মান্দা (নওগাঁ) সংবাদদাতাঃ- নওগাঁর মান্দায় ঐতিহ্যজবাহী মন্দিরে রাম নবমী উৎসবে হাজারো ভক্তের ঢল, দীর্ঘ ১০ বছর দাম্পত্য জীবনে কোনো সন্তান নেই। মা হওয়ার আশায় বিভিন্ন চিকিৎসা করেও কোনো সন্তান হয়নি। এক বুক আশা নিয়ে সেই ভোর থেকে শাড়ির আচল বিছিয়ে শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউ মন্দিরের সামনে অপেক্ষা করছেন অনেকেই। ভক্তরা বলেন, রঘুনাথ ঠাকুর দয়া করে যদি আমাদের কোল আলোকিত করে এই আশায় মানত করতে এসেছি। শুধু পলি রানীই নয় সাথি, টুলটুলী রানী, শ্রীমতি আলোসহ প্রায় ২০ জন নারী সন্তানের আসায় শাড়ির আচল পেতে রঘুনাথ ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছেন।
আরো পড়ুন : আজ ৮ এপ্রিল; আজকের দিনে জন্ম-মৃত্যুসহ যত ঘটনা
নওগাঁর মান্দা উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক ঠাকুর মান্দা শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউ মন্দির। প্রায় তিনশ বছরের ঐতিহ্য বহন করে আসছে মন্দিরটি। রবিবার রাত ৩টা ৪৫ মিনিটে মন্দিরে ভগবান শ্রী রাম চন্দ্রের বিগ্রহে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে উৎসবের শুরু হয়। এরপর তীর্থ যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। নয় দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান চলবে আগামী ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত। উৎসবের প্রথম দিনে নানা ধর্মের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে।
মান্দা উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত ঐতিহাসিক ঠাকুর মান্দা। আত্রাই নদীর অন্যতম শাখা শিব নদী ও বিল মান্দার পশ্চিম তীরে জনপদটির অবস্থান। জনপদটি নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
জানা যায়, দপুন্ড্রদ জনপদের অন্যতম প্রাচীন জনপদ হিসেবে ঠাকুর মান্দার ঐতিহাসিক পরিচিতি রয়েছে। পাল আমলের বিভিন্ন প্রত্ন নিদর্শন এই জনপদ থেকে আবিষ্কৃত হয়। জনপদটিতে রয়েছে হিন্দু তীর্থের প্রাচীন রঘুনাথ জিউ মন্দির। প্রতি বছর রাম নবমী পূজার দিনে জন্মান্ধ শিশুদের আনা হয় এখানে। হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও অন্য সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ তাদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ নানান রোগে আক্রান্ত সন্তানদের নিয়ে আসেন এই মন্দিরে। ছোট্ট শিশু থেকে নানা বয়সের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও নানান রোগের আক্রান্তদের সারা দিন রেখে দেয়া হয় মন্দির প্রাঙ্গণে একটি নির্ধারিত স্থানে। পুণ্যার্থীরা একসময় মন্দিরের চারপাশের বিল ও শিব নদীতে গঙ্গাস্নান করে ভেজা কাপড়ে বিল থেকে পদ্মপাতা তুলে মাথায় দিয়ে মন্দিরে যেত ঠাকুর দর্শন করতে। ভক্তরা আজো সেই রীতি-নীতি মানতে চান। কেউ কেউ আবার দুর্লভ পদ্মপাতা সংগ্রহ করে তা মাথায় দিয়ে তার ওপর মাটির পাতিল বোঝাই ভোগের মিষ্টান্ন মাথায় নিয়ে দীর্ঘ লাইন ধরে প্রভুর চরণে নিবেদন করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি ভারত থেকেও আসেন হিন্দু পুণ্যার্থীরা। অনেকে সপ্তাহব্যাপী মন্দিরের পাশে মাঠে তাবু গেড়েও অবস্থান করেন। ভক্তবৃন্দের ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে রাতে পদাবলী কীর্তনেরও আসর বসানো হয়। মন্দিরটিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত রাম নবমীর উৎসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের সার্বজনীন উৎসব হয়ে উঠেছে। এ উপলক্ষ্যে মন্দিরটিকে ঘিরে জুড়ে বসেছে গ্রামীন মেলা।
নওগাঁ থেকে এই প্রথম মন্দিরে এসেছেন ভারতী রানী। তিনি বলেন, মনো বাসনা পূরণ করার জন্যই মনে বিশ্বাস নিয়ে মানত করেছি। এখানে মানত করলে ঠাকুর তা পূরণ করেন। স্বামী সংসার ও সন্তান, বাবা-মাসহ সকলে যেন সুস্থ ও ভাল থাকে।
পাবনা সদর উপজেলার পাবনা বাদাম পট্টির চন্দন চন্দ্র মন্ডল বলেন, দীর্ঘদিন থেকে চোখের সমস্যা ছিল। ডাক্তার দেখিয়েও কোনো লাভ হয়নি। মানত করার পর চোখ ভাল হয়।
মন্দির কমিটির সভাপতি চন্দন কুমার মৈত্র জানান, প্রায় ২২ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন থেকে মন্দিরে আবাসন সমস্যা প্রকট। হাজারো ভক্ত মন্দিরে মানত করতে এসে উন্মুক্ত আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করে। ভারত সরকারের অনুদানে একটি আবাসন তৈরি করা হয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। মন্দিরে আগত তীর্থ যাত্রীরা যেন নিশ্চিন্তে অবস্থান করতে পারে সেজন্য আবাসন সমস্যা দূর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রবিবার ভোরে রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার শ্রী মতি রীভাগাংগুলি, এবং নওগাঁ-১ আসনের সাংসদ খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউ মন্দির পরিদর্শন করেন।
মান্দা (নওগাঁ) সংবাদদাতাঃ-
মোঃ হাবিবুর রহমান
আরো পড়ুন : সরকারি রাস্তা দখল করে বাড়ী নির্মাণ করায় অবরুদ্ধ গোবিন্দগঞ্জে ৩ গ্রামের মানুষ