প্রধান শিক্ষককে মেরে ফেলার হুমকি দিল যুবলীগ নেতা

অনুসন্ধানী ক্রাইম নিউজ তথ্য-প্রযুক্তি পুরুষ পুরুষ অধিকার পুরুষ নির্যাতন প্রচ্ছদ রাজনীতি শিক্ষা হ্যালোআড্ডা

যশোর সদর উপজেলার ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন নিয়ে প্রধান শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে। মুঠোফোনে হুমকি দেওয়ার কথোপকথনের একটি অডিও গতকাল সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গত ২৪ মার্চ দুপুরে হত্যার এ হুমকি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় গত ৩১ মার্চ সাধারণ ডায়েরি করেছেন তিনি।

আরো পড়ুন : ছাত্রদলের ক্যাডারদের হামলার শিকার ছাত্রলীগ নেত্রীর বিভিশিকাময় আজ সেই দিন

অভিযোগের বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের কাছে আমিও পড়েছি। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে তাঁর সঙ্গে আমার পড়ে না। ছয় মাস আগে এমপি কাজী নাবিল আহমেদ স্থানীয় মনিরুজ্জামানকে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি করার জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন। কিন্তু ওই প্রধান শিক্ষক কমিটি চেয়ে শিক্ষা বোর্ডে চিঠিই পাঠাননি। যে কারণে ইছালী ইউনিয়নে এমপি নাবিল আহমেদের প্রতিনিধি হিসেবে ওই প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আমি কথা বলেছি, এটা সত্য। তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া অডিওর কিছু কথা এডিট করা।’

গত ৩১ মার্চ যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় করা জিডিতে ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক উল্লেখ করেছেন, যশোর সদর উপজেলার ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আগের কমিটির অগোচরে যুবলীগ নেতা মাজহার ও তাঁর সহযোগিতারা অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মনিরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেন। এতে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকেরা ওই কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। বর্তমানে এ মামলা চলমান। গত ২৪ মার্চ বেলা দুইটার দিকে মাজহারুল তাঁর মুঠোফোন নম্বর থেকে প্রধান শিক্ষককে ফোন দিয়ে কমিটি অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে বলেন। তাঁকে কমিটির বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে জানালে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও জীবননাশের হুমকি দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই জিডির মাধ্যমে নিরাপত্তা চেয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন।

প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সে আমাকে বলেছে, পাঁচটি হত্যা মামলার আসামি সে। আমাকে হত্যা করে আরেকটি হত্যা মামলার আসামি হতে চায়। এ জন্য আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি। স্কুলে যাচ্ছি, কিন্তু ভয়ে ভয়ে আছি। পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনো ঝামেলা হলে জানাতে বলেছে।’

এদিকে গতকাল সোমবার রাতে যুবলীগ নেতা মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের মুঠোফোনে হুমকির কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ৬ মিনিট ৮ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনের অডিওতে শোনা যাচ্ছে, যুবলীগের নেতা মাজহারুল বারবার অকথ্য ভাষায় প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামকে গালাগালি করছেন।

এ বিষয়ে যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুপম কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ওই প্রধান শিক্ষকের জিডি তদন্তের অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক ও যুবলীগ নেতার ফোনালাপের অংশবিশেষ
মাজহারুল: কমিটির আবেদন করবেন না আপনি?

প্রধান শিক্ষক: এখনো তো করেনি। আমি সুস্থ হয়ে নেই। দেখি কী করা যায়।

মাজহারুল: আমার এমপি সাহেব (যশোর-৩ আসনের সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদ) আমারে পাঠিয়েছে। এখন আমি আপনার স্কুলের চেয়ারের সামনে বসে আছি। ফরিদ ভাই (সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী) কালকে আপনার বাসায় লোক পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি বলেছি, আপনি অসুস্থ, তাই আসেনি। ফিঙে লিটনের (যশোরের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী) গাঁজাখোর, ইয়াবাখোর ছেলেপেলে গিয়ে আপনার সঙ্গে যদি খারাপ ব্যবহার করে, তাহলে পরবর্তীতে আমার ঘাড়েই আসে।

প্রধান শিক্ষক: না…খারাপ ব্যবহার করবে কেন?

মাজহারুল: আপনি কার ক্ষমতায় এই কমিটির আবেদন করছেন না, সেটা আপনাকে বলতে হবে। আর যদি না করেন, তা হলেও বলে দিতে হবে, আমি এই কমিটির আবেদন করব না। তারপর আপনার সঙ্গে এই বিষয়ে বুঝব।

প্রধান শিক্ষক: তুমি আমার কথা শুনবা না কেন। তোমারে ফোন দিলেই তুমি কেটে দাও শুধু। আমার ফোনটা ধরতে হবে। আর কথাটা শুনতে হবে।

মাজহারুল: আচ্ছা, বলেন বলেন।

প্রধান শিক্ষক: আমি কী আবেদন করব। যারা মামলা করেছে, তাদের সঙ্গে তো আমার কথা বলা লাগবে, নাকি? মামলা তুলে দেওয়া লাগবে না?

মাজহারুল: ওরা মামলা তুলছে না কেন? আপনি আমারে মামলা বোঝান? আমার এই অল্প বয়সে আমি পাঁচটা মার্ডার মামলা খেয়েছি। আপনি আইন শেখান? ওই মামলার কাগজপত্র ৬ মাস পরে সব বাতিল হয়ে যাবে। আপনার কত বড় ক্ষমতা, আপনি এমপি সাহেবের কথা শুনছেন না। সব মামলা আপনি করাচ্ছেন।

প্রধান শিক্ষক: না, আমি করাতে যাব কেন? মামলা তুলে না নিলে কমিটির আবেদন করা যাবে না তো। তাই সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমি বলব, তুমি বলবা।

মাজহারুল: শোনেন স্যার, আমি কারও সঙ্গে কথা বলতে পারব না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কার সঙ্গে কথা বলবেন, না কী বলবেন, আপনি জানেন। আপনার কোন মা-বাপ (গণমাধ্যমে অপ্রকাশযোগ্য গালি) আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি যদি আবেদন না করেন, তা হলে আপনি যদি যশোর থাকতে পারেন, তারপরে আমি চুড়ি পরে এই যশোরে ঘুরে বেড়াব। আমি আপনার সঙ্গে দুই বছর ভালো ব্যবহার করেছি। তোমারে কিডা ঠেকাই আমি দেখবানে। তোর এত বড় সাহস তুই কাজী নাবিল আহমেদের ডিও লেটারে মামলা করেছিস। তোর কিডা আছে? তুই আজকের পর থেকে নীলগঞ্জে কীভাবে থাকিস, দেখবানে। তোর লোকজন, পুলিশ-র্যাব নিয়ে থাকিস। আমি আসছি।

প্রধান শিক্ষক: তুমি আমার ছাত্র ছিলে, এভাবে বলছ কেন?

মাজহারুল: এই শহরে এমন কোনো অফিসার নেই যে আমাকে দেখে নাবিল সাহেবের প্রতিনিধি মনে করে উঠে দাঁড়িয়ে চেয়ার এগিয়ে দেয় না। আর তোর কত বড় সাহস! তুই নাবিল আহমেদের ডিও লেটার ওপর এখনো কমিটি আবেদনের দরখাস্ত দিসনে। তোর যে আব্বাগুলো আছে, তাদের বলবি। মাজহারুল এই এই হুমকি দিয়েছে। তাদের আমারে কিছু করে নিতে বলিস।

আরো পড়ুন : অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বৈষম্য নিরোধে সংসদে আইনের খসড়া

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *