোচনায় আসেন ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান এবং সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরু। এ বছর ১২টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৭২২ কোটি টাকার জরিমানা করা হয়েছে।
এ ছাড়া সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেইস ম্যানেজমেন্টের অংশীদার চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, আরেক অংশীদার হাসান তাহের ইমাম, এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বরখাস্ত সদস্য মতিউর রহমানের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।
আরো পড়ুন : শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে লেখা সংবিধানকে কবর দেওয়ার কথা বললে কষ্ট লাগে