আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান বিমানবন্দরে ব্যাংকক থেকে আসা জেজু এয়ারের বিমান রানওয়ের দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা মারে। যাত্রী ও বিমানকর্মী মিলিয়ে বিমানে ১৮১ জন ছিলেন। তার মধ্যে মাত্র দুইজন বিমানকর্মী বেঁচে গেছেন। ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাখির আঘাতে অথবা খারাপ আবহাওয়ার জন্য এই দুর্ঘটনা হয়েছে। বিষয়টি এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
জেজু এয়ারের উড়োজাহাজটি বোয়িংয়ের ৭৩৭-৮০০ মডেলের। রবিবার সকাল নয়টার একটু পরে বিমানটি নামার চেষ্টা করে। তখন নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার পাইলটকে পাখির আঘাতের বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল। একটু পরেই পাইলট সতর্কতা সংকেত ব্যবহার করেন। বিমানটি এরপর শেষের দিকের অংশ দিয়ে নামার বা বেলি ল্যান্ডিং-এর চেষ্টা করে। রানওয়ে দিয়ে ছুটে বিমানটি সোজা দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা মারে। তারপরই বিস্ফোরণ হয় এবং বিমানে আগুন ধরে যায়।
বিমানচলাচল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক আন্দ্রে স্পিটথ ডিডাব্লিউকে বলেছেন, মনে হচ্ছিল বিমানটিতে পাখি ধাক্কা মেরেছিল। তিনি জানিয়েছেন, ‘কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে ল্যান্ডিংয়ের আগে বিমানটিতে পাখি ধাক্কা মারছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও পাখি নিয়ে পাইলটকে সতর্ক করে দিয়েছিল।’
তিনি বলেছেন, ‘ফ্লাইট ডেটা থেকে দেখা যাচ্ছে, পাইলট মরিয়া হয়ে পিছনের অংশ দিয়ে নামার চেষ্টা করেন। কারণ, তখন ইঞ্জিনের শক্তি সম্ভবত শেষ হয়ে গেছিল বা খুবই কম ছিল। প্রথমবার নামার চেষ্টার সময় ল্যান্ডিং গিয়ার দেওয়া হয়েছিল। পরের বার আর হয়নি। রানওয়ের পর জায়গাটা খুব ছোট ছিল।
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘নিরাপদ বিমানবন্দরগুলিতে রানওয়ের পরেও অনেকখানি জায়গা থাকে, যেখানে গিয়ে বিমান থামতে পারে।’
কর্তৃপক্ষ বিমান দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে পাখির আঘাত ও খারাপ আবহাওয়ার কথা বললেও অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, নামার সময় ল্যান্ডিং গিয়ার দেওয়া হয়নি বা দেওয়া যায়নি।
লুফৎহানসার পাইলট ও বিমান নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান বেকের্ট জানিয়েছেন, ‘ভিডিও ফুটেজ দেখে মনে হয়েছে, ব্রেকিং ব্যবস্থা চালু করা যায়নি। ফলে পাইলট বিশাল বিপদে পড়েন।’ তিনি বলেছেন, ‘প্রধান সিস্টেম ব্যর্থ হলে পাইলট বিকল্প ব্যবস্থায় গিয়ার নামাতে পারেন। সেটাও এখানে হয়নি।’
অস্ট্রেলিয়ার বিমান সংক্রান্ত পরামর্শদাতা ট্রেভর জেনসেন বলেছেন, ‘বিমান নামার সময় জরুরি সার্ভিসগুলি চালু হয়ে যায়। কিন্তু এখানে বিমানের নামা দেখে মনে হয়েছে, পরিকল্পনাহীনভাবে তা নেমেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে বিমান দুর্ঘটনা হলে তার তদন্ত করে ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড(এনটিএসবি)। তারা দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু এয়ারের এই বিমান দুর্ঘটনার তদন্তেও সাহায্য করবে। সংস্থার পক্ষ থেকে এক্সে এক বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘এনটিএসবি-র টিম তদন্তের কাজে সহায়তা করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া যাচ্ছে। তারা সেখানকার বিমান ও রেল দুর্ঘটনার তদন্তকারী বোর্ডকে তদন্তের কাজে সাহায্য করবে।’
আরো পড়ুন : আইসিসির বর্ষসেরার পুরুষ ক্রিকেটারের লড়াইয়ে হেড-রুট-ব্রুক-বুমরাহ